Advertisement
০৮ মে ২০২৪

কেউ পেলেন না, কেউ দু’হাজারি নিলেন না

রাজ্যের সচিবালয় ‘নবান্ন’র উত্তর দিকের ফটকের নিরাপত্তায় ডিউটি করেন এএসআই রবীন্দ্রনাথ সাহা। পকেটে টাকা নেই, সহকর্মীকে দায়িত্ব দিয়ে বুধবার সওয়া একটায় এটিএমে লাইন দিলেন। নোট হাতে পেলেন পৌনে পাঁচটায়।

টাকাহীন এটিএম। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

টাকাহীন এটিএম। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:২১
Share: Save:

রাজ্যের সচিবালয় ‘নবান্ন’র উত্তর দিকের ফটকের নিরাপত্তায় ডিউটি করেন এএসআই রবীন্দ্রনাথ সাহা। পকেটে টাকা নেই, সহকর্মীকে দায়িত্ব দিয়ে বুধবার সওয়া একটায় এটিএমে লাইন দিলেন। নোট হাতে পেলেন পৌনে পাঁচটায়। তাঁর কথায়, ‘‘সওয়া তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে জুটল একটা দু’হাজারের নোট।’’ নবান্নতেই কর্তব্যরত কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের কর্মী প্রদীপ মুখোপাধ্যায় এ দিন বললেন, ‘‘টাকা বার করতেই ভয় করছে। বাড়িতে আত্মীয়েরা এলে ওঁদের খাওয়াদাওয়ার জন্যও একেবারে টিপে টিপে খরচ করছি।’’

নোট বাতিলের সরকারি ঘোষণার এক মাস পূর্ণ হল। ব্যাঙ্ক, এটিএম থেকে নগদ তুলতে আসা সাধারণ মানুষের ভোগান্তির বিরাম নেই। নগদ টাকা ও খুচরোর অভাব নিয়ে হাহাকার এখনও অব্যাহত।

ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের বালিগঞ্জ শাখা থেকে এ দিন এক-এক জন গ্রাহক সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা তুলতে পেরেছেন। অর্থাৎ, টাকার অঙ্কের সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে ১৯ হাজার কম! ওই শাখার ম্যানেজার শশী ঝা-এর অসহায় স্বর, ‘‘কী করব? নোটের জোগানই নেই। মঙ্গলবারও সর্বাধিক ১০ হাজার টাকা দিতে পেরেছিলাম।’’ এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের স্টিফেন হাউস শাখার এক কর্তা বলেন, ‘‘চাহিদার তুলনায় আমরা অর্ধেক নগদ পাচ্ছি এখনও।’’ একই কারণে হাওড়ার বহু ব্যাঙ্ক কেউ সর্বাধিক ছ’হাজার, কেউ বড়জোর আট হাজার টাকা দিতে পেরেছে। এ দিন যেমন ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র যোধপুর পার্ক শাখায় কারেন্সি চেস্ট থেকে টাকাই ঢোকেনি। মঙ্গলবার ঢোকা ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে দু’দিন কোনও রকমে সামলানো গিয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার কী হবে, সেটা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানেন না।

সব মিলিয়ে নোট বাতিলের পরে এক মাস কেটে গেলেও অনিশ্চয়তা কাটার কোনও লক্ষণ নেই। জওহরলাল নেহরু রোড ও শেক্সপিয়র সরণির মোড়ে দু’টি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা নেই গত শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর থেকে। এ দিন অফিসের কাজ পণ্ড করে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্মী শৈবাল সান্যাল সিন্ডিকেট ব্যাঙ্কে‌র ধর্মতলা শাখায় আড়াই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে খালি হাতে ফিরলেন।

নগদ পাওয়ার এই অনিশ্চয়তায় কেউ কেউ আবার নিজেদের রোজকার অভ্যাসও পাল্টে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। বাগবাজারের অশীতিপর সুতপা দত্ত যেমন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো রোজ বিকেলে আধ ঘণ্টা হাঁটতে বেরোতেন। তার বদলে এখন প্রায় প্রতিদিন ১০ মিনিটের বাসযাত্রা। ওই বৃদ্ধা বললেন, ‘‘দুপুরের খাওয়া শেষ করেই বাগবাজার থেকে বাসে চেপে হাতিবাগানে চলে যাই। ওখানেই আমার ব্যাঙ্ক।’’

কিন্তু ব্যাঙ্কে গেলেই বেশির ভাগ দিন হাতে ধরানো হচ্ছে ২০০০ টাকার নোট। খুচরো করার সমস্যা বলে ওই টাকা নিচ্ছেন না বৃদ্ধা। তাঁর কথায়, ‘‘রোজ হত্যে দিয়ে পড়ে থাকছি। একশো বা নতুন পাঁচশোর নোট না পেলে আমার চলবে না।’’

সল্টলেকের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের গ্রাহকেরাও জানাচ্ছেন, একশো বা নতুন পাঁচশোর নোট প্রায় কোনও ব্যাঙ্কই দিতে পারছে না। সবই ২০০০ টাকার নোট। যা হাতে পাওয়া মানে খুচরো করানোর দুশ্চিন্তা শুরু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

2000 rupee note demonetization
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE