সাংবাদিক সম্মেলনে টিএমসিপির নেতারা। —নিজস্ব চিত্র
দলীয় নেতাদের গোষ্ঠীকোন্দল, মারমুখী ছাত্র রাজনীতিতে কোনও দিশা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত জেলা নেতৃত্বের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠালেন জঙ্গিপুরের কলেজ ইউনিট-সহ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ২২ জন পদাধিকারী।
বুধবার দুপুরে জঙ্গিপুর কলেজে রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন তাঁরা। পদত্যাগ করতে চেয়ে আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের জেলা ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খাইরুল আলম রনি, রঘুনাথগঞ্জ ১ ও ২ ব্লক সভাপতি রাজকুমার মির্জা ও নুরুজ্জামান অপু, দুই কার্যকরী সভাপতি, জঙ্গিপুর শহর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি ও কার্যকরী সভাপতি, জঙ্গিপুর কলেজ ইউনিটের সভাপতি সামিম শেখ-সহ অনেকেই এখন পদত্যাগ করে আপাতত কলেজের পঠনপাঠনেই মন দিতে চাইছেন।
একের পর এক ঘটনার ধাক্কায় রাজ্য জুড়ে যখন শাসক দলের হাল কার্যত বেহাল। অস্বস্তি লুকোতে না পেরে নেতৃত্ব দিশাহীন। তখন শাসক দলের জঙ্গিপুরের ছাত্র সংগঠনের এমন পদক্ষেপে অন্য মানে খুঁজে পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল। কোনও রাখঢাক না করে জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খাইরুল আলম রনি বলছেন, “জঙ্গিপুর কলেজে এক বছর ধরে বহু কষ্ট করে ছাত্র সংগঠন তৈরি করেছি। এর জন্য বামেদের সঙ্গে প্রচণ্ড লড়াই করতে হয়েছে। মার খেয়েছি। এখনও একাধিক মামলা ঝুলছে আমাদের অনেকের উপরেই।”
তিনি জানান, ছাত্র সংঘর্ষে জখম হয়ে হাসপাতালে কর্মীরা ভর্তি হলে এসএফআইয়ের কর্মীদের দেখতে সর্বস্তরের বাম নেতারা হাসপাতালে ছুটে এসে ওদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু দু’একজন ছাড়া হাসপাতালে দেখা মেলেনি তাঁদের দলের কোনও নেতার। তাঁরা সবসময় পদ আর ক্ষমতার পিছনে ছুটছেন। দলে ঘন ঘন নেতা বদলে যাচ্ছে আর নতুন নতুন কমিটি তৈরি হচ্ছে। অন্য দিকে এসএফআইয়ের পিছনে দাঁড়িয়েছে বামেদের মূল সংগঠন। ফলে লড়তে গিয়ে হোঁচট খেতে হচ্ছে পদে পদে।
ওই নেতারা জানাচ্ছেন, ছাত্র রাজনীতি ক্রমশ যে ভাবে মারমুখী হয়ে উঠছে তাতে সুষ্ঠু ভাবে রাজনীতি করার পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সংগঠন ভিন্ন বলে কলেজে পড়তে এসে বন্ধুর হাতে বন্ধুদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে। সারাদিন পুলিশ পাহারা বসিয়ে জঙ্গিপুর কলেজে ক্লাস করতে হচ্ছে। এটা একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ হতে পারে না। এ সব ভেবেই তাঁদের এই গণ-পদত্যাগপত্র।
জঙ্গিপুর শহর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি ওয়াসিম রেজা বলেন, “তৃণমূলে এক নেতা অন্য নেতার মুখ পর্যন্ত দেখেন না। একজনের কাছে সাহায্যের জন্য গেলে অন্যজন দরজা বন্ধ করে দেন। দলের সব নেতাই নিজেদের ইগো নিয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়ছেন। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে দলের নেতাদের কোনও সমর্থন পাইনি। এই অবস্থায় দলের ছাত্র রাজনীতি করতে এসে আমরা হতাশ। আমরা এ জিনিস চাইনি। চেয়েছিলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে প্রতিবাদী ছাত্র রাজনীতি করতে। কিন্তু তা আর সম্ভব হচ্ছে না দলেরই কিছু নেতার জন্য। তাই এমন সিদ্ধান্ত।”
আরও একধাপ এগিয়ে জঙ্গিপুর কলেজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পর্যবেক্ষক সাবির আলি জানান, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পাশে থেকে তাঁদের জন্য কাজ করতে হলে যে রাজনীতি করতেই হবে তার তো কোনও মানে নেই। ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক বন্ধুর সঙ্গে তিক্ততায় জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা এখন সে সব ভুলে গিয়ে বন্ধু হিসেবেই ফের তাদের কাছে পেতে চাই। পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা অনেক ভেবেছি। সহকর্মীদের সঙ্গে বহু আলোচনা করেছি। বুধবারই আমরা পদত্যাগপত্র টিএমসিপি-র জেলা সভাপতির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। প্রয়োজনে সংগঠন ছেড়ে দিতেও রাজি আছি। কিন্তু এ ভাবে রাজনীতি করা যাচ্ছে না।”
জঙ্গিপুরে তৃণমূল ছাত্রপরিষদ নেতাদের এমন সিদ্ধান্তে দল কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেও তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা জেলা শিক্ষা সেলের সভাপতি শেখ ফুরকান বলছেন, “ওই ছাত্র নেতাদের ক্ষোভ যে খুব একটা অসঙ্গত তা বলব না। দলের পদ আঁকড়ে থাকা কিছু নেতার জন্য দলের ক্ষতি তো হচ্ছেই। বিপদে ছাত্রদের পাশে না দাঁড়ালে তাঁরা সংগঠন করবেন কার ভরসায়? জঙ্গিপুর কলেজে ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। এমন ঘটনায় সংগঠন যে হোঁচট খেল তা বলাই বাহুল্য।”
আর তৃণমূলের জেলা ছাত্র পরিষদ সভাপতি অরিন্দম ঘোষ অবশ্য বলেন, “এই পদত্যাগের বিষয়ে জঙ্গিপুরের ওই ছাত্র নেতারা আমাকে কেউ কিছুই জানাননি। আমি তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ক্ষোভের কারণ জানার চেষ্টা করব। তার আগে কোনও মন্তব্য করব না।”
যা শুনে এক ছাত্রনেতার তীর্যক মন্তব্য, “এই ঘুমটাই যদি আগে ভাঙত! এখন ক্ষোভ নিয়ে আর কথা না বাড়ানোই ভাল। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এখন সংগঠন ছাড়াটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy