নিয়ন্ত্রণ: পুজোয় স্কুলপড়ুয়াদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োগ করেছে কলকাতা পুলিশ। মঙ্গলবার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
মানুষ ও যানবাহনের ভিড় সামাল দিলে কী হবে, মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় পুলিশকে সমস্যায় ফেলে দিল সেলফির নেশা।
মণ্ডপের মধ্যে তো বটেই, রাস্তা দিয়ে যেতে যেতেও সেলফি তোলার ধুম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যেখানে খুশি ফোন বাগিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন দর্শকেরা। ফলে লাইন এগোচ্ছে না।
পুজোর পরের দিনগুলি কেমন যাবে, চতুর্থীর দুপুর থেকেই তার আভাস পাওয়া গিয়েছিল। সোমবার, পঞ্চমীর সন্ধ্যায় পুরো আটকে গিয়েছিল চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। কারণ, তখনও পুলিশের প্রস্তুতি শেষ হয়নি। এ দিন অবশ্য প্রস্তুত ছিল পুলিশ। কিন্তু সেলফি যে নতুন বিপদ ডেকে আনতে পারে, তার আঁচ করতে পারেনি লালবাজার।
এ দিন সন্ধ্যায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ভিড়টা কলেজ স্ট্রিট, বিধান সরনি হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল হাতিবাগান হয়ে অরবিন্দ সরণিতে। কাশী বোস লেন, হাতিবাগান সর্বজনীন, নলিন সরকার স্ট্রিট, নবীনপল্লি, সিকদারবাগানের পুজোয় আছড়ে পড়েছে জনতা। আর একটা ভিড় তেলেঙ্গাবাগান, যুববৃন্দ, করবাগান, পল্লিশ্রীর পুজো ঘিরে। দক্ষিণে কসবা থেকে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ পর্যন্ত আর একটা ভিড়ের স্রোত রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে। চেতলা অগ্রণী, সুরুচি সঙ্ঘ হয়ে আর একটা ভিড় গিয়েছে ঠাকুরপুকুর ক্লাব, উদয়নপল্লি, এসবি পার্কে।
দুপুর থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে জনজোয়ার উপচে পড়লেও ঠাকুর দেখতে রাস্তায় বেরিয়ে যানজটে গলদঘর্ম হতে হয়েছে দর্শনার্থী থেকে সাধারণ মানুষকে। পুলিশ জানিয়েছে, দর্শনার্থীদের ভিড়ের পাশাপাশি এ দিন মধ্য কলকাতায় বেরিয়েছিল মহরমের তাজিয়ার মহড়া-মিছিল। ফলে দুপুর থেকেই এপিসি রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-সহ মধ্য এবং উত্তর কলকাতার রাস্তায় ছিল গাড়ির জট। রাতেও বদলায়নি ছবিটা।
গত কয়েক বছর ধরেই পুজোর ভিড়টা শুরু হচ্ছিল তৃতীয়া থেকে। সেই মতো কোমর বেঁধে নেমেছিল পুলিশ-প্রশাসন। মহালয়ার আগে থেকেই শুরু হয়েছে পুজোর উদ্বোধন। তাই তৃতীয়া-চতুর্থী থেকেই ভিড় জাঁকিয়ে বসেছে শহরের রাস্তায়। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে ষষ্ঠী। দু’দিন আগে থেকে পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিয়েও এ দিনের ভিড় সামলাতে নাজেহাল হয়েছে পুলিশ। তবে পঞ্চমীর মতো পুরো স্তব্ধ হয়ে যায়নি চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ বা ইএম বাইপাস।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন বিকেল থেকেই চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, বিধান সরণি, মহাত্মা গাঁধী রোড, কলেজ স্ট্রিট, টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, গড়িয়াহাট রোড সাউথে যান চলাচলের গতি ছিল ধীর। রাসবিহারী মোড় থেকে দেশপ্রিয় পার্কের মণ্ডপে পৌঁছতেই লেগে গিয়েছে প্রায় কুড়ি মিনিট। উত্তর ও মধ্য কলকাতাতেও একই ছবি। দুপুর থেকে অরবিন্দ সেতুতে ছিল গাড়ির লাইন। এক সময়ে ভিড়ের চাপে অরবিন্দ সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় ট্র্যাফিক পুলিশ।
সব ব্যবস্থা থাকতেও ষষ্ঠীতে পুলিশকে ভোগাল সেলফি। লালবাজারের এক কর্তা বললেন, ‘‘আমরা ঠিক করেছি, প্রয়োজনে যানবাহন রাস্তায় পাঁচ মিনিট অতিরিক্ত দাঁড়িয়ে থাক। কিন্তু মানুষের ভিড় এক জায়গায় বেশিক্ষণ জমতে দেওয়া যাবে না। সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে চলেছে সেলফি তোলার হিড়িক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy