হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইক নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন কলুটোলার এক যুবক। মেডিক্যাল কলেজের সামনে ট্র্যাফিক সার্জেন্ট পথ আটকালেন তাঁর। ১০০ টাকা জরিমানা করতেই পকেট থেকে একটি পাঁচশোর নোট বের করে দিলেন যুবক। তা দেখেই আঁতকে উঠেছিলেন ওই সার্জেন্ট। নিয়মমাফিক, ওই যুবকের টাকা নিতে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন না তিনি। আবার টাকা নিয়ে যে খুচরো দেবেন, সেই অবস্থাও নেই!
পুলিশের খবর, ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের পর থেকে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে বহু অফিসারেরই। সেই সমস্যার কথা পৌঁছে ছিল লালবাজারের উপরমহলেও। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, এই সমস্যার জেরেই শনিবার রাত থেকে স্পট ফাইন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডের ওসিদের এই মর্মে মৌখিক নির্দেশও পাঠিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। লালবাজারের কর্তাদের দাবি, বাজারে খুচরো নোটের আকালের কথা ভেবেই স্পট ফাইন করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে আইন ভাঙা গাড়িকে আটকে তার চালককে আইন মেনে চলা এবং তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে বোঝাবেন পুলিশকর্মীরা। ‘‘আসলে জরিমানার বদলে আমাদের গাঁধীগিরির উপরেই এখন জোর দিতে হবে,’’ বলছেন ওই পুলিশকর্তা।
এই নয়া ফরমান নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন কলকাতার পথেঘাটে ডিউটি করা বহু অফিসার-কর্মী। তাঁরা জানান, এই নির্দেশ বলবৎ হলেই পথেঘাটে হেলমেটহীন মোটরবাইকের সংখ্যা বাড়বে, বাড়বে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোও। রাস্তাঘাটে যানবাহন পরিস্থিতিরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। ট্র্যাফিক বিভাগের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, ‘‘কলকাতার রাস্তার অবাধ্য মোটরবাইককে বাগে আনতেই স্পট ফাইনের উপরে জোর দেওয়া হয়েছিল। তাতে লাভও হয়েছিল। গাঁধীগিরি করে কি সেই লাভ হবে?’’ ওই কর্তার দাবি, একই যুক্তি প্রযোজ্য বেসরকারি বাসের ক্ষেত্রেও। যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলাও অনেকটা বন্ধ হয়েছিল। তাতে রাস্তার যানজটও কম হয়েছিল। ‘‘এ বার থেকে সেটাও বাড়বে,’’ মন্তব্য ওই ট্র্যাফিক-কর্তার।
পাঁচশো এবং ১ হাজার টাকার নোট বাতিল হওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লাগাতার তোপ দেগে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, এতে আমজনতা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ দিন কলকাতায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দফতর এবং বড়বাজারেও গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গী ছিলেন সদ্য বিদেশ ফেরত পুলিশ কমিশনারও। তার পরেই খুচরো সমস্যার জেরে পুলিশের স্পট ফাইন তুলে দেওয়ার নির্দেশকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে। পুলিশ সূত্রের দাবি, গত কয়েক বছর ধরে স্পট ফাইনের উপরে জোর দিয়ে ভাঁড়ার ভরছিল লালবাজার। ২০১৫ সালে তারা স্পট ফাইন থেকে প্রায় ১৯ কোটি টাকা আয় করেছিল। এই নয়া নির্দেশের জেরে সেই আয়ও কমবে।
এই সিদ্ধান্তের জেরে শহরের রাস্তার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তেমনই কলকাতা পুলিশের রাজস্বেও ঘাটতি হতে পারে। তা হলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার
অর্থ কী?
লালবাজারের এক কর্তার ব্যাখ্যা, স্পট ফাইন আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। কিন্তু পুরো জরিমানা তো উঠে যাচ্ছে না। অপরাধের গুরুত্ব বুঝে গাড়ি ও চালকের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হবে। আইন ভেঙে পালিয়ে যাওয়া গাড়ির নম্বরও টুকে রাখবেন পুলিশকর্মীরা। পরে চিঠি পাঠিয়ে ব্যাঙ্কে বা কোষাগারে জরিমানা জমা দিতে বলা হবে। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো এবং অন্যান্য গুরুতর আইন ভাঙার ঘটনায় চালকের লাইসেন্সও বাজেয়াপ্ত করা হবে। যদিও নীচুতলার পুলিশ অফিসারেরা এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, হেলমেট না পরা, সিগন্যাল না মানা, যেখানে সেখানে গাড়ি দাঁড় করানোর মতো ঘটনাই বেশি ঘটে। আইনের এই শাসন রয়েছে বলেই পথেঘাটে সমঝে চলেন বহু গাড়ি ও মোটরবাইকচালক।
‘‘সেই ভয় না থাকলে আইন মানবেন ক’জন?’’ প্রশ্ন এক ট্র্যাফিক সার্জেন্টের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy