Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দল-দাপটে তলানিতে বল, ফাইলও তাই ঢাল পুলিশের

ঘটনাচক্রে সে দিন কিছুটা আগেই বাড়ি ফিরেছিলেন উত্তর কলকাতার একটি থানার ওসি। খবরের চ্যানেল খুলে রাতে সপরিবার খেতে বসে কয়েক মুহূর্ত বাদেই কার্যত ‘হে ধরণী দ্বিধা হও’-দশা তাঁর। থানায় প্রাণভয়ে উর্দিধারীর টেবিলের তলায় মুখ লুকোনোর দৃশ্য সহ্য করতে না-পেরে তড়িঘড়ি চ্যানেল পাল্টে দিয়েছেন ওই প্রবীণ পুলিশ অফিসার। কিন্তু তার থেকেও বেশি আহত হয়েছেন ঘটনার ২৪ ঘণ্টা বাদেও লালবাজারের শীর্ষস্তর থেকে কোনও কড়া পদক্ষেপ হয়নি বলে। শনিবার দুপুরে তাঁর খেদোক্তি, “ছেলেমেয়েকে বলেছি, আর যা-ই করিস, পুলিশের চাকরি তোদের করতে দেব না।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৩
Share: Save:

ঘটনাচক্রে সে দিন কিছুটা আগেই বাড়ি ফিরেছিলেন উত্তর কলকাতার একটি থানার ওসি। খবরের চ্যানেল খুলে রাতে সপরিবার খেতে বসে কয়েক মুহূর্ত বাদেই কার্যত ‘হে ধরণী দ্বিধা হও’-দশা তাঁর।

থানায় প্রাণভয়ে উর্দিধারীর টেবিলের তলায় মুখ লুকোনোর দৃশ্য সহ্য করতে না-পেরে তড়িঘড়ি চ্যানেল পাল্টে দিয়েছেন ওই প্রবীণ পুলিশ অফিসার। কিন্তু তার থেকেও বেশি আহত হয়েছেন ঘটনার ২৪ ঘণ্টা বাদেও লালবাজারের শীর্ষস্তর থেকে কোনও কড়া পদক্ষেপ হয়নি বলে। শনিবার দুপুরে তাঁর খেদোক্তি, “ছেলেমেয়েকে বলেছি, আর যা-ই করিস, পুলিশের চাকরি তোদের করতে দেব না।”

এ দিন সন্ধের ট্রেনে বাড়ি ফেরার পথে আর এক পুলিশকর্মীর সংশয়, “পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে রাস্তায় অন্যায় দেখলেও প্রতিবাদের সাহস পাব না। কোনও রাজনৈতিক নেতাকে ধমক দিয়ে ফেললে, নাকখত দিয়েও তো পার পাব না!”

আলিপুর থানায় ঢুকে পুলিশের উপরে হামলা, টেবিলের তলায় ঢুকে গাবদা ফাইল দিয়ে মুখ আড়াল করে পুলিশের প্রাণ বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টার দৃশ্য এখন রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ার মুখরোচক খাদ্য। একটি ব্যঙ্গচিত্রে উর্দিধারী স্বামী বাড়ি থেকে বেরোনোর মুহূর্তে ঘরণীর প্রার্থনা, ‘দুগ্গা দুগ্গা, মানুষটা যেন আজ মারধর না-খেয়ে ফেরে!’ অবসরে কিছুটা কবিতার চর্চা করেন কলকাতা পুলিশের এক ইনস্পেক্টর। তাঁর মনে পড়ছে বহুচর্চিত কয়েকটি পঙ্ক্তি। “এক সময়ে শুনতাম, ‘পুলিশ, কবির সামনে টুপিটা তুই খুলিস।’ ক্রমশ দেখছি, কবি নয় নেতাদের জুতোয় মাথা ঠুকতেই প্রায় টেবিলের তলায় ঢুকে পড়ছি!”

কেন এমন ঘটছে? শাসক দলের ঘনিষ্ঠ দুর্বৃত্তদের যে ভাবে আলিপুর থানার প্রবেশপথ ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ, তাতে প্রশ্ন উঠছে বাহিনীর পেশাদারিত্ব নিয়েই। হামলাকারীদের পাল্টা আঘাত না-করে ভয় দেখিয়েও মোকাবিলা করা যেত বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ পুলিশকর্তারা। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য, শাসক দলের সামনে রুখে দাঁড়ানোর সাহসটুকু অবধি পুলিশ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে, থানা তথা নিজেদের খাসতালুকে রক্ষকের সুরক্ষা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

পুলিশ থেকে আম জনতা, একটি বিষয়ে সকলেই একমত, পুলিশবাহিনীর অপদস্থ হওয়ার এমন জঘন্য বিজ্ঞাপন আগে দেখা গিয়েছে কি না, সন্দেহ! কোনও কোনও পুলিশ অফিসার অবশ্য বলছেন, ইদানীং টিভিতে সবটা দেখা যাচ্ছে বলেই এত হই-হই। আগেও রাজনীতির চাপে পুলিশের মাথা নোয়ানোর বহু ঘটনাই ঘটেছে। তবে আলিপুর-কাণ্ডের সঙ্গে তুলনীয় ‘লজ্জা’ সে-ভাবে খুঁজে পাচ্ছেন না প্রাক্তন ও বর্তমান পুলিশকর্তাদের অনেকেই। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনাররা কটাক্ষ করেছেন, এমন পুলিশ থাকা, না-থাকা সমান। আর কোনও ঘটনা পুলিশের আত্মবিশ্বাসও এতটা দুমড়ে-মুচড়ে দিতে পেরেছে কি না, সন্দেহ।

নাম প্রকাশ না-করার শর্তে আলিপুর থানার এক কনস্টেবল এ দিন বলেন, “উপরমহলের বাবুরা হলেন পুলিশ। আমরা ফুলিশ! ওরা ঠান্ডা ঘরে বসে থাকবেন। আমরা পড়ে-পড়ে মার খাব।” বরাবরই পুলিশ বা সামরিক বাহিনীতে বিক্ষোভ সামাল দেওয়া বা আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজটা মাঝারি বা নিচুতলার কর্মীরাই করেন। উপরের স্তর পরিস্থিতি তদারকি করে ও নিচুতলাকে আত্মবিশ্বাস জোগায়। পুলিশকর্মীদের অনেকেই বলছেন, এখন বাহিনীর উপরতলার আত্মবিশ্বাসই ঝুরঝুরে। পুলিশকর্তারা নিজেদের চাকরি বাঁচাতেই শাসক দলের নানা স্তরের নেতাদের পায়ে কার্যত বিকিয়ে গিয়েছেন। নিচুতলা কী ভাবে ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করবে?

অথচ, এ রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে কিন্তু কিছু ইতিবাচক লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। যেমন, পুলিশের উপরে রাজনৈতিক প্রভাব হটাতেই কলকাতা বা রাজ্য পুলিশে মাঝারি ও নিচু স্তরের কর্মীদের (যাঁরা আইপিএস নন) সমিতি বা অ্যাসোসিয়েশন ভেঙে দেওয়া হয়। বাম আমলে এই অ্যাসোসিয়েশনের সুবাদে কিছু পুলিশ অফিসার বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। আইজি-র মুখে-মুখে তর্ক করছেন কোনও সাব-ইনস্পেক্টর, ঘটেছে এমন ঘটনাও।

এখন কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কোনও অ্যাসোসিয়েশন না-থাকলেও পুলিশের অন্দরে রাজনীতির প্রভাব আরও জাঁকিয়ে বসেছে। স্রেফ প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে কোনও কোনও অফিসার কার্যত সর্বেসর্বা হয়ে উঠছেন। ফলে, শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর অন্দরে গঠনতন্ত্রের মর্যাদাই মাটিতে মিশে যাচ্ছে।

কলকাতা পুলিশের ক্ষেত্রে যেমন দেখা যাচ্ছে, সেন্ট্রাল ডিভিশন ও সাউথ ডিভিশনের দু’টি থানার ওসি-র হাতেই রয়েছে ক্ষমতার সুতো। বাহিনীর শীর্ষ স্তরও তাঁদের রেয়াত করে চলে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রশাসনের অন্দরে বদলি থেকে শুরু করে নানা কাজে ওই দুই ওসি-ই ছড়ি ঘোরান। বাহিনীর উপরতলাকে নিয়ে মস্করা করতেও তাঁরা কসুর করেন না। সম্প্রতি থানার ওসি, সাব-ইনস্পেক্টরদের বদলির পরে কলকাতা পুলিশের শীর্ষস্তরে থাকা এক এডিজি পদমর্যাদার অফিসার এক ওসিকে ফোন করে বলেন, “সব বদলি তোমার মনমতো হয়েছে তো?” প্রশাসন ও শাসক দলের শীর্ষস্তরের ঘনিষ্ঠ সেই ওসি মোবাইলের স্পিকার ‘অন’ করে শীর্ষকর্তার কথা সহকর্মীদের শোনান।

আর এক জন ওসি-ও কম যান না। হাইকোর্টের এক সরকারি আইনজীবীর সঙ্গে বচসার পরে তাঁকে রীতিমতো কথা শুনিয়েছেন, “যান, যান, যাকে খুশি আমার নামে বলুন। ওঁর চেয়ারটাও কিন্তু আমি ধরে রেখেছি।” বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এক দিকে শাসক দলের মদতপুষ্ট দুর্বৃত্তদের সামনে শিরদাঁড়া সোজা রাখতে ব্যর্থ পুলিশ। অন্য দিকে, বাহিনীর শৃঙ্খলাও বেসামাল হয়ে পড়ছে। আবার যোগ্যতা বিচার না-করে স্রেফ শাসক দলের কোনও না কোনও নেতার প্রতি আনুগত্যের নিক্তিতেই থানা স্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। ফলে, পুলিশের দক্ষতার খামতিটাও বেআব্রু হয়ে যাচ্ছে, আলিপুরে যা প্রকট।

এবং স্রেফ কলকাতা নয়, গোটা রাজ্যেই এমন শোচনীয় দশা। উত্তরবঙ্গ থেকে সুন্দরবন, মনোবল কার্যত তলানিতে। বীরভূম পুলিশের একাংশ বলছে, শাসক দলের চাপে তারা কাজ করতে পারছে না। বড়কর্তারাও ভরসা দিচ্ছেন না। পুরুলিয়ায় অনেক পুলিশকর্মীর দাবি, বাম আমলে শাসক দলের কর্মীদের উপরে নিয়ন্ত্রণ ছিল। এখন তা না-থাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ বড় সমস্যা। মেদিনীপুরেও অনেক পুলিশকর্মী বলছেন, তাঁরা চাপে। বিরোধীদের মানুষ হিসেবে গণ্য করবেন না আগের আমলে এমনটা ছিল না। দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশেরও অনেকে বলছেন, শাসক দলের কর্মীরা তুলনায় অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। উত্তর ২৪ পরগনায় শাসনে মজিদ মাস্টারের উপরে হামলার ঘটনায় দেখা গিয়েছে, উল্টে আক্রান্তের নামেই মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বর্ধমানে পুলিশকর্মীদের একটা অংশ মানছেন, আলিপুরের মতো ঘটনা তাঁদেরও মুখ বুজে সহ্য করতে হতো। পরে হয়তো দোষীদের খুঁজে গ্রেফতার করা হতো।

খাস কলকাতার আলিপুরে পুলিশ সেটুকু সাহসও দেখাতে পারেনি এ পর্যন্ত। এবং এই অবস্থাই দেখিয়ে দিচ্ছে পুলিশের দশা কতটা শোচনীয়। কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিসি সমীর গঙ্গোপাধ্যায় বলছিলেন, “পুলিশের ভাবমূর্তির যাতে ক্ষতি না-হয়, তখনও সেটা অন্তত প্রশাসন মাথায় রাখত।” সমীরবাবুর মনে পড়ছে, নিরুপম সোম কলকাতা পুলিশের কমিশনার থাকাকালীন সে-যুগে কুখ্যাত হেমেন মণ্ডল-বাহিনী বড়তলা থানার সামনে কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। পুলিশ কিন্তু তখন শিরদাঁড়া সোজা রেখেছিল। পরে যথাযথ ব্যবস্থাও নেয়।

রাজনৈতিক মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীদের চাপে পুলিশের আপসের ঘটনা যে আগে ঘটত না এমন নয়। দমদমের কুখ্যাত দুলাল-বাহিনীর মাথারা মিলে এক বার রেলের চেতনা-গাড়িতে ধরা পড়া বিনা টিকিটের যাত্রীদের বাঁচাতে মারমুখী হয়ে ওঠে। তখন শিয়ালদহের রেলপুলিশের সুপার নিজে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বৈঠক করে অভিযুক্তদের রেহাই দেন। কিন্তু পরে এই দুলালের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিলে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর কিন্তু বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছিল। কাশীপুর থানার তৎকালীন ওসি, এখন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্তা অনিল জানা বলছিলেন, “আমি শাসক দলের ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম, ঠিকই। কিন্তু তখনকার মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রশাসনের কর্তারা পুরোপুরি সাহায্য করেছিলেন।”

বাম আমলে তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল চারু মার্কেট থানায় (২০০৮) চড়াও হওয়ায় পুলিশ ঝামেলায় পড়লেও পরে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করেনি। জমানা বদলের পরে একাধিক ঘটনায় কিন্তু পুলিশ সত্যিই কোণঠাসা। তৃণমূলের জমানায়, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ভবানীপুর থানায় ঢুকে ধৃত দুই দুর্বৃত্তকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। গার্ডেনরিচে কলেজের ঝামেলা মেটাতে গিয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরী। ওই খুনের নেপথ্যনায়ক হিসেবে অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর ইকবাল আহমেদ ওরফে মুন্নাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল বেশ কিছুটা টালবাহানার পরে। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরে গত লোকসভা ভোটেও কিন্তু দেখা গিয়েছে, মুন্নাই তৃণমূলের প্রধান বল-ভরসা।

অতীতে পুলিশকে দেখলেই ভয়ে পাড়ার লোকজনের ঘরে ঢুকে পড়ার দস্তুর ছিল কলকাতায়। ঔপনিবেশিক আমলের সেই ভাবমূর্তি ভেঙে ফেলে সাম্প্রতিক অতীতে পুলিশ বারবারই নিজেদের আমজনতার বন্ধু প্রতিপন্ন করতে চেয়েছে। কিন্তু ক্রমশ রাজনৈতিক চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করে পরিস্থিতির উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে, যা দেখা গিয়েছে আলিপুরের ঘটনায়।

কিন্তু টিভিতে যে পুলিশকর্মীদের হামলার মুখে প্রাণভয়ে পিছু হটতে দেখা গিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না লালবাজারের কর্তারা? শুনে কলকাতা পুলিশের শীর্ষস্তরের এক কর্তার কণ্ঠে সহানুভূতির স্বর, “ওই কনস্টেবলকে তো এক মিনিটে সাসপেন্ড করা যায়! কিন্তু তাতে কি পুলিশের মনোবল বাড়বে?”

তাঁর ইঙ্গিত, পুলিশের অসুখটা এখন অনেক গভীরে শিকড় গেড়েছে। টেবিলের তলায় লুকোনো পুলিশকর্মী তাই তাঁর অনেক সহকর্মীর কাছেই শাসক দলের সামনে গোটা বাহিনীর অসহায়তার প্রতীক।

পোড়খাওয়া এক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের মন্তব্য, “এই ঘটনায় কষ্ট পেয়েছি, ঠিকই। কিন্তু অবাক হইনি। কারণ, যা চলছে, তাতে এটাই ঘটার কথা ছিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE