প্রতিদ্বন্দ্বী: বাঁ দিকে, জেলা পরিষদ আসনের তৃণমূল প্রার্থী (ইনসেটে) রিয়াশ্রী দাস। ডান দিকে, একমাত্র বিরোধী প্রার্থী রাজনগরের চিত্রলেখা রায় (ইনসেটে)। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের এক পাড়াতেই বাস। একে অপরের বন্ধুও বটে। ভোটের বাজারে রাজনগরের তাঁতিপাড়া গ্রামের এই দুই বধূ চিত্রলেখা রায় এবং রিয়াশ্রী দাসই এখন সবচেয়ে চর্চিত।
হবেনই তো। তৃণমূলের টিকিটে রিয়াশ্রী এবং বিজেপির টিকেটে চিত্রলেখা— জেলা পরিষদের একমাত্র যুযুধান প্রতিদ্বন্দ্বী। ৪২টি আসন বিশিষ্ট বীরভূম জেলা পরিষদে আর কোনও আসনেই প্রার্থী দিতে পারেনি বিরোধীরা। তাই এই দুই বধূর লড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে শাসক বিরোধী দুই শিবির।
ঝড়খণ্ডের রাঁচী শহরের মেয়ে চিত্রলেখা। মাধ্যমিক পাশ করে রাজনগরের তাঁতিপাড়ায় বধূ হয়ে এসেছেন। মধ্য ত্রিশের চিত্রলেখার দুই সন্তানের এক জন দশম ও এক জন একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। স্বামী অলোক রায়ের খাদি, তসরের ব্যবসা। এমন একটি পরিবার থেকে হঠাৎ জেলা পরিষেদের বিরোধী দলের একমাত্র প্রার্থী কী ভাবে?
চিত্রলেখা এবং তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু হেঁশেলের কাজেই আটকে ছিলেন না তিনি। একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও একটি সঙ্ঘ সমবায়ের সদস্য তিনি। রাজনীতির সঙ্গেও যোগ রয়েছে। বিজেপির প্রার্থী হলেও মাস কয়েক আগেও তৃণমূলের মহিলা সেলের অঞ্চল সভানেত্রী ছিলেন চিত্রলেখা। বছর তিনেক আগে থেকে তৃণমূল করতে শুরু করেন। অনুপ্রেরণা বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের বিদায়ী সদস্য অনুপ গড়াই। কিছু দিন আগে সদলবলে অনুববাবু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিত্রলেখাও সেই পথ ধরেন। বলছেন, ‘‘মানুষের সঙ্গে মিশতে, মানুষের জন্য কাজ করতে ভাল লাগে তাই নির্বাচনে দাঁড়ালাম।’’
অন্য দিকে, বাংলায় এমএ রিয়াশ্রীর মামারবাড়ি তাঁতিপাড়ায়। বিয়ে হয়েছে স্থানীয় অমিত দাসের সঙ্গে। খাদি, তসরের ব্যবসা এই পরিবারেও। চিত্রলেখা কিছুটা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও রিয়াশ্রীর তেমন যোগ ছিল না রাজনীতির সঙ্গে।
তবে রাজনীতির আঙিনায় পা রাখার সুপ্ত বাসনা ছিল রিয়াশ্রীর। অনুঘটকের কাজ করে শ্বশুরবাড়ির রাজনৈতিক পরিবেশ। শ্বশুর বিমান দাস তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের সমর্থক। তাই দলের তরফে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব এলে না করেননি চিত্রলেখা। আট মাসের শিশুকন্যা রয়েছে রিয়াশ্রীর। এত ছোট্ট শিশু, তার সঙ্গে হেঁশেল সামলে কী করে মানুষের কাজে ঝাঁপাবেন? তৃণমূল জেলা পরিষদের প্রার্থী বলছেন, ‘‘প্রবাদটা শোনেননি বোধ হয়, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে।’’
দুটি পরিবারই দুই প্রার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছে। শুরু হয়েছে দেওয়াল লিখন। কী কী বিষয় তুলে মানুষের কাছে পৌঁছবেন তা ঠিক করে নিয়েছেন দুই বধূ। রিয়াশ্রী বলছেন, ‘‘প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু, সব গরিব মানুষের যেন তার সুবিধা পান, সে জন্য কাজ করতে চাই। রাজ্য সরকারের জনমুখী প্রকল্প কাজে লাগিয়ে বাল্যবিবাহের মতো ঘটনা কমাতে চাই।’’ আর চিত্রলেখা বলছেন, ‘‘উন্নয়ন হয়েছে আমাদের ব্লকে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে পিছিয়ে পড়া ব্লক ও ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যই কেন্দ্র থেকে প্রচুর টাকা এসেছে। রাজ্য ও কেন্দ্র, দুই সরকারের সৌজন্যে এই উন্নতি। একা রাজ্য সরকার কৃতিত্ব দাবি করতে পারে না। সে কথা জানাতে চাই মানুষেকে। তুলে ধরতে চাই শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্বের খামতিও।’’
নির্বাচনে জেতাকেই পাখির চোখ করছেন উভয়ে। লক্ষ্য মানুষের জন্য কাজ করা। তবে দু’জনেই বলছেন, ‘‘বিরোধিতা যতই থাক, বন্ধুত্ব এবং দুটি পরিবারের সম্পর্ককে নষ্ট হতে দেব না।’’ তবে বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে একটা ভয় কাজ করছে চিত্রলেখার। তিনি বলছেন, ‘‘রাজনগর ব্লকেই ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতের প্রতিটি স্তরে বিরোধীরা প্রার্থী দিয়েছেন। নির্বাচন পর্যন্ত সেই সৌজন্য বজায় থাকলে বাধিত হই। কারণ, সিউড়ি মহকুমাশাসকের কাছে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার মোটেও সুখের নয়। কী করে এক বিরোধী মনোনয়ন দিল, শাসকদলের লোকেরা হন্যে হয়ে খুঁজেছিল আমায়। চিনতে পারলে কী হত জানি না।’’
আশঙ্কা কী সত্যি হবে, জবাব দেবে সময়ই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy