Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

রানিমাও রাঁধেন-বাড়েন, মন দিয়ে পোশাকও বানান, রাজবাড়ি আর রাজনীতির আড়ালে রয়েছে অমৃতা’জ়

কৃষ্ণনগরে বিজেপি সেখানকার রাজবংশের কুলবধূ অমৃতা রায়কে প্রার্থী করেছে। রাজনীতিতে যোগ দেওয়া তাঁর কোনও দিনই স্বপ্ন ছিল না। বরং, স্বপ্ন ছিল পোশাকশিল্পী হয়ে ওঠার। পেরেছিলেনও।

BJP candidate of Krishnanagar Amrita Roy is a fashion designer by profession

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪ ১৯:৩৩
Share: Save:

তিনি কৃষ্ণনগরের রাজবধূ। কৃষ্ণনগর আসনের বিজেপি প্রার্থী হওয়ার পরে রাজবাড়ির অমৃতা রায় ‘রানিমা’ ডাকই শুনছেন। তবে পরিবারের এই পরিচয়ের বাইরেও অমৃতার অন্য এক গুণ রয়েছে। একটা সময় পর্যন্ত রাজবাড়ির ঐতিহ্য বজায় রেখেই তিনি পোশাকশিল্পী (ফ্যাশন ডিজ়াইনার) হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেতে চেয়েছিলেন। পেয়েওছিলেন। তবে চেনা-জানাদের কাছেই পৌঁছেছিল অমৃতা’জ় ব্র্যান্ডের পোশাক। কোনও দিন পোশাকশিল্পী হিসাবে পেশাদার হয়ে ওঠা হয়নি। সে ভাবে হতে চানওনি ‘রাজমাতা’ অমৃতা। তা বলে পোশাক তৈরি বন্ধ করেননি। এখনও তাঁর নকশায় তৈরি হয় মেয়েদের পোশাক।

কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির সঙ্গে রাজনীতির যোগাযোগ কোনও কালেই শোনা যায়নি। বরং, এই রাজবাড়ির সঙ্গে জুড়ে ছিল পুজো। দুর্গাপুজো তো বটেই, বাংলায় এই পরিবারের হাত ধরেই জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা বলে অনেকে দাবি করেন। শোনা যায়, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের আমলে রাজবাড়িতে শুরু হয় দুর্গার রাজরাজেশ্বরী রূপের পুজো। দূর দূর থেকে মানুষ আসেন দেবীকে দেখতে। সেটা পুজোর ষষ্ঠী থেকে নবমী। দশমীর দিন বড় আকর্ষণ রানিমা। তাঁর সঙ্গে সিঁদুর খেলতে ভিড় জমে রাজবাড়ির দুর্গাদালানে। অমৃতা সকাল থেকেই কাতারে কাতারে দর্শনার্থীদের সঙ্গে সিঁদুর খেলেন। দূরদূরান্ত, এমনকি, ভিন্‌রাজ্য থেকেও দর্শনার্থীরা রানিমার সঙ্গে নিজস্বী তোলেন। কেউ আবার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

সেই রানিমাই এ বার ভোটের ময়দানে। রাজবাড়ির অলিন্দ থেকে নেমে কৃষ্ণনগরের রাজপথে। তিনি যে রাজনীতিতে আসছেন তা কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল আগেই। তার পরে কয়েক দিনের মধ্যে বিজেপিতে যোগ এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া। কিন্তু রাজনীতিতে কোনও কালেই কোনও আগ্রহ ছিল না হুগলির চন্দননগরের কন্যা অমৃতার। লেখাপড়া অবশ্য কলকাতায় এসে। সেই সব কথার মধ্যেই আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন তাঁর অনেক শখের কথা। প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াই পোশাকশিল্পী হয়ে ওঠার কথা। ‘রানিমা’ বললেন, ‘‘আমার ভিতরে এটা চিরকালই ছিল। নিজে সব সময়েই অন্য রকম জামাকাপড় পরতাম। অন্য রকম সাজতাম।’’ কেমন সাজতেন সেই সময়ে? অমৃতা বললেন, ‘‘সাজগোজের ব্যাপারে আমি মনে করি, যত কম হবে তত ভাল। যেমন মেকআপ। যত কম মেকআপ ব্যবহার করা হবে তত স্বাভাবিক সৌন্দর্য বেশি প্রকাশ পায়। এই ধারণা নিয়েই আমার কাজ শুরু।’’

প্রথমে নিজের জন্য পোশাক তৈরি দিয়েই শুরু হয় অমৃতার ফ্যাশান চর্চা। তিনি বললেন, ‘‘আমার পোশাক দেখে অনেকেই আমার কাছে এসে প্রশংসা করত। যখন দেখলাম, সবাই আগ্রহ দেখাচ্ছেন, অনেক এটাও বলছেন যে, তোমার মতো করে তৈরি করে দাও, তখন আমি শুরু করে দিলাম।’’ এ সবই কিন্তু বিয়ের পরে। মানে ‘রাজবধূ’ হয়ে। অমৃতা ছেলেবেলার গল্প শোনাতে গিয়ে বললেন, পৈতৃক বাড়ি ছিল চন্দননগরে। অনেক দিন যাননি। বললেন, ‘‘নদীর পারে রেলিং দেওয়া বড় বাড়ি ছিল। পাড়ার নাম ভুলে গিয়েছি।’’ হুগলিপারের মেয়ে বধূ হয়ে যান জলঙ্গিপারের কৃষ্ণনগরে। তবে মাঝে রয়েছে গঙ্গাপারের কলকাতা। দাদু, বাবা সকলেই ছিলেন বিচারপতি। সেই সূত্রে কলকাতার বালিগঞ্জে চলে আসতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বাবা কিশোর মুখোপাধ্যায় নামী বিচারপতি ছিলেন। দাদু সুধাংশুশেখর মুখোপাধ্যায়কে ‘টাইগার অব ক্রিমিনাল ল’ বলা হত। সংবিধান লেখার সময়ে ওঁর পরামর্শও নেওয়া হয়েছিল।’’

এমনই এক পরিবারের মেয়ে মনে মনে নিজের পোশাককে বাকিদের চেয়ে আলাদা করে ভাবতেন। পরে পরিচিতদের মধ্যে বিক্রি করলেও কখনও কোনও দোকান গড়ে তোলা হয়নি। তবে নিজেই একটা ‘ব্র্যান্ড নাম’ দিয়েছিলেন। অমৃতা বলেন, ‘‘আমি নিজের ডিজ়াইনের পোশাকে অমৃতা’জ় লিখতাম।’’ তবে রাজপরিবারের পক্ষে কখনও বাধা আসেনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো বাড়িতেই করতাম, কোথাও বার হইনি শিখতে। নিজের ভাবনা থেকেই এসেছে সবটা। আমার মনে হয়, সকলেরই শখকে কাজের মাধ্যম করা উচিত।’’ শুধু পোশাক বানানোই নয়, অনুষ্ঠানের জায়গা সাজানোর কাজও করেছেন অমৃতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি ডেকর কনসালট্যান্টও ছিলাম। কোনও অনুষ্ঠান হলে সেখানকার জায়গাটা আমি সাজাতাম। কেউ পার্কের মতো বা রাজবাড়ির মতো ভেনু চাইলে সাজিয়ে দিতাম। আমার ভাবনা মতে কর্মীরা কাজ করতেন।’’

যিনি এত কিছু করেন, তিনি রাঁধেনও। তবে রান্নাবান্নার ক্ষেত্রেও একই রকম করে ভাবেন ‘ডিজ়াইনার’ অমৃতা। স্বামীর চাকরির সূত্রে ১৫ বছর বিদেশে ছিলেন। সেই সময়ে সবই করতে হত। এখন অবশ্য শখ হলেই শুধু রান্নাঘরে ঢোকেন। সেটাও আবার আটপৌরে নয়, ‘ফ্যান্সি’ রান্না। তিনি বললেন, ‘‘আমায় রান্না করতে হয় না সাধারণ ভাবে। তবে নতুন নতুন রেসিপি মাথায় এলে ‘ফ্যান্সি’ রান্না করি।’’ রানিমা নিজে মুখে বলেও দিলেন, ‘‘আমি কিন্তু খুব খারাপ রাঁধি না।’’

এত রকম শখ মেটানো শৌখিন অমৃতার কিন্তু রাজনীতিতে নামার শখ কোনও কালেই ছিল না। আর আচমকা সেই সুযোগ আসতেই প্রার্থী হয়ে গিয়েছেন। তবে শখ মেটানোর মতো করে নয়, ভাল কাজের তাগিদেই নির্বাচনে লড়াই করতে চান তিনি। রাজবাড়ির পরিচয় নিয়েই ভোটের রাজপথে নামা অমৃতা বললেন, ‘‘চেষ্টা করতে ক্ষতি কি!’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE