Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Dengue

নতজানু ডেঙ্গি, লড়াইয়ে জয়ী মা ও মেয়ে

সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় কোলে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত তো বটেই লেক টাউনের মাইকেল কলোনির বাসিন্দা পূজা কুমারী। কিন্তু বছর আঠাশের ওই তরুণী আতঙ্কের রেশ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

স্বস্তি: সদ্যোজাত মেয়েকে কোলে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন মা-বাবা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

স্বস্তি: সদ্যোজাত মেয়েকে কোলে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন মা-বাবা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪২
Share: Save:

এ যেন এক যুদ্ধজয়। এক মায়ের, এক চিকিৎসকের। যে জয়ের আনন্দে ভাসছে গোটা পরিবার, স্বস্তিতে চিকিৎসকেরাও। ডেঙ্গি আতঙ্কে যখন কাঁপছে শহর থেকে জেলা, তখন মা ও শিশুর জীবনযুদ্ধের এই জয়ে যেন আলোর দিশা দেখছে চিকিৎসক মহল।
তাদের মতে, ঠিক সময়ে ঠান্ডা মাথায় চিকিৎসকদের নেওয়া সিদ্ধান্তের জোরে এক সদ্যোজাত ফিরে এসেছে তার মায়ের কোলে। এর থেকে বড় অনুপ্রেরণা বোধহয় এমন আতঙ্কের সময়ে আর কিছুই হয় না।

আর মা? সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় কোলে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত তো বটেই লেক টাউনের মাইকেল কলোনির বাসিন্দা পূজা কুমারী। কিন্তু বছর আঠাশের ওই তরুণী আতঙ্কের রেশ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। পরিবার সূত্রের খবর, সন্তানসম্ভবা পূজার কিছু দিন ধরেই হাত-পায়ে যন্ত্রণা হচ্ছিল। সেই সঙ্গে ক্রমেই বাড়ছিল জ্বর। গত ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হয় বমি। এর পরেই পরিজনেরা আর দেরি না করে পূজাকে নিয়ে যান চিকিৎসকের কাছে। রক্ত পরীক্ষা করাতে বলেন চিকিৎসক। পরীক্ষায় জানা যায়, পূজা ডেঙ্গি আক্রান্ত।

আরও পড়ুন: আতঙ্কে দেগঙ্গা, সৎকারেও লোক নেই

পূজাকে প্রথমে বড় বাজারের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। কিন্তু দিন দুই চিকিৎসার পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে অন্যত্র সরানোর সিদ্ধান্ত নেন পরিজনেরা। এর পরে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। ১৪ অক্টোবর রাতে তাঁর রক্ত পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্টে দেখা যায়, প্লেটলেট চল্লিশ হাজারে নেমে গিয়েছে। পূজা তখন ৩৭ সপ্তাহের গর্ভবতী। এর পরে আর সময় নষ্ট করতে চাননি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। দ্রুত সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কারণ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল, গর্ভস্থ শিশুটি মলত্যাগ করছে। তা শিশুর পক্ষে ক্ষতিকর। এতে চিকিৎসকদের আশঙ্কা হয়েছিল, পূজার পাশাপাশি তাঁর গর্ভস্থ শিশুও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তাই ৪০ সপ্তাহের নির্ধারিত সময়ের আগেই ১৫ অক্টোবর স্ত্রীরোগ চিকিৎসক সুমিতা সাহার তত্ত্বাবধানে পূজার সিজার করা হয়। পরিবারকে চিকিৎসকেরা জানান, সদ্যোজাতের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার রক্তের নমুনা পরীক্ষায় এনএস ওয়ান পজিটিভ ধরা পড়েছে। প্লেটলেটও তখন নেমে হয় ১১,০০০। শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘সুস্থ সদ্যোজাতের ক্ষেত্রে প্লেটলেট থাকে সাড়ে চার লক্ষ থেকে দেড় লক্ষের মধ্যে। কোনও সদ্যোজাতের ক্ষেত্রে তা এক লক্ষের নীচে নেমে যাওয়া মানে অবশ্যই কোনও সমস্যা রয়েছে।’’ এর পরে কয়েক দিন সদ্যোজাতকে নিওনেটাল ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিট (নিকু)-এ রেখে চিকিৎসা চালানো হয়।

এ দিকে, সপ্তাহখানেকের চিকিৎসার পরেই সুস্থ হয়ে ওঠেন পূজাও। অক্টোবরের ২২ অক্টোবর ছাড়া পান তিনি। ন’দিন পর্যবেক্ষণে রাখার পরে গত ২৪ অক্টোবর বাড়ি পাঠানো হয় তাঁর শিশুকন্যাকেও।

সপ্তাহখানেক আগে একই হাসপাতালে এক সন্তানসম্ভবা ডেঙ্গি আক্রান্ত মায়ের গর্ভস্থ শিশু মারা যায়। তাই পূজার ক্ষেত্রে যাতে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্যে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসক সুমিতাদেবীর কথায়, ‘‘শারীরিক অসুস্থতার জেরেই গর্ভে থাকা অবস্থায় শিশু মলত্যাগ করে। সেই মল গর্ভস্থ শিশুর ফুসফুসে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে সেটি প্রাণ সংশয়ের কারণ হতে পারে। তাই পূজার ক্ষেত্রে দ্রুত সিজার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। শিশুটি জন্মের সময়ে ডেঙ্গি আক্রান্ত থাকলেও এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ।’’

সন্তানকে আঁকড়ে পূজা বলছেন, ‘‘নিজে অসুস্থ হয়ে পড়তেই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তখন শুধু একটা কথাই মাথায় ঘুরছিল, বাচ্চাটা সুস্থ থাকবে তো? আমি আর কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নই। এখন ওকে সব সময়ে মশারির ভিতরে রাখি। চিকিৎসকদের অনেক ধন্যবাদ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Woman Pregnancy New born baby Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE