Advertisement
E-Paper

নভেম্বরেই শীতে কাঁপছে পুরুলিয়া

 ঝুপ করে ঠান্ডা পড়ে গেল জেলায়। মাঘের শীতকে ভারতচন্দ্র তুলনা করেছিলেন বাঘের বিক্রমের সঙ্গে। অগ্রহায়ণেই এ বার সেটা টের পেতে বসেছেন পুরুলিয়ার মানুষজন। এত তাড়াতাড়ি এ রকম জাঁকিয়ে ঠান্ডা শেষ কবে পড়েছে, মনে করতে পারছেন না অনেকেই।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৪
ওম: শীত এসেছে শহরে। স্কুলের পথে পুরুলিয়ার খুদেরা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

ওম: শীত এসেছে শহরে। স্কুলের পথে পুরুলিয়ার খুদেরা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

ঝুপ করে ঠান্ডা পড়ে গেল জেলায়। মাঘের শীতকে ভারতচন্দ্র তুলনা করেছিলেন বাঘের বিক্রমের সঙ্গে। অগ্রহায়ণেই এ বার সেটা টের পেতে বসেছেন পুরুলিয়ার মানুষজন। এত তাড়াতাড়ি এ রকম জাঁকিয়ে ঠান্ডা শেষ কবে পড়েছে, মনে করতে পারছেন না অনেকেই।

ব্যাপারটা ক’দিন আগে থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। একটা মোটা চাদর ভাল করে জড়িয়েও শীতকাতুরে হয়ে মানুষজনের স্বস্তি হচ্ছিল না। এই সপ্তাহের গোড়ায় বোঝা গেল, আমলকি বনের বুক দুরুদুরু সত্যি করে এসে পড়েছে শীত।

কিন্তু শীত বললেই তো হল না! বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামলে তবে বলা চলে ঠান্ডা পড়েছে। নভেম্বরের ১১ তারিখ থেকেই ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চৌকাঠে এসে থমকে ছিল পারদ, টানা চার দিন। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, নিম্নচাপ কেটে গেলে শীত পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হল-ও সেটাই।

মঙ্গলবার থেকে নিম্নচাপের মেঘ পুরোদস্তুর কেটে যেতেই পারদ আবার নিম্নগামী হয়। মঙ্গলবার তাপমাত্রা নেমেছিল ১৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। বুধবার ১২ ডিগ্রি। বৃহস্পতিবার ১০ ডিগ্রি। শুক্রবার চলতি মরসুমের শীতলতম দিন কাটিয়েছে পুরুলিয়া। তাপমাত্রা নেমেছিল ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। শনিবার অবশ্য সেটা আবার ১০-এ ফিরেছে।

বান্দোয়ান থেকে বাঘমুণ্ডি, হুড়া থেকে পাড়া— সর্বত্রই আলোচনা, শেষ কবে এত তাড়াতাড়ি ঠান্ডা পড়েছিল? পুরুলিয়া শহরের আমডিহা এলাকার এক বধূর বক্তব্য, এই সপ্তাহের গোড়ার দিকেই ভাবনা হচ্ছিল শীত আদৌ পড়বে কি না তা নিয়ে। ভাবতে না ভাবতেই হাড় কাঁপিয়ে শীত তার উপস্থিতি জানান দিল। বান্দোয়ানের এক বধূ বলেন, ‘‘সবে লেপ-তোষক বের করার কথা ভাবছি। কিন্তু বের করার আগেই শীত পড়ে গেল।’’

কাকভোরে রুটে বাস নিয়ে বেরোতে হয় তপন কুম্ভকারকে। তিনি বলেন, ‘‘গত সপ্তাহেও সকালে যা যাত্রী হচ্ছিল, এখন সেটা চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে।’’ ওই বাসেরই চালক দেবেন্দ্রনাথ মাহাতো বলছেন, ‘‘আমাদেরও কি অত ভোরে লেপ কম্বল ছেড়ে বেরোতে ইচ্ছে করে? পেটের দায়!’’ সন্ধ্যের মেজাজটাও দুম করে গিয়েছে বদলে। বান্দোয়ান হাসপাতাল মোড়ে প্রণব করের চায়ের দোকান। প্রণব বলেন, ‘‘ক’দিন আগেও সন্ধ্যেটা জমজমাট হয়ে থাকত। ঠান্ডা পড়ার পরে সূর্য পাটে যেতেই সবাই ঘরমুখো হতে শুরু করছে।’’ গত বৃহস্পতিবার মেয়ের বিয়েতে অভ্যাগতদের জন্য একটা আগুন পোহানোর বন্দোবস্তও রেখেছিলেন পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা সুশীল খেমকা। আগুন ঘিরে যখন সাতপাক ঘুরছেন বর-কনে, অন্য আগুন ঘিরে তখন বিরাট জটলা।

শীতের পোশাক বিক্রেতাদের অবশ্য পোয়াবারো। প্রতি বছর শীতের গোড়ায় শহরের বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া এলাকায় তিব্বতি বাজার বসে। হরেক শীতপোশাকের পসরায় জমজমাট হয়ে ওঠে বিকিকিনি। বাজারের ব্যবসায়ী প্রশাঙ্ক সাঙ্গি বলেন, ‘‘এ বার বেচাকেনার শুরুটা ঢিমে তালে হয়েছিল। কয়েক দিন ধরে ভাল ভিড় হতে শুরু করেছে।’’ আরেক দোকানদার তেনজিং ছায়াং বলেন, ‘‘অনেক দিন হল শীতে পুরুলিয়ায় আসছি। এই সময়ে সচরাচর এতটা ঠান্ডা পড়ে না।’’ শহরের চাইবাসা রোডের বসন্ত খেড়িয়ার মতো স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও লক্ষ্মীলাভের আশায় খুশি।

পাড়ার রোয়াকে, চায়ের দোকানে সান্ধ্য আড্ডায় থাবা বসিয়েছে শীত। পুরুলিয়া শহরের এক যুবক আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘‘এত দিন সবাই কথায় কথায় আউড়েছে, শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা? এখন বই খুলে দেখি, ভাস্কর চক্রবর্তী এর পরের লাইনটাই লিখেছেন— ‘আমি তিন মাস ঘুমিয়ে থাকব’। আড্ডার সবাই দেখছি দু’টো ব্যাপারই আক্ষরিক মানেতে ধরে নিয়েছেন।’’

Winter Cold Weather Update
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy