Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অভিনব কেপমারির ফাঁদে কন্ডাক্টর, ধৃত যুবক

কী ভাবে ‘অপারেশন’ চালাত কৌশিক? তদন্তকারীরা জানান, কেতাদুরস্ত পোশাকে কৌশিক তারাতলা বা আলিপুর থেকে বেহালা, মহেশতলা, ঠাকুরপুকুর রুটের বেসরকারি বাসে উঠত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৭ ০৯:৪০
Share: Save:

কেপমারের পাল্লায় পড়ে বাসযাত্রীদের টাকা, মূল্যবান জিনিস হারানোর ঘটনা নতুন নয়। এ বার কেপমারের পাল্লায় পড়লেন খোদ বাসের কন্ডাক্টর। কম টাকা দিয়ে কন্ডাক্টরের কাছ থেকে বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। শনিবার রাতে ওই যুবককে আটক করে ডায়মন্ড হারবার ট্র্যাফিক গার্ডের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে তাকে গ্রেফতার করে ঠাকুরপুকুর থানা। পুলিশের দাবি, ধৃত প্রথমে সব অস্বীকার করলেও পরে অপরাধ স্বীকার করে নেয়।

পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম কৌশিক দত্ত। বাড়ি মহেশতলায়। তার কাছ থেকে নানা রুটের বাসের টিকিট-সহ একটি চুরি যাওয়া মোবাইল এবং টাকা উদ্ধার হয়েছে। রবিবার ধৃতকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাকে শর্তাধীন জামিন দেন।

কী ভাবে ‘অপারেশন’ চালাত কৌশিক? তদন্তকারীরা জানান, কেতাদুরস্ত পোশাকে কৌশিক তারাতলা বা আলিপুর থেকে বেহালা, মহেশতলা, ঠাকুরপুকুর রুটের বেসরকারি বাসে উঠত। ওঠার পরেই কন্ডাক্টরকে একটি দশ টাকার নোট দিয়ে ছ’টাকার টিকিট দিতে বলত। কন্ডাক্টরদের অভিযোগ, তাঁরা চার টাকা ফেরত দিলেই ওই অভিযুক্ত তা নিতে অস্বীকার করত। এবং চিৎকার জুড়ে দিত। সেই সঙ্গে দাবি করত, সে ১০০ টাকার নোট দিয়েছে, কন্ডাক্টর বাকি টাকা ফেরত দিচ্ছেন না।

পুলিশের দাবি, কৌশিক এমন অভিনয় করত যে সহ-যাত্রীরা তার সঙ্গে সহমত হয়ে প্রতিবাদে যোগ দিতেন। এর পরে কৌশিক নিজেকে এলাকার ছেলে বলে দাবি করে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিতে শুরু করত। যাত্রীদের ক্ষোভ এবং অশান্তির ভয়ে বেশ কয়েক জন কন্ডাক্টর ৯০ টাকা ফেরত দিয়ে দিতেন। টাকা নিয়েই পরের স্টপে নেমে পড়ত কৌশিক।

আরও পড়ুন: মায়ের হৃদপিণ্ড দিয়ে চাটনি খেল ছেলে!

পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতেও ২২২ রুটের একটি বাসে একই কায়দায় ঝামেলা শুরু করে কৌশিক। এ বার তারাতলা থেকে বেহালা চৌরাস্তা পর্যন্ত যাবে বলে টিকিট কাটতে দশ টাকা দেয় কৌশিক। কিছু ক্ষণ বাদেই একশ টাকা দিয়েছে বলে ৯০ টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি করে কন্ডাক্টরের কাছে। যা নিয়ে তার সঙ্গে কন্ডাক্টরের বচসা শুরু হয়। বাসটি বেহালা চৌরাস্তার কাছে পৌঁছলে দু’পক্ষের বচসার শব্দ শুনে ডায়মন্ড হারবার ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি-সহ বাকি অফিসাররা যান। কৌশিককে জেরা করে ওই অভিনব পেশার গল্প জানতে পারে পুলিশ। পরে তাকে ঠাকুরপুকুর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ধৃতের কাছ থেকে বেহালা-মহেশতলা-ঠাকুরপুকুরের বিভিন্ন রুটের বেসরকারি বাসের টিকিটের পাশাপাশি টাকাও উদ্ধার হয়েছে। যা বিভিন্ন বাসের কন্ডাক্টরের কাছ থেকে কৌশিক আদায় করেছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

কলকাতা পুলিশের অফিসাররা ওই নতুন কায়দা শুনে তাজ্জব। তদন্তের স্বার্থে গোয়েন্দারা বিভিন্ন পেশার মুখোমুখি হলেও ওই রকম পেশার কথা অনেকেই প্রথম শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করা বর্তমানে থানার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘চাকরি জীবনের প্রথম দিকে পেয়েছিলাম এক অভিযুক্তকে। যে চলন্ত বাস বা ভিড় বাজারে পকেট থেকে পেন হাতিয়ে নিত। পরে তা বিক্রি করে দিত। ওই অভিযুক্ত শুধু পেন হাতাতো। সেই অভিনব পেশার পরে আবার নতুন এক পেশার সন্ধান পেলাম ঠাকুরপুকুরে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kepmari Bus বাস
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE