Advertisement
E-Paper

হঠাৎ পুড়ে ছাই ৩০ বাড়ি

দুপুরের গরম হাওয়ায় পাক খেয়ে খেয়ে চারপাশে কালো ছাই উড়ছে। গোটা সাঁওতাল মহল্লাজুড়েই পোড়া গন্ধ। বাতাসে ভিটে-মাটি পোড়ার শোক।ভিটে আর কই! ছাইয়ের গাদায় এবড়ো-খেবড়ো পোড়া দেওয়াল দাঁড়িয়ে আছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৩
শেষ মুহূর্তের চেষ্টা।  বৃহস্পতিবার রাজনগরের আগয়াবান্দি গ্রামে ছবি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

শেষ মুহূর্তের চেষ্টা। বৃহস্পতিবার রাজনগরের আগয়াবান্দি গ্রামে ছবি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

দুপুরের গরম হাওয়ায় পাক খেয়ে খেয়ে চারপাশে কালো ছাই উড়ছে। গোটা সাঁওতাল মহল্লাজুড়েই পোড়া গন্ধ। বাতাসে ভিটে-মাটি পোড়ার শোক।

ভিটে আর কই! ছাইয়ের গাদায় এবড়ো-খেবড়ো পোড়া দেওয়াল দাঁড়িয়ে আছে। পোড়া দেওয়ালে মাঝে বসেই ছাইয়েই গাদা ঘাঁটতে ঘাঁটতে এক নাগাড়ে কাঁদছিলেন নন্দলাল সরেন, সোমনাথ হাঁসদা, সনৎ বাস্কিরা! পল্লির কোণের দিকে একটি ধানের পালুই থেকে আগুন ছড়িয়েছিল। একটু আগে সেই আগুনেই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে তাঁদের ঘর। গোটা সাঁওতালপল্লির ৩০টি বাড়ি! বৃহস্পতিবার বেলা ১টা নাগাদ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে রাজনগরের আগয়াবান্দি গ্রামে।

দমকলের দু’টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও বাঁচানো যায়নি বাড়িগুলিকে। চাল-ধান, টাকা-পয়সা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, বই-খাতা সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে, জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন, বিডিও দীনেশ মিশ্র, বিপর্যয় মোকবিলা আধিকারিক শ্যামশিস প্রসাদ, ওসি রিলিফ দেবদুলাল পাত্র, রাজনগর থানার ওসি তণ্ময় ঘোষেরা। এ দিন বিকাল তিনটে নাগাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, আগুন তখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। চারদিকে কান্নার আওয়াজ আর পোড়া গন্ধ। একাধিক বাড়ি ও খড়ের পালুইয়ের আনাচে কানাচে আগুন জ্বলছে। তা নেভানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন দমকল কর্মীরা। ওই পাড়ার কাছে থাকা একটি পুকুরের জল কমে এসেছে। কিন্তু যদি কোথাও আগুন থেকে থাকে সমানে খুঁজে দেখেছেন দমকলবাহিনীর কর্মী ও বাসিন্দারা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, রাজনগরের ভবানীপুর পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে শুধু আদিবাসী পরিবার রয়েছে ৪০টি। শ্রমজীবী মানুষের বেশিরভাগই কাজে বেরিয়েছিলেন। তাঁদের গ্রামে আগুন লেগেছে খবর পেয়ে দৌড়ে আসতে না আসতেই আধিকাংশ বাড়িতে আগুন ধরে যায়। মোট ৩০টি বাড়ি পুড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজনগরের বিডিও দীনেশ মিশ্র। একই কথা জানিয়েছে দমকল। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, কেউ ইটভাটা, কেউ ধান ঝড়ানোর কাজ, কেউ বা গরু চরাতে বা দিন মজুরী কাজে বাইরে ছিলেন। এ দিন রাজনগরের হাট থাকায় সেখানেও গিয়েছিলেন কিছু মানুষ। যে দু’চারজন গ্রামে ছিলেন, তাঁরা বলছেন গ্রামের পশ্চিমদিকের একটা খড়ের পালুইয়ে হঠাৎ-ই আগুন ধরে। দেখতে দেখতে আগুনের গ্রাসে চলে আসতে থাকে একের পর এক বাড়িতে। সমস্যা আরও বেড়ে যায় লোকজন না থাকায়। ছড়িয়ে পড়ে সোমনাথ হাঁসদা, বাবুশ্বর সরেন, প্রাণেশ্বর মুর্মু, সুরধ্বনি হাঁসদা— একের পর এক পড়শি বাড়িতে।

যে পালুইয়ে আগুন লেগেছিল তার ঠিক পাশের বাড়ির বাসিন্দা সনৎ বাস্কী এ দিন বলেন, “দিনমজুরির কাজ থেকে বাড়ি ফিরে সবে পুকুরে স্নান করতে গিয়েছি। এসে দেখি দাউ দাউ জ্বলছে বাড়ি। এত তাড়াতাড়ি আগুন ছড়িয়ে পড়ল যে বাড়িতে থাকা একটা জিনিসও বাঁচাতে পারিনি। আমাদের সব শেষ।” পড়শি সনদী হাঁসদা বাড়িতে ছিলেন না। আত্মীয় বিয়োগ হয়েছে, তাই কাছের মহিষাগ্রামে গিয়েছিলেন স্ব-পরিবারে। তিনি বলেন, ‘‘খবর পেয়েই ফিরে আসতে গিয়ে দেখি আমাদের বাড়ি জ্বলছে। এত কষ্ট করে করা বাড়ি জ্বলতে দেখে আর পা চলছিল না। চোখের সামনে সব শেষ! বাড়িতে এতগুলো লোক, কোথায় দাঁড়াব।’’

বাড়ি পুড়ে ছাই। তার উপর বছর পাঁচেকের ছেলেটা কোথায় চলে গিয়েছে। মাথায় হাত নন্দলাল সরেনের। স্ত্রী ছেলের খোঁজে হন্য হয়ে খুঁজছেন। পড়শিদের একজন বললেন, ‘‘রাতে আগুন লাগলে গবাদি পশুগুলো পুড়ে মরত। দিনের বেলায় হওয়ায় বেঁচেছে।’’

বিডিও বলেন, ‘‘আপাতত এতগুলি মানুষের জন্য মাথার উপর ত্রিপল কম্বল এবং সকলের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাধ্যমতো ত্রানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেলাশাসক জানেন। দু’টি স্কুল রয়েছে। রাতে সেখানেই রাখার ব্যবস্থা হবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলিকে।’’ তিনি জানান, শুক্রবার থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গ্রাম থেকে পালা করে পরিবার গুলিকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা হবে।

Burned Houses
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy