Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

‘ইউকে থেকে আসছি’, অবাক বিদায়ী সাংসদ

দলীয় নেতার মুখে এ কথা শুনেই অবাক হয়েছেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী। ‘বিস্মিত’ দেব না কি পরক্ষণেই জানতে চেয়েছিলেন, ‘ইউকে মানে? বুঝলাম না ঠিক!’

লোকসভার প্রচারে দেব।

লোকসভার প্রচারে দেব। নিজস্ব চিত্র।

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৪ ১০:১৪
Share: Save:

ঘাটালের দলীয় প্রার্থী দেবের সঙ্গে দেখা করলেন কেশপুরের একাংশ তৃণমূল নেতা। নেতৃত্বে মহম্মদ রফিক। রফিক জেলা পরিষদের তৃণমূল দলনেতা। দলের এক সূত্রের খবর, সোমবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের এক বেসরকারি অতিথিশালায় গিয়ে তাঁরা দেবের সঙ্গে দেখা করেছেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, দেখা হতেই রফিক নাকি মজার ছলে দেবকে বলেছেন, ‘আমরা ইউকে থেকে আসছি!’ দলীয় নেতার মুখে এ কথা শুনেই অবাক হয়েছেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী। ‘বিস্মিত’ দেব না কি পরক্ষণেই জানতে চেয়েছিলেন, ‘ইউকে মানে? বুঝলাম না ঠিক!’ এরপর রফিক তাঁকে শুনিয়েছেন, ‘ইউকে মানে ইউনাইটেড কেশপুর! আমরা এখন ইউনাইটেড। তাই এই নামটা দিয়েছি!’

দেবকে না কি ইউকে-র কথা শুনিয়েছেন? শুনে না কি দেব অবাকই হয়েছেন? মঙ্গলবার রফিক মানছেন, ‘‘দেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। দেখা হয়েছে। ঘরোয়া আলোচনা হয়েছে। খুব মজা হয়েছে। হাসিঠাট্টাও হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা তো কেশপুরের নাম পাল্টে দিয়েছি! নাম দিয়েছি ইউকে। ইউনাইটেড কেশপুর। সেটাই দেবকে শুনিয়েছি। শুনে প্রথমটায় দেব অবাকই হয়েছিলেন। পরে ওঁকে বুঝিয়ে সবটা বলেছি।’’ রফিকের সঙ্গে দেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি প্রদ্যোত পাঁজা প্রমুখ। তবে ছিলেন না কেশপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী শিউলি সাহা। বিধায়ক ছিলেন না, সেখানে ইউনাইটেড হল কী ভাবে? রফিক অনুগামী এক নেতা বলছেন, ‘‘আমাদের একটা টিম আছে। ইউনাইটেড কেশপুর টিম! সেই টিমের ১১ জন মিলে দেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম!’’ দেবের আদি বাড়ি কেশপুরেই।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

দু’দশক আগে, ১৯৯৮- ২০০০ সালে কেশপুরে তৃণমূলের ‘রবিনহুড’ ছিলেন রফিক। ’৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল তৈরি করেছিলেন। এর পরপরই কেশপুর, গড়বেতায় বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল। সিপিএম-তৃণমূলের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। সামনে আসে রফিকের নাম। ২০০১ সালে এই কেশপুরকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ‘সিপিএমের শেষপুর’। রফিককে গত পঞ্চায়েত ভোটে কেশপুরে জেলা পরিষদের প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। জিতেছেন তিনি। এর আগে ’৯৮ এর পঞ্চায়েত ভোটেও জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। পরাজিত হন। দু’দশক পরে তিনি ফের পঞ্চায়েত ভোটে লড়েছেন। কেশপুরে তৃণমূলের কোন্দল নতুন নয়। পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন ঘিরেও তা প্রকাশ্যে এসেছিল। এখানে একদিকে রয়েছেন মন্ত্রী তথা বিধায়ক শিউলি সাহার অনুগামীরা। অন্যদিকে রয়েছেন দলের ব্লক সভাপতি প্রদ্যোত পাঁজার অনুগামীরা। দু’পক্ষের তাল ঠোকাঠুকি লেগেই থাকে। পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠন ঘিরেও সেই কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল। প্রদ্যোত এক সময়ে শিউলিরই অনুগামী ছিলেন। শোনা যায়, শিউলি চেয়েছিলেন বলেই না কি দলের ব্লক সভাপতি হয়েছিলেন প্রদ্যোত। সময়ের ফেরে দু’জনের ‘দূরত্ব’ বেড়েছে।

গত বছর গোড়ার দিকে কেশপুরের আনন্দপুরে এসে জনসভা করেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কোন্দল ঠেকাতে কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি। তার পরেও পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠন ঘিরে তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। এমনকি, ভোটাভুটিও হয়েছে। ৯টি স্থায়ী সমিতির মধ্যে ৩টি স্থায়ী সমিতি গঠনে ভোটাভুটি হয়েছিল। ওই ৩টি স্থায়ী সমিতি হল যথাক্রমে পূর্ত, কৃষি এবং বিদ্যুৎ।

২০০১। সে বার বিধানসভা ভোটে কেশপুর থেকেই রাজ্যের মধ্যে সবথেকে বেশি ‘লিড’ পেয়েছিল সিপিএম। প্রায় ১ লক্ষ ৮ হাজার! জিতেছিলেন নন্দরানি ডল। রাজ্য- রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে। তৎকালীন বিরোধী তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছিল, অবাধ ভোটে কী এত ‘লিড’ সম্ভব? ওই ভোটপর্বেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘কেশপুর, সিপিএমের শেষপুর’। ২০২৩। সেই কেশপুরেই পঞ্চায়েত ভোটের নিরিখে তৃণমূলের ‘লিড’ প্রায় ১ লক্ষ ৬৯ হাজার! যা রাজ্যে অনেকটা বেনজির। ভোট অবাধ হলে কোনও একটি ব্লক থেকে দেড় লাখি ‘লিড’ কী সম্ভব? প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। এত বড় ‘লিডে’ও জেলা তৃণমূলের একাংশ নেতাকে চিন্তায় রেখেছে দলের গোষ্ঠী কোন্দল। রফিক অবশ্য দেবকে শুনিয়েছেন, ‘কথা দিচ্ছি, কেশপুর থেকে ৮০ হাজারের লিড দেব!’ সব ঠিক থাকলে আজ, বুধবারই কেশপুরে আসবেন দেব। কেশপুর সভাগৃহে কর্মী বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর। দেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন রফিক, প্রদ্যোতরা। শুনে বিধায়ক শিউলি বলছেন, ‘‘ভোট তো করবেন অঞ্চলের নেতারা।’’

দেবীর পুজো শেষ। শিউলির কাল পেরিয়ে এখন সময় পলাশের। রফিকরা চাইছেন, এই বসন্তে ইউকে-র সঙ্গে জুড়ে থাকুন দেবও।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Dev ghatal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE