Advertisement
E-Paper

ঝাউবনে গামছাধারী হানাদার

আটপৌরে শাড়ি পরা সাধারণ পরিবারের বধূ। দাঁড়িয়ে আছেন সমুদ্রের তীর-ঘেঁষা ঝাউবনের সামনে। হাতে একটা গামছা। হয়তো বা কোনও কাজে এসেছেন।

শান্তনু বেরা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ০১:২৩
যুগলবন্দি: চোরা কাঠুরে এবং সেই মহিলা। নিজস্ব চিত্র

যুগলবন্দি: চোরা কাঠুরে এবং সেই মহিলা। নিজস্ব চিত্র

আটপৌরে শাড়ি পরা সাধারণ পরিবারের বধূ। দাঁড়িয়ে আছেন সমুদ্রের তীর-ঘেঁষা ঝাউবনের সামনে। হাতে একটা গামছা। হয়তো বা কোনও কাজে এসেছেন।

কী কাজ?

ওই গামছা নেড়ে সঙ্কেত পাঠানো।

বনের ভিতরে মুখে গামছা জড়িয়ে অক্লান্ত ভাবে গাছ কাটছে কয়েকজন যুবক। স্থানীয় বা বহিরাগত কোনও মানুষ বা বন পুলিশকে আসতে দেখলেই ওই মহিলা ইশারা করছেন। গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ছে চোরা কাঠুরের দল। তারপর সুযোগ বুঝে কাটা গাছ টেনে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছেন ওই মহিলা। তিনি একা নন, স্থানীয় সূত্রে খবর পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি উপকূল এলাকার দরিদ্র পরিবারে বধূদের এ ভাবেই কাঠ চোরাচালানের কাজে লাগাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।

বন বাঁচাতে এই খেজুরিতেই ঘটা করে পালিত হয়ে গেল ‘বন বান্ধব উৎসব’। আর ঠিক তখনই উপকূল এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আন্তঃরাজ্য চোরাই কাঠ পাচার চক্র। তাদের দৌরাত্ম্যে ক্রমশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে সমুদ্র উপকূলের ঝাউ জঙ্গল।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রীতিমতো দল বেঁধে চোরা কারবারিরা উপকূলের জঙ্গলগুলোতে অভিযান চালায়। সঙ্গে থাকে স্থানীয় ‘লিঙ্ক ম্যান’। দ্রুত গাছ কাটতে এদের জুড়ি মেলা ভার। চারিদিকে নজর রাখা, ‘বিশেষ সঙ্কেত’ দেখানোর জন্য স্থানীয় মহিলাদেরও ব্যবহার করা হয়। গাছ কাটার আগে জঙ্গল দেখিয়ে দরদাম হয়ে যায়। গাছ কেটে তা রাখা হয় ওই মহিলাদের ঝুপড়িতে। রাতের অন্ধকারে চলে পাচার। এই কাঠ চলে যায় ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, শিলিগুড়ি এমনকী বাংলাদেশেও।

পূর্ব উপকূলের শৌলা, বাগুড়ান জলপাই, হরিপুর, জুনপুট, ভোগপুর, বাকিপুট এলাকার জঙ্গল ক্রমশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, সমুদ্র বাঁধের ভাঙন প্রতিরোধে এই উপকূলীয় জঙ্গলের গুরুত্ব অনেকখানি। তাই সরকারি এলাকায় ঝাউ জঙ্গল তৈরি করেছে বন দফতর। চোরা কাঠ শিকারিদের দাপটে তা এখন বিপন্ন। আতঙ্কে বাসিন্দারা। সমুদ্র বাঁধ ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। হরিপুরের প্রকাশ ঘোড়াই এর কথায়, “ছোটবেলা কত গাছ দেখতাম। এখন জঙ্গল অনেক ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। ভয় হয়, সমুদ্র যদি গ্রামে ঢুকে আসে!’’

বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারির অভাবও এর জন্য দায়ী। কয়েক মাস আগে স্থানীয়রা আটক করেছিলেন চোরাই কাঠ বোঝাই গাড়ি। লাভ হয়নি। বাসিন্দাদের দাবি, বন দফতর সেই কাঠ বোঝাই গাড়ি নিয়ে যায়। পরদিন গাড়ি ছেড়েও দেয়।

কাঠ পাচার রুখতে বন দফতর ‘উপকূলীয় বন রক্ষা কমিটি’ গড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ করেছে ‘ওয়াচ ম্যান’। কিন্তু সে ব্যবস্থা যে কতটা ঠুঁটো, তা বোঝা গেল এক ‘ওয়াচ ম্যান’-এর কথায়, “একা এতবড় এলাকা নজরে রাখা খুব কঠিন। তা ছাড়া, স্থানীয় লোকের মদত রয়েছে। আমরা কিছু বলতে গেলে হয়তো মেরেই ফেলবে। আমি একা কী করব?’’

জলপথ, সড়ক পথের সুবিধা, স্থানীয়দের মদত, জঙ্গলে লুকোনোর সুযোগ— সব মিলিয়ে উপকূলের এই এলাকা দুষ্কৃতীদের স্বর্গ রাজ্য হয়ে উঠছে। জুনপুটে উপকূল থানা গড়েও কাঠ পাচার রোখা যায়নি।

অথচ বন দফতর নির্বিকার। জেলা বন দফতরের আধিকারিক স্বাগতা দাস বলেন, ‘‘এখন পাচার হচ্ছে কিনা জানি না। যদি হয় তবে ব্যবস্থা নেব।’’

Trees Cut Theft Jungle
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy