Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ভিড়ের মধ্যে বাইরের ওঁরা কারা

‘দাও হাততালি’ ও ‘হোক চিৎকার’ বাহিনীর সদস্যদের তাই কড়া নজরে রেখেছে লালবাজার। তাঁদের গতিবিধি এবং রাজনৈতিক পরিচয় পুলিশের জানা।

অভিভাবকদের বিক্ষোভে বাইরের লোকজনের ঢুকে পড়ার অভিযোগ উঠল।

অভিভাবকদের বিক্ষোভে বাইরের লোকজনের ঢুকে পড়ার অভিযোগ উঠল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৪
Share: Save:

একটি দল সোমবার হাততালি দিয়ে মিছিল করে ঘুরেছে রানিকুঠি এলাকায়। আর এক দল মঙ্গলবার পোস্টার সাঁটতে এসেছিল রানিকুঠির জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনের দেওয়ালে। প্রথম দলটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের। দ্বিতীয়টি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের। শহরের আশপাশে কখনও কোনও শিক্ষাকেন্দ্রে সমস্যা হলেই ওঁদের দেখা যায়। অন্দোলনকারী অভিভাবকেরা সোমবার পর্যন্ত ওঁদের সহমর্মী বলেই ভেবেছিলেন। কিন্তু ওই বহিরাগতদের এ দিন স্কুলের দেওয়ালে পোস্টার সাঁটতে বাধা দিতে দেখা গিয়েছে অভিভাবকদের।

এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘বাইরে থেকে কেউ কেউ এসে আমাদের আন্দোলনকে প্রভাবিত করতে চাইছেন। ওঁদের জন্য যে আমাদের বদনাম হতে চলেছে, সেটাও আমরা এখন বুঝতে পারছি। তাই বহিরাগত যাঁরাই আসছেন, আমরা হাতজোড় করে তাঁদের ফিরিয়ে দিচ্ছি। বলছি, আমাদের থাকতে দিন আমাদের মতো।’’

‘দাও হাততালি’ ও ‘হোক চিৎকার’ বাহিনীর সদস্যদের তাই কড়া নজরে রেখেছে লালবাজার। তাঁদের গতিবিধি এবং রাজনৈতিক পরিচয় পুলিশের জানা। ওই সব ‘চেনা’ মুখের উপরে তাই শুরু হয়েছে নজরদারি। কিন্তু পুলিশের সন্দেহ, বিক্ষোভকারী অভিভাবকদের একাংশের সঙ্গে মিশে গিয়ে এক বা একাধিক শক্তি বিশৃঙ্খলা বাধানোর চেষ্টা করছে জি ডি বিড়লায়। তারাই এম পি বিড়লায় অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে বলে লালবাজারের গোয়েন্দাদের দাবি। ওই ‘অজানা’ অনুঘটকদের এখন শনাক্ত করার চেষ্টা করছে লালবাজার।

আরও পড়ুন: যৌন নির্যাতন, ধৃত দুই শিক্ষক

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, স্কুলের অচলাবস্থা যাতে না কাটে, সমস্যা যাতে জিইয়ে রাখা যায়, সেই ব্যাপারে ওই বহিরাগতেরা অভিভাবকদের একাংশকে সুকৌশলে তাতাচ্ছেন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, দলীয় পতাকা ছাড়া ওখানে এক সাংসদ সোমবার গিয়েছেন, একটি দলের মহিলা শাখার প্রতিনিধিরা শুক্রবার থেকে আছেন, বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন একাধিক রাজনৈতিক দলের সদস্যও। অবশ্যই দলীয় অবস্থানকে এক পাশে সরিয়ে রেখে। এঁদের কারও জন্যই পুলিশ তেমন উদ্বেগে নেই। কারণ, তাঁরা যা করছেন প্রকাশ্যে, সামনে এসে। বিপদটা আসলে ‘অজানা’ বহিরাগতদের নিয়ে।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পোস্টার। মঙ্গলবার, জি ডি বিড়লা স্কুলের সামনে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ওই বহিরাগতদের সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘‘যে স্কুলে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানের অভিভাবকদের প্রতিবাদ করার অধিকার অবশ্যই আছে। কিন্তু কেউ আবার ঘোলা জলে মাছ ধরতে বেরিয়ে যায়। কেউ কেউ বাইরে থেকে এসে মাথা ঠুকতে লাগল।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এই করে স্কুলগুলো বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। এটাও একটা পরিকল্পনা।’’

পুলিশের এক কর্তা জানান, সোমবার দুপুরে ঠিক হয়ে গেল, স্কুল চত্বরে কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার আলোচনায় বসবেন অভিভাবকদের সঙ্গে। তার পরেও রাতে হঠাৎ অভিভাবকদের একাংশ ওই বৈঠককে বেআইনি তকমা দিলেন, ওই বৈঠক বয়কট করে মঙ্গলবার লালবাজার অভিযানের ডাক দিলেন। সেটা হয়নি, অন্য কথা। কিন্তু ওই ঘটনাতেই স্পষ্ট, কারও প্ররোচনা কাজ করছে।

মঙ্গলবার কেউ কেউ আবার দাবি তুলেছেন, যে স্কুলে শিক্ষকেরাই অপরাধী, সেই স্কুল খুলতে দেওয়া যাবে না। কারণ, ভবিষ্যতে ওই স্কুলে পড়ুয়াদের জীবন বিপন্ন হবে না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। লালবাজারের কর্তাটি বলেন, ‘‘পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, কেউ গোপনে অভিভাবকদের একটি অংশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাঁদের ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছেন। এমন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যাতে সমস্যা না মেটে।’’

গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। তবে ওখানকার পরিস্থিতি এখনও তপ্ত। আমরা এমন কোনও পদক্ষেপ করব না, যাতে অবস্থা ঘোরালো হয়ে ওঠে। কোনও পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছি না আমরা।’’

রানিকুঠির ওই স্কুলের অভিভাবকদের ফোরাম অবশ্য বহিরাগতদের ঠেকাতে মোটামুটি ঐক্যবদ্ধ। সোমবার তাঁরা বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে ‘গো ব্যাক’ বলেন, একাধিক সংগঠনের পোস্টার ছিঁড়ে দেন স্কুলের দেওয়াল থেকে। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ পোস্টার সেঁটেছিলেন। অভিভাবকেরা সে সব ছিঁড়ে ফেলেন। বেহালা থেকে একদল ছাত্র বিক্ষোভে সামিল হওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদেরও প্রতিহত করেন অভিভাবকেরা।

কিন্তু চুপিসারে পড়ুয়াদের মা-বাবার সঙ্গে মিশে যাঁরা নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, তাঁদের কী ভাবে চিহ্নিত করা হবে, সেটাই এখন লালবাজারের কাছে চ্যালেঞ্জ।

ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE