Advertisement
E-Paper

অর্থাভাবে সুযোগ পাননি, শিলিগুড়ির শ্যুটারকে সাহায্য শহরেরই যুবকদের

গত জানুয়ারি মাসে কুমার সুরেন্দ্র সিংহ শ্যুটিং প্রতিযোগিতায় জুনিয়র বিভাগে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন শিলিগুড়ি কলেজের কলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী গুড়িয়া রায়। তবে নিজের শ্যুটিং রাইফেল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম না থাকায় আন্তর্জাতিক স্তরে তিনি ওই প্রতিযোগিতায় খেলতে পারেননি। একরাশ হতাশা নিয়ে দিল্লির কারনিসিং শ্যুটিং রেঞ্জ থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪২
নিজের পুরস্কার দেখাচ্ছেন শ্যুটার গুড়িয়া রায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

নিজের পুরস্কার দেখাচ্ছেন শ্যুটার গুড়িয়া রায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

গত জানুয়ারি মাসে কুমার সুরেন্দ্র সিংহ শ্যুটিং প্রতিযোগিতায় জুনিয়র বিভাগে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন শিলিগুড়ি কলেজের কলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী গুড়িয়া রায়। তবে নিজের শ্যুটিং রাইফেল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম না থাকায় আন্তর্জাতিক স্তরে তিনি ওই প্রতিযোগিতায় খেলতে পারেননি। একরাশ হতাশা নিয়ে দিল্লির কারনিসিং শ্যুটিং রেঞ্জ থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে। শিলিগুড়ির টিউমল পাড়ার ওই তরুণীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় মবার্ট হাই স্কুলের একদল প্রাক্তন ছাত্র। ১৯৯৩ সালে স্কুল থেকে পাশ করেছেন তাঁরা। রবিবার তাঁর হাতে ৪০ হাজার টাকার একটি চেক তুলে দিয়েছেন তাঁরা, যা দিয়ে জাতীয়, আন্তর্জাতিক স্তরের শ্যুটিং প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে জ্যাকেট, ট্রাউজার্স, জুতো-সহ অন্যান্য সরঞ্জাম কিনবেন ওই তরুণী।

তবে এখনও জোগাড় হয়নি নিজস্ব শ্যুটিং রাইফেল। আগামী ডিসেম্বরে দিল্লিতে ৫৮তম জাতীয় শ্যুটিং প্রতিযোগিতায় যোগ দিচ্ছে শিলিগুড়ির ওই জুনিয়র শ্যুটার।

নিয়ম মতো, নিজস্ব রাইফেল না থাকলে জাতীয় প্রতিযোগিতায় অন্য কারও রাইফেল নিয়ে যোগ দিতে পারেন প্রতিযোগীরা। দুঃস্থ পরিবারের ওই তরুণীর পক্ষে দুই লক্ষাধিক টাকা খরচ করে শ্যুটিং রাইফেল কেনা এখনও সম্ভব হয়নি। তাই জাতীয়স্তরের প্রতিযোগিতায় এখনও পর্যন্ত অন্য প্রতিযোগীদের কাছ থেকে রাইফেল ভাড়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে হচ্ছে তাকে। দেড় ঘন্টার ম্যাচের জন্য রাইফেলের ভাড়া চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে হলে নিজস্ব রাইফেল, অন্যান্য সরঞ্জাম থাকা বাধ্যতামূলক। তাই সুযোগ পেয়েও গত জানুয়ারিতে সুরেন্দ্র সিংহ শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বাদ পড়েন তিনি। তবে এ দিন মবার্ট হাই স্কুলের ওই প্রাক্তন ছাত্রদের দলটিকে পাশে পেয়ে তিনি আশাবাদী। গুড়িয়া জানান, সুরেন্দ্র সিংহ শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ফিরে আসার পর ফেব্রুয়ারিতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন গুড়িয়া। তাঁর দফতরেও একদিন গিয়েছিলেন তিনি। মন্ত্রী না থাকায় দেখা হয়নি। তাঁর দফতরে লিখিত আবেদন করে এসেছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “ওই খেলোয়াড় আমার সঙ্গে এখনও দেখা করেননি। বিস্তারিত কিছু জানা নেই। তাঁর সমস্যার ব্যাপারে খোঁজ নেব।”

গুড়িয়া জানান, কলেজে এনসিসি প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েই বছর দুয়েক আগে আন্তঃব্যাটেলিয়ান এনসিসি শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ দেন। সেখানে জুনিয়র বিভাগে চতুর্থ হওয়ার পর থেকেই সাফল্য আসতে থাকে। অথচ তাঁর শ্যুটিং রাইফেল বা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছিল না। বাবা দীননাথ রায় একটি বেসরকারি সংস্থার সাধারণ কর্মী। শুরুতে তিনি মেয়েকে উৎসাহ দিয়েছেন। অল্প খরচের মধ্যে যে সমস্ত সরঞ্জাম মেয়ের শ্যুটিংয়ের জন্য দরকার ছিল তা কিনেও দিয়েছেন। কিন্তু জাতীয়, আন্তর্জাতিক স্তরে যোগ দেওয়ার জন্য সরঞ্জাম কেনার মতো সামর্থ্য তাঁর নেই।

প্রথমবার আন্তঃব্যাটেলিয়নে চতুর্থ হওয়ায় সুযোগ মেলে এনসিসি’র ডিরেক্টর জেনারেল দলের হয়ে জুনিয়রদের জাতীয়স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার। ২০১২ সালে ওই প্রতিযোগিতায় ফের সাফল্য মেলে। ১১ নম্বর র্যাঙ্ক করেন ওই তরুণী। এক বছরের জন্য সেখানে কোচ ভগীরথ স্যামুই-এর কাছে প্রশিক্ষণের সুযোগও মিলেছিল। এর পর পুনেতে গত বছর প্রাক জাতীয় প্রতিযোগিতা ‘গান ফর গ্লোরি শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ ২১ নম্বর র্যাঙ্ক করেন। এর পর ওই বছরই উত্তরপ্রদেশে আন্তঃরাজ্য প্রতিযোগিতায় অতিথি খেলোয়াড় হয়ে যোগ দেন। অতিথি খেলোয়াড় হিসাবে যোগ্যতা অর্জন পর্বে উত্তীর্ণ হয়ে রাজ্যের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। তখনও অন্য প্রতিযোগীর রাইফেল ভাড়া করে অংশ নিতে হয়েছে তাঁকে। ওই বছর নভেম্বরে আসানসোলে প্রাক জাতীয় প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে ১৮ নম্বর র্যাঙ্ক করেন। ডিসেম্বরে জাতীয় প্রতিযোগিতায় ৫ নম্বর র্যাঙ্ক করেন। সুযোগ চলে আসে আন্তর্জাতিক স্তরে যাওয়া জন্য সুরেন্দ্র সিংহ শ্যুটিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার। কিন্তু নিজস্ব সরঞ্জাম না থাকায় প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যান তিনি।

রাজ্যের অপর প্রতিযোগী মাম্পি দাস স্পেনে জুনিয়র ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে যেতে পেরেছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে আটকে গিয়েছিল গুড়িয়ার যাওয়া। সমস্যার কথা জানতে পেরে গুড়িয়ার জন্য সচেষ্ট হন শিলিগুড়ি কলেজের শিক্ষক অজয় কুমরা সাই। তিনিই মবার্ট স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র রাম ছেত্রী, পলাশ ভৌমিক, নবীন গুপ্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রাম ছেত্রীরা বলেন, “গুড়িয়ার পাশে রয়েছি আমরা। এ বার জাতীয় প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে সুযোগ মিললে আমরা গুড়িয়ার জন্য শ্যুটিং রাইফেলের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হবেন। রাইফেল না থাকায় অনুশীলনও করা সম্ভব হয় না গুড়িয়ার পক্ষে। প্রতিযোগিতায় রাইফেল ধরে রাখার প্রস্তুতি বাড়িতে করতে হয় ইট হাতে নিয়ে।” গুড়িয়া বলেন, “সরঞ্জাম কেনার জন্য সাহায্য মেলায় উপকৃত হয়েছি। আশা করি, জাতীয় প্রতিযোগিতায় ভাল কিছু করতে পারব।”

lack of money shooter siliguri youths come forward for help
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy