Advertisement
E-Paper

মানিক সান্যাল প্রয়াত

কমিউনিস্ট নেতা হলেও সব দলের মধ্যেই মানিকবাবু যথেষ্ট ‘জনপ্রিয়’ ছিলেন। রাজ্যের বর্তমান বেশ কয়েক জন মন্ত্রীকেও মানিকবাবু ‘তুই’ বলেই সম্বোধন করতেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৭ ০২:৫৪
প্রয়াত: মানিক সান্যাল

প্রয়াত: মানিক সান্যাল

দীর্ঘ দিন রোগভোগের পরে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কলকাতার এক নার্সিংহোমে মারা গেলেন প্রবীণ সিপিএম নেতা মানিক সান্যাল। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। কমিউনিস্ট নেতা হলেও সব দলের মধ্যেই মানিকবাবু যথেষ্ট ‘জনপ্রিয়’ ছিলেন। রাজ্যের বর্তমান বেশ কয়েক জন মন্ত্রীকেও মানিকবাবু ‘তুই’ বলেই সম্বোধন করতেন।

পঞ্চাশের দশকে ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন তিনি। ১৯৫৩ সালে পার্টি সদস্য হন। ছাত্র আন্দোলনের পর কৃষক আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। সেখান থেকে চা বাগানের শ্রমিক আন্দোলনে। তিনি সিটুর চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতিও ছিলেন। এ ছাড়া সিটুর জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকের দায়িত্বও সামলান। দু’দফায় সাংসদ নির্বাচিত হন মানিক সান্যাল।

উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা সুবোধ সেনের মৃত্যুর পরে সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক হন মানিকবাবু। টানা প্রায় ২২ বছর সেই দায়িত্ব সামলান। শুক্রবার দুপুরে মানিক সান্যালের দেহ বিমানে জলপাইগুড়িতে আনা হয়। ডিবিসি রোডের পার্টি অফিসে শ্রদ্ধা জানানোর পরে রাতেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য বলেন, ‘‘মানিকবাবুর মৃত্যুতে জলপাইগুড়ি জেলার বাম আন্দোলনের একটা যুগের অবসান ঘটল।’’

গৌতম গুহ রায়ের সংযোজন: জলপাইগুড়ি জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির জেলা অফিসের নতুন ভবন তৈরি হয়। সেখানে জেলা সম্পাদকের বসার চেয়ারের পেছনে মার্ক্স নয়, পেল্লায় আকারের সাদাকালো যে ছবিটা টাঙানো হল, সেটি রবীন্দ্রনাথের।

এ এক ব্যতিক্রমী চিত্র। আর সেই ব্যতিক্রমের সামনে জেলা সম্পাদকের আসনে যিনি বসতেন, তিনি তখন সবার প্রিয় ‘মানিকদা’। এবং তিনি যে নিছক রাজনৈতিক ব্যক্তি নয়, সবার উপরে মানুষ সত্য এই কথাটি বারে বারে প্রমাণ করে গিয়েছেন।

তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শিক্ষক ছিলেন সুবোধ সেন। তাঁর ডাকেই চা শ্রমিকদের সংগঠন করতে গিয়েছিলেন ডুয়ার্সে। সেখানে প্রায় পাঁচ দশক ধরে মিশেছিলেন শ্রমিকদের সঙ্গে। হয়ে উঠেছিলেন শ্রমিকদের ‘বাপ-মা’।

দু’দশক আগেকার ঘটনা। রেড ব্যাঙ্ক চা বাগানে রাতের অন্ধকারে শ্রমিক লাইনে সশস্ত্র হানাদারির ঘটনা ঘটল, ১১ জন চা শ্রমিককে খুন করা হয়। তখন কাছ থেকে দেখেছি একজন আবেগদগ্ধ নেতার অন্তরের যন্ত্রণা। চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সব কটি সংগঠনকে এক ছাতার তলায় এনে আন্দোলন বিস্তারের পিছনে মানিকদাই ছিলেন প্রধান ব্যক্তি। মূলত সে সময় থেকেই তাঁর লেখালেখি শুরু। হাতের লেখার সমস্যা ছিল তাঁর। তাই অনুলেখক হিসেবে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেলাম তাঁকে। তথ্যের খুঁটিনাটি নিয়ে ভীষণ খুঁতখুঁতে ছিলেন তিনি। বারংবার সংশোধন করতেন।

এই অনুসন্ধিৎসা মানিকদার রক্তে ছিল। উত্তরবঙ্গের প্রখ্যাত সমাজতাত্তিক চারুচন্দ্র সান্যাল ছিলেন তাঁর বাবা। কলেজ জীবন থেকেই মানিকদা সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কলেজে পড়াকালীনই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। রাজনীতির মতাদর্শের কাছাকাছি বন্ধু সাহিত্যিক দেবেশ রায় যতবার জলপাইগুড়িতে এসেছেন, মানিক দার সঙ্গে দেখা করেছেন। আজ সকালে বন্ধুর মৃত্যুর খবর পেয়ে দেবেশবাবু বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

বাকরুদ্ধ দিনবাজারও। কারণ, তাঁদের প্রিয় দীর্ঘদেহী মানুষটি আর মর্নিং ওয়াক করতে করতে বাজারে এসে ঢুকবেন না আর।

(গৌতমবাবু মানিক সান্যালের অনুলেখক ছিলেন)

Manik Sanyal Left Communist MP মানিক সান্যাল Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy