Advertisement
E-Paper

বাঘ, হরিণের মডেলে সাজছে সার্কিট হাউস

শনিবার সকালে ওই সব মডেল সার্কিট হাউসে নিয়ে আসতে দেখে অনেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন। মডেলগুলির পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলার হিড়কও পড়ে যায়।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৫১
প্রস্তুতি: সার্কিট হাউসে ফাইবার গ্লাসের বাঘ, হাতি, হরিণ। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

প্রস্তুতি: সার্কিট হাউসে ফাইবার গ্লাসের বাঘ, হাতি, হরিণ। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

শালগাছের আড়াল থেকে দাঁত খিঁচিয়ে তাক করে রয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। কয়েক পা এগোতেই দেখা গেল চিতাবাঘ ধূর্ত চোখে যেন ঝাঁপ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বুনো হাতিও হাজির। তবে এ সবে ভ্রুক্ষেপ নেই হরিণের। শিংয়ের বাহার নিয়ে নিশ্চিন্ত চোখে তাকিয়ে রয়েছে সে। পার্ক নয়, বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে কোনও ভাবে ঢুকে পড়তে পারলে শিশুদের মনোরঞ্জনের এমন ফাইবারের নজরকাড়া মডেল চোখে পড়বে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরের আগে এ ভাবেই সেজে উঠছে জেলার সার্কিট হাউস।

শনিবার সকালে ওই সব মডেল সার্কিট হাউসে নিয়ে আসতে দেখে অনেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন। মডেলগুলির পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলার হিড়কও পড়ে যায়। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে শহরের কানকাটার প্রবীণ বাসিন্দা আশিস দাস বলেন, “জেলাতে কোনও চিড়িয়াখানা নেই। বাড়ির বাচ্চাগুলোকে মাঝে মধ্যে সার্কিট হাউসে নিয়ে এসে অন্তত বাঘ, হাতির মডেলগুলো দেখাতে পারব।”

ভৈরবস্থানের বাসিন্দা তাপস মহান্তীর অবশ্য হাতির মডেলটি বেশ ছোট বলেই মনে হয়েছে। তাই নাক কুঁচকে তিনি বলেন, “সবই ঠিক আছে, কেবল হাতিটাই বড্ড ছোট হয়ে গিয়েছে। আরও একটু তাগড়া চেহারা হলে বুনো হাতি বলে মানাতো।’’ তবে ভিভিআইপিদের এই অতিথি নিবাসে সাধারণের অবাক প্রবেশ থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ী প্রশ্নও তুলেছেন কৌতূহলীদের কেউ কেউ।

শুধু জীব-জন্তুর মডেল বসানোই নয়। মুখ্যমন্ত্রীর সম্ভাব্য সফরকে কেন্দ্র করে অদ্যোপান্ত রঙের প্রলেপ পড়ছে সার্কিট হাউসের গায়ে। বাদ যাচ্ছে না ডাস্টবিনও। চলছে পুরোদমে আগাছা সাফাই, গ্রিল রং করার কাজ। বদলে ফেলা হচ্ছে ফুটপাথের ভেঙে যাওয়া টালি।

তবে এ সবকে ছাপিয়ে এ দিন সবার নজর ছিল মডেলগুলির দিকেই। কেউ মন্তব্য করছেন, দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলায় পড়েছিল সার্কিট হাউসটি। পরিবর্তনের পরেই নবরূপ পাচ্ছে ধাপে ধাপে। এত সবের মাঝে আবার উড়ে আসছে কটাক্ষও। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের একটি মডেলের পিছনের অংশ ফেটে গিয়েছে বসানোর আগেই। তা দেখে এক ব্যক্তি বলেন, “এখনও বসানোই হল না, তাতেই এই হাল। মুখ্যমন্ত্রী চলে গেলে মডেলগুলি আর খুঁজে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ।”

সার্কিট হাউস চত্বরে বাঁকুড়ার লোক সংস্কৃতির নানা মডেলও রয়েছে। সার্কিট হাউসে ঢোকার মুখেই দু’পাশে রয়েছে বাঁকুড়ার বিখ্যাত পোড়া মাটির ঘোড়ার সুউচ্চ মডেল। দেওয়ালে নানা পশুপাখির রঙিন চিত্রও নজর কাড়ছে।

তবে এখন সবার নজর আগন্তুকদের উপরেই। সার্কিট হাউসে রং বা সাফাইয়ের কাজের ফাঁকে শ্রমিকেরাও এসে মডেলগুলি দেখে যাচ্ছেন। তাই দেখে আবার চিৎকার জুড়ে দিচ্ছেন ঠিকাদারেরা। এক ঠিকাদার হাঁক ছাড়েন— “ওরে ভুলে যাস না, মঙ্গলবারের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে হবে। ফাঁকি মারলে চলবে না।” রং মিস্ত্রি সানি দাস, অক্ষয় দাস বলছেন, “গোটা ব্যাপারটায় বেশ নতুনত্ব রয়েছে। তাই কাজ সারতে সারতেই দেখেও আসছি।’’

এই অভিনবত্ব মুখ্যমন্ত্রীর কতটা দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা নিয়ে এখন বিস্তর আলোচনা প্রশাসনিক মহলেও। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “আগে দেখেছি, ম্যাডাম সকালে সার্কিট হাউস চত্বরে পায়চারী করেন। তাই তাঁর আসার আগেই আমরা সার্কিট হাউসের পরিবেশটাকে নতুনত্বের মোড়কে সাজাতে চাইছি।”

শুধু এই নয়, মুখ্যমন্ত্রী আসবেন বলে বাহারি ফুলেও সেজে উঠছে সার্কিট হাউস। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া উদ্যানপালন দফতর সার্কিট হাউস সাজানোর জন্য প্রায় সাড়ে সাতশো গাছের টব দিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে লিলি, ডালিয়া, অ্যান্থুরিয়ামের মতো বিভিন্ন ফুল। রয়েছে ঝাউ গাছও।

দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ফুল খুব প্রিয়। সেই জন্যই এই আয়োজন।’’

Bankura Circuit house Fiber Animals
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy