Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বনগাঁয় গলার নলি কেটে খুন শাশুড়িকে

মেঝেতে পড়ে কাতরাচ্ছেন মা। স্ত্রীর হাতে আনাজ কাটার ছুরি। একের পর এক তা দিয়ে মাকে কোপাচ্ছে স্ত্রী। পাশে দাঁড়িয়ে তারস্বরে কাঁদছে একরত্তি মেয়েটা।

নিহত কল্যাণী দে কর্মকার ও ধৃত রুম্পা।

নিহত কল্যাণী দে কর্মকার ও ধৃত রুম্পা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:২৫
Share: Save:

মা-স্ত্রীর কথা কাটাকাটি একটু জোর গলাতেই চলছিল। তার মধ্যেই দু’বছরের ছোট মেয়েটার আর্তনাদ কানে আসে। মাথা না গলালেই নয়, ভেবে উপরের ঘরে উঠে যান পার্থ দে কর্মকার।

দেখেন ভয়ঙ্কর দৃশ্য। মেঝেতে পড়ে কাতরাচ্ছেন মা। স্ত্রীর হাতে আনাজ কাটার ছুরি। একের পর এক তা দিয়ে মাকে কোপাচ্ছে স্ত্রী। পাশে দাঁড়িয়ে তারস্বরে কাঁদছে একরত্তি মেয়েটা। পার্থবাবু মাকে বাঁচাতে এগিয়েছিলেন। স্ত্রীর হাত থেকে ছুরি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তখন যে খুন চেপে বসেছে বৌমার মাথায়। পার্থবাবুর হাতে কোপ লাগে। তিনি আর্তনাদ করে উঠে এক হাত দিয়ে অন্য হাত চেপে ধরতে না ধরতেই শাশুড়ির গলার নলি এক টানে কেটে ফেলেন রুম্পা।

প্রতিবেশীরা ততক্ষণে বুঝে যান, ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গিয়েছে বনগাঁর বসাকপাড়ার দে কর্মকার বাড়িতে। তাঁরা খবর দেন পুলিশকে। পুলিশ এসে রক্তাক্ত অবস্থায় পার্থবাবুর মা কল্যাণীদেবীকে (৬২) নিয়ে যায় বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সোমবার সন্ধের দিকে ওই ঘটনার পরে রাতেই থানায় রুম্পার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন পার্থ। গ্রেফতার করা হয়েছে ওই মহিলাকে। মঙ্গলবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক রুম্পাকে ১২ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। রুম্পার মেয়েকে আদালতের নির্দেশে মায়ের সঙ্গেই রাখা হয়েছে।

এই ঘরেই খুন হয়েছেন কল্যাণীদেবী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

কিন্তু কেন শাশুড়ির উপরে এমন আক্রোশ রুম্পার?

বছর তিনেক আগে নদিয়ার মাজদিয়ার বাসিন্দা রুম্পার সঙ্গে বিয়ে হয় পার্থর। শাশুড়ি-বৌমার সম্পর্ক শুরু থেকেই খুব মসৃণ ছিল না, সে কথা বিলক্ষণ জানতেন পাড়া-পড়শিরা। বাড়ি থেকে প্রায়ই চিৎকার-চেঁচামিচির আওয়াজ পেতেন তাঁরা। কিন্তু পাড়ায় সকলের সঙ্গে মেলামেশা ছিল দে কর্মকার বাড়ির লোকজনের। পার্থবাবু পেশায় আইনজীবী। সম্ভ্রান্ত পরিবারের নিজস্ব কাজিয়ায় কেউ জড়াতে চাননি। কিন্তু তা বলে খুনোখুনি, ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না বসাকপাড়ার লোকজনের।

খুনের ঘটনা স্বীকার করতে অবশ্য দ্বিধা নেই রুম্পার। দু’বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে আদালতের পথে বললেন, ‘‘যা করেছি, ঠিক করেছি। শাশুড়ি নানা ভাবে অত্যাচার করত। মেয়ে সন্তান হওয়ার পরে তাকেও পছন্দ করত না। আমাকে বার বার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হত।’’

তা বলে খুন করবেন? রুম্পার স্পষ্ট জবাব, ‘‘আমার কোনও আফসোস নেই। বরং স্বস্তি পেয়েছি।’’ রুম্পা পুলিশকে জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকেই নানা কারণে তাঁর উপর নির্যাতন চালাতেন কল্যাণীদেবী। স্বামী পার্থবাবুও স্ত্রীর কথায় কান দিতেন না। পার্থবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘আমার মা এমন কিছু করতেন না। স্ত্রী-ই বরং মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করত। অত্যাচার করত।’’

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, দীর্ঘ দিন জমে থাকা রাগের বশেই খুন। ঝগড়াঝাটির সময়ে রান্নাঘর থেকে ছুরি এনে শাশুড়িকে আক্রমণ করেছিলেন রুম্পা, অনুমান তদন্তকারীদের। সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাটির পুনর্নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangaon Murder বনগাঁ খুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE