পড়াশোনা ছেড়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চায়নি। তাই বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে গিয়েই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিল সে। তাদের হস্তক্ষেপেই শেষপর্যন্ত আর বিয়েতে বসতে হয়নি।
কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনি কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের কামাত চ্যাংরাবান্ধার তরুণী আলেমা খাতুনের জীবন। সে এখন গ্রামে ঘুরে ঘুরে নাবালিকা বিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার করছে। শুধু তাই নয়, তার ছয় বান্ধবীর বিয়ে আটকে তাঁদের ফের স্কুলের পথও ধরিয়েছে আলেমা। তার দেখানো পথেই এখন ফের শিক্ষার পথে ওই নাবালিকারাও।
মঙ্গলবার কোচবিহার জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক-৩-এর অফিসে কনফারেন্স হলে জাতীয় সুরক্ষিত মাতৃত্ব দিবস পালন করা হয়। সেখানেই আলেমাকে তাঁর কাজের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। আলেমার কথায়, “আমি যত টুকু বুঝি বা জানি, তাতে কম বয়সে বিয়ে করা ঠিক নয়। তাই এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। বাবা-মায়ের কথার বিরোধিতা করেছি।”
আলেমারা দুই ভাই, এক বোন। ছোট দুই ভাইয়ের মধ্যে এক জন পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কাজের খোঁজ করছে। আরেকজন খুব ছোট। আলেমা চ্যাংরাবান্ধা হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা প্রতিবন্ধী। মা একটি চা বাগানে কাজ করে বহু বছর ধরেই সংসার টানছেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, সাধারণত এমন পরিবারের মেয়েদেরই আর্থিক কারণে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিতে চান তাদের বাবা-মা-রা। সেই ভাবে আলেমার ক্ষেত্রেও চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু বেঁকে বসে আলেমা। বাবা-মা চাপ দিতে থাকায় সে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজে নিজেই। পরে প্রশাসনকে জানায়।
আরও পড়ুন...
গজলডোবায় রিসর্টের চুক্তি
এরপরেই আলেমা আরও ভাল ভাবে বুঝতে পারে, নাবালিকা বিবাহ কতটা ক্ষতিকর। মেয়েদের নিজেদের পায়ে দাঁড়ানো কতটা প্রয়োজন, সে কথাও সে বুঝতে পারে। আর সেটা বুঝতে পারার পরেই আলেমা স্থির করে, অন্য কোনও নাবালিকার বিয়ে হওয়ার উদ্যোগ হলেও সে বাধা দেবে। সে অনেক কিশোরীকে বুঝিয়েওছে, কেন নাবালিকা বিয়ে ক্ষতিকর।
মেখলিগঞ্জের বিডিও বীরূপাক্ষ মৈত্র ওই বাড়িতে যান। তিনি বলেন, “আমরা নাবালিকা বিবাহ বন্ধে লাগাতার প্রচার করছি। আলেমা যে ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে তাতে আমরা খুশি।” কোচবিহার জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শুচিস্মিতা দেবশর্মা বলেন, “আলেমা যে ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে তা দৃষ্টান্ত। সেখানেই থেমে না থাকে তিনি এর বিরুদ্ধে নেমে অনেককেই সচেতন করেছেন।”