৯০০৭০৪১৯০৮ এবং ৯০০৭০৪১৭৮৯, নিছক দু’টি মোবাইল নম্বর নয়। এর সাহায্যে প্রয়োজনে প্রিয়জনের প্রাণও বাঁচানো যেতে পারে। গত বৃহস্পতিবার যেমন প্রাণ বেঁচেছে দমদমের এক বাসিন্দার।
মেট্রোর ওয়েবসাইটে দেওয়া এই নম্বরে স্ত্রীর খোঁজে গত বৃহস্পতিবার দমদম থেকে ফোন করেছিলেন এক ব্যক্তি। জানিয়েছিলেন, দু’-তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তাঁর স্ত্রীর খোঁজ মিলছে না। পরনে কী জামাকাপড় ছিল তা-ও জানিয়েছিলেন। সেই সূত্র ধরেই পোশাকে মিল পেয়ে চাঁদনি চক স্টেশনে এক মহিলাকে আটকান আরপিএফ কর্মীরা। মেট্রোর দাবি, ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তিনি দমদমের বাসিন্দা। বাড়িতে ঝামেলার জন্য আত্মহত্যা করার কথা ভেবে চলে এসেছিলেন চাঁদনি চকে। কিন্তু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েও ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি। মহিলাকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় মেট্রো।
মেট্রো সূত্রের খবর, তাদের সঙ্গে বিভিন্ন কারণে যোগাযোগ করার জন্য ওয়েবসাইটে ওই দু’টি ফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে। তাতে ফোন করায় গত এক বছরে প্ল্যাটফর্ম থেকে ৫ জনকে উদ্ধার করা গিয়েছে। মেট্রো-কর্তৃপক্ষের দাবি, জেরায় ওই পাঁচ জনই জানিয়েছেন, আত্মহত্যা করবেন বলে এসেছিলেন। এ বার মেট্রো তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শুধু ওয়েবসাইটেই নয়, ওই ফোন নম্বরের প্রচার করে সকলকে জানানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে ফোন নম্বরের এই বহুল প্রচারের কথা শুনে কেউ কেউ বলছেন, এর দ্বারা কি মেনে নেওয়া হল যে আত্মঘাতীদের কাছে এখন সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্য মেট্রো প্ল্যাটফর্ম?
শনিবার রাতে নেতাজি ভবন স্টেশনে ছেলেকে নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলেন এক মহিলা। ছেলে বেঁচে গেলেও মহিলা মারা যান। রবিবার সকালে গিরিশ পার্ক স্টেশনেও ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন এক যুবক। মেট্রোর দাবি, ওই মহিলার স্বামী জানিয়েছেন, সে দিন দুপুর থেকে স্ত্রী ও ছেলের খোঁজ পাচ্ছিলেন না। ফোনও পাওয়া যাচ্ছিল না। মেট্রোর এক কর্তার আক্ষেপ, ‘‘উনি এক বার আমাদের ফোন করলে হয়তো মহিলা বেঁচে যেতেন।’’
আরও পড়ুন: যুবক ‘খুনে’ ধৃত সেই যুবতী
মেট্রো-কর্তারা বলছেন, ‘‘আচমকা পরিবারের কেউ দু’তিন ঘণ্টা ধরে নিখোঁজ থাকলে এই নম্বরেও একবার ফোন করে জানান। তাহলে স্টেশনগুলিতে লক্ষ্য রাখা যাবে।’’ মেট্রো কর্তাদের যুক্তি, এতে দু’রকম লাভ হবে। আগে থেকে তথ্য জানা গেলে ঝাঁপ ঠেকানো যাবে। এ ছাড়া, সহজেই হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তির খোঁজ মিলতে পারে।
চলন্ত মেট্রোর সামনে ঝাঁপ ঠেকাতে আরও একটি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মেট্রোর কর্তারা। তাঁরা জানান, এ বার থেকে স্টেশনে ঢোকার সময়ে মেট্রোর গতিবেগ কমিয়ে দেওয়া হবে, যাতে চালকদের আপৎকালীন ব্রেক কষতে সুবিধা হয়। গতি কমানো নিয়ে কেউ কেউ বলছেন, সব প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সময়ে গতি কমানো হলে মেট্রোর যাত্রাপথে কিছুটা অতিরিক্ত সময় ব্যয় হবে। যদিও মেট্রো কর্তাদের দাবি, গতি কমানো হলে যেটুকু সময় বেশি লাগবে তা নিয়ে মেট্রোর যাত্রীদের তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু গতি কমলে চালকদের কাছে প্রাণ বাঁচানোর অনেকটা সুযোগ থাকবে।
মেট্রো সূত্রের খবর, এ পর্যন্ত মেট্রোতে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ৩১৪ জন। ১৫৭ জনকে বাঁচানো গিয়েছে। মারা গিয়েছেন ১৫৭ জন। এঁদের মধ্যে ১২৮ জন পুরুষ ও ২৯ জন মহিলা। এমতাবস্থায় গতি কমানোর বিষয়টিতে সাধুবাদ জানাচ্ছেন অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy