Advertisement
E-Paper

বিভ্রাট থেকে বাঁচিয়ে দিল পুরুলিয়ার বিদ্যুৎ

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিইএসসি-র বজবজ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হঠাৎই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে কার্যত বিপর্যয় নেমে আসে কলকাতা জুড়ে। বজবজের ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, মধ্য কলকাতার সর্বত্র বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১০
অন্ধকার প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ট্রেন। নিজস্ব চিত্র

অন্ধকার প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ট্রেন। নিজস্ব চিত্র

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিইএসসি-র বজবজ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হঠাৎই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে কার্যত বিপর্যয় নেমে আসে কলকাতা জুড়ে। বজবজের ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, মধ্য কলকাতার সর্বত্র বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। সুড়ঙ্গের মধ্যে আটকে পড়ে মেট্রো রেল। বিপদের মধ্যে পড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। অফিস যাওয়ার সময় এই ঘটনায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় হাজার-হাজার মেট্রো যাত্রীকে। সকাল ৯টা ৫৩মিনিটে এই ঘটনা ঘটার পর জরুরি কালীন ভিত্তিতে রাজ্যের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে পরিস্থিতির সামাল দেয় সিইএসসি-র বিদ্যুৎ কর্তারা। সকাল সাড়ে ১০টায় কলকাতার সর্বত্র বিদ্যুৎ পরিষেবা ফের স্বাভাবিক হয়।

এই ঘটনায় উদ্বিঘ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন দুপুরে নবান্নে বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়-সহ রাজ্য এবং সিইএসসি-র বিদ্যুৎ কর্তাদের জরুরি বৈঠকে ডাকেন। ওই বৈঠকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পরীক্ষার সময় কোনও ভাবেই যাতে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মতো ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কেন এই ঘটনা ঘটল সিইএসসি-র কর্তাদের কাছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্টও নেন মুখ্যমন্ত্রী। বিদ্যুৎ পরিষেবা যাতে কোনও ভাবেই বিঘ্ন না ঘটে তার জন্য তিনি রাজ্য এবং সিইএসসি-র কর্তাদের সব সময় প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।

বজবজ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে সিইএসসি-র সব থেকে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ২৫০ মেগাওয়াট করে তিনটি ইউনিট থেকে এখানে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এ ছাড়াও সংস্থার মেটিয়াবুরুজ ও টিটাগড়ে আরও দু’টি ছোট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সিইএসসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ দিন সকাল থেকে বজবজের ইউনিটগুলি ঠিকঠাকই চলছিল। প্রয়োজন ছিল না বলে মেটিয়াবুরুজ ও টিটাগড়ের উৎপাদন বন্ধ রাখা ছিল। যে সময় ঘটনাটি ঘটে ওই সময় কলকাতা-সহ আশেপাশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১১০০ মেগাওয়াটের মতো। ফলে বজবজ থেকে ৭০০ মেগাওয়াটের পাশাপাশি তাদের হলদিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাকি বিদ্যুৎ নিয়ে চাহিদা মিটিয়ে দেওয়া যাচ্ছিল। সংস্থার দাবি, ইউনিটগুলিতে কোনও যান্ত্রিক গোলোযোগ হয়নি। সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনও ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ইউনিটগুলির সুরক্ষা বলয় (প্রোটেকশন সিস্টেম) উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।

সংস্থার এক কর্তার যুক্তি, সরবরাহ লাইনে হঠাৎ ৭০০ মেগাওয়াট ঘাটতি হয়ে যাওয়ার কারণেই আচমকা পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে যায়। তবে তার সাত মিনিট পর থেকেই ধাপে ধাপে সাড়ে ১০টার মধ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যায় বলে ওই কর্তা দাবি করেছেন।

কী ভাবে ঘাটতি মেটানো হল?

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ নিয়েই এ দিন রক্ষা পায় কলকাতা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ৭০০ মেগাওয়াট ঘাটতি মেটানো বেশ কঠিন ব্যাপার বলেই বিদ্যুৎ কর্তারা জানাচ্ছেন। কিন্তু ৯০০ মেগাওয়াটের পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ বিদ্যুৎ প্রকল্পই এ দিন ‘ভেল্কি’ দেখিয়েছে বলে সূত্রের খবর। বিদ্যুৎ ভবনের নির্দেশ পেয়ে পুরুলিয়ার উৎপাদন দ্রুত বাড়ানো হয়। রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির বিদ্যুতের পাশাপাশি পুরুলিয়া থেকে সব থেকে বেশি বিদ্যুৎ নিয়ে এসে সিইএসসি-কে দেওয়া হয়। দুপুর পর্যন্ত যা খবর, রাজ্যের কাছ থেকে সিইএসসি ৭০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ নিয়েছে। বাকি বিদ্যুৎ তারা হলদিয়া থেকে নিয়ে এসেই কলকাতার চাহিদা মিটিয়েছে।

রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এ দিন বিপর্যয়ের সময় সিইএসসি তাঁদের কাছ থেকে যা বিদ্যুৎ চেয়েছে, তা-ই দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও যে কোনও প্রয়োজনে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন আরও সতর্ক থাকতে হবে, আমরা আপ্রাণ সেই চেষ্টাই করব।’’ বিপদের সময় রাজ্যের সহযোগিতার জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সিইএসসি কর্তৃপক্ষ।

চলতি সপ্তাহেই সিইএসসি জানিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময় যাতে কোনও রকম বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য তারা সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কিন্তু তার পরেও কেন এই ঘটনা ঘটল তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সিইএসসি-র এক কর্তা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থায় তারা দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা সংস্থা। তবে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে যান্ত্রিক ত্রুটির সমস্যা যে কোনও সময় হতে পারে। এ দিন সেই ঘটনাই ঘটেছে।

Loadshedding
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy