প্রতীকী ছবি।
উৎসবের রাতে নাইটক্লাব বা পানশালায় উদ্দাম হুল্লোড়ের মধ্যে আচমকা হানা দিতে পারেন নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)-র অফিসারেরা।
চলতি মাসের গোড়ায় পরপর দু’টি ঘটনায় বড় অঙ্কের মাদক বাজেয়াপ্ত করেছে এনসিবি। ওই দু’টি মামলায় চোরাচালানকারীদের জেরা করে জানা গিয়েছে, মাদক কেনাবেচা, সেবন এবং মাদক ঘিরে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অনেকাংশেই ব্যবহার করা হচ্ছে শহরের নামী পানশালা ও নাইটক্লাবকে। উঠতি যুবক, কলেজ পড়ুয়াদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী বা সরবরাহকারীদের আলাপ হচ্ছে মূলত এই সব নাইটক্লাব ও পানশালায়। সেখান থেকে নেশার কবলে পড়ছেন যুবক-যুবতীরা।
এখন উৎসবের মরসুম। সামনে বর্ষশেষের রাত। শহরের প্রায় প্রতিটি নাইটক্লাব বা পানশালায় চলবে হুল্লোড়। আশঙ্কা, তার মধ্যেই চলবে মাদক সেবন। এনসিবি-র পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘মাদক সেবন রুখতে রাজারহাটে আমাদের দফতরে কলকাতা ও সল্টলেক মিলিয়ে প্রায় ১৬টি পানশালা ও নাইটক্লাবের মালিকদের ডাকা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ৮ জন এসেছিলেন। বাকিদের আবার ডাকা হবে। দ্বিতীয় বার ডাকার পরেও তাঁরা না এলে ওই পানশালা বা নাইটক্লাবের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এই প্রথম শহরের প্রায় প্রতিটি নাইটক্লাব ও পানশালায় ঢোকার মুখে এবং লাউঞ্জে — দু’জায়গায় বোর্ড লাগিয়ে মাদক সেবনের ক্ষতিকারক দিকের কথা লেখা থাকবে। মাদক-সহ ধরা পড়লে কী ধরনের কড়া শাস্তি অপেক্ষা করে থাকবে, তারও উল্লেখ থাকবে সেখানে। দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘এ বিষয়ে নাইটক্লাব ও পানশালাকে আমাদের পক্ষ থেকে যেমন সাহায্য করা প্রয়োজন, আমরা করব।’’ নাইটক্লাব ও পানশালার কোথায় কোথায়
সিসি ক্যামেরা থাকা দরকার, মাদক সেবন চলছে কি না, তা কী ভাবে নজরদারি করা হবে— বৃহস্পতিবার সেই সংক্রান্ত নির্দেশও দেওয়া হয়েছে মালিকদের। উৎসবের রাতে আচমকা হানা দিয়ে দেখা হবে, সেই সব নিয়ম ও নির্দেশ ঠিক মতো মানা হচ্ছে কি না। মানা না হলে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন দিলীপবাবু।
এনসিবি সূত্রে খবর, সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে জানা গিয়েছে শহরের বেশ কিছু কলেজের পড়ুয়ারা নিয়মিত মাদক সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এমনকী, তাঁদের অনেকে আবার মাদকের খরচ জোগাড় করতে মাদক কেনা-বেচাও করছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই পানশালা বা নাইটক্লাবে গিয়ে মাদক সেবন করছেন তাঁরা। সেখানেই আলাপ হচ্ছে চোরাচালানকারীদের সঙ্গে। সম্প্রতি পাচারকারী সন্দেহে এনসিবি-র হাতে ধরা পড়া পাঁচ জনের মধ্যে দু’জনই নাইটক্লাবের ডিজে।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, কিছু নাইটক্লাব ও পানশালার ভিতরে ধূমপান নিষিদ্ধ। ধূমপানের জন্য আলাদা জায়গা থাকে। সেখানে গিয়ে মাদক নেওয়া হয়। এমনকী, শৌচাগারে সিসি ক্যামেরা না থাকায় তার সুবিধা নিয়ে সেখানেও মাদক নেন অনেকে। দিলীপবাবু জানিয়েছেন, নাইটক্লাব ও পানশালায় যে মাদক সেবন হয়, তা হয়তো মালিক বা ম্যানেজার জানেন না। নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে এই সব মাদকাসক্তদের যোগাযোগ থাকতে পারে। এ বিষয়ে তাঁদের নাইটক্লাব ও পানশালার কর্মীরা যাতে সজাগ থাকেন, সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে মালিকদের।
আরও বলা হয়েছে, নাইটক্লাব ও পানশালায় সন্দেহভাজন কাউকে কিছু খেতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তা এনসিবি-কে জানাতে। প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে শৌচালয়েও হানা দিতে হবে ক্লাবের কর্মীদের। এনসিবি-র এক কর্তা জানিয়েছেন, এলএসডি ব্লট বলে সম্প্রতি যে মাদক তাঁরা বাজেয়াপ্ত করেছেন, তা এতই ছোট এবং স্রেফ নাক দিয়ে টেনে নিতে হয়, যা নাইটক্লাব ও পানশালায় নিজের আসনে বসেই করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রেও কর্মীদের সতর্ক থাকাটা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy