চলছে ভাদুগান। —নিজস্ব চিত্র।
ভাদ্রমাস এলেই ভাদুগানের দল নিয়ে বেরিয়ে পড়া রেওয়াজ এ গ্রামের। তবে আগে যেমন ভাদুর জীবনের সুখদুঃখের কথা বলা হতো গানে, এখন তা বদলে গিয়েছে সমাজ সচেতনতার কথায়। তবে ভাদ্র মাসের শেষ দু’দিনে ভাদুবেশে শিশুশিল্পীদের নাচ আর গান শুনতে উৎসাহে ভাটা পড়েনি এতটুকুও।
এ বার ভাদ্র মাসের সংক্রান্তির আগে বেরিয়ে পড়েছে কোশিগ্রামের ওই ভাদুদল। দু’দিন ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভাদুগানে সাধারণ মানুষকে সচেতন করছেন দলের ১২ সদস্য। এঁরা সকলেই শ্রমজীবী। এক জন দলপতিও রয়েছেন। তাঁরাই জানান, উৎসব শেষে সচেতনতার প্রচারে সরকারি, বেসরকারি মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন তাঁরা। বর্ধমানের বিভিন্ন ব্লকে, মহকুমা শহরে, বর্ধমান-দুর্গাপুর-আসানসোল-কাটোয়ার মেলা বা অনুষ্ঠানে ভাদুগান গান। ভাদুগানের দলপতি ঝন্টু মাঝি বলেন, ‘‘পূর্বপুরুষরা ভাদুর জীবনের সুখদুঃখের কথা গানের মাধ্যমে বলতে গ্রামেগঞ্জে দল নিয়ে যেতেন। কিন্তু বর্তমানে আমরা নানা সামাজিক দিক নিয়ে গান সাজাই। যেমন ‘১৮ বছরের মেয়ে ২১ বছরের ছেলে হলে তার নীচে কেউ দিও না বিয়ে’’। এ ছাড়া গর্ভবতীদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া, বর্ষাকালে ডায়েরিয়ার প্রকোপ, জন্মমৃত্যুর সার্টিফিকেট নেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে গান বেঁধে উৎসবের দিনগুলিতে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াই।’’ তাঁদের দাবি, এ সব গানে দর্শক ও শ্রোতারা যথেষ্ট উৎসাহ দেখান।
ভাদু গবেষক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লোকগানে সমাজ সংস্কারের বিষয় প্রচারের ক্ষেত্রে অনেক শক্তিশালী।’’ ভাদু রচনাকার তপন চট্টোপাধ্যায় জানান, গ্রামেগঞ্জে ভাদুর দল আর বেঁচে নেই। যাঁরা আছেন, তাঁরা সমাজের অন্ধকার দিকগুলি নিয়ে রচনা নিতে আসেন। এ ভাবেই ভাদুগানের আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী ইত্যাদি সরকারি প্রকল্পের ঘোষণাও গানের মাধ্যমে করা হয়।’’ উৎসবের রীতি মেনে ভাদু পুজো করে গঙ্গায় ভাদু বিসর্জন দিয়ে শেষ হয় উৎসব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy