মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
ভোট শুরু হতেই নির্বাচনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কী করে রাজ্য পুলিশকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় পুলিশকে দিয়ে ভোট করাচ্ছেন?’’
শুক্রবার উত্তরবঙ্গে তিনটি আসনের নির্বাচন চলাকালীনই তৃণমূলনেত্রী অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী বিজেপির ক্যাডারের মতো কাজ করছে। পাশাপাশি মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও দুই দিনাজপুরে পরবর্তী ভোটে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ ঠেকাতেও নানা ভাবে আবেদন
জানিয়েছেন তিনি।
ভোটে রাজ্য পুলিশকে ব্রাত্য করে রাখার অভিযোগে এ দিন মুর্শিদাবাদ জেলার দু’টি সভা থেকেই তিনি নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনাকে নিশানা করেছেন। মমতা বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ভালবাসি। তবে আগে কেন্দ্রীয় পুলিশ বিজেপি ছিল না। এখন সেনা আবাসগুলিও গেরুয়া রং করে দেওয়া হচ্ছে!’’ এই সূত্রে কেন্দ্রের শাসক বিজেপিকে বিঁধে তিনি আরও বলেন, ‘‘এই প্রথম দেখছি, যাঁর বিয়ে, তিনিই পুরোহিতের ভূমিকা পালন করছেন! প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনে রাখবেন, দেশে এখন (নির্বাচনের সময়) কেয়ার টেকার সরকার।’’ সেই সূত্রেই তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘অভিযোগ করে রেখেছি। আগামী দিন এ বিষয়টি ছাড়ব না।’’ প্রসঙ্গত, এ দিনের ভোটে আধা সেনাকেই মূলত ভোটের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অন্য রাজ্যের পুলিশ ব্যবহার করা হয়নি আর রাজ্য পুলিশের একজন করে ছিলেন লাঠি হাতে, ভোটের লাইন সামলানোর জন্য।
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশকে এখনও পুরোপুরি বাদ দেওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে তাই করতে হবে। যারা পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে ভোট লুট করেছে, ভয় দেখিয়েছে, বিরোধীদের মনোনয়ন তুলতে বাধ্য করেছে, সেই পুলিশকে দিয়ে ভোট হয়? বাংলার পুলিশের সম্পূর্ণ রাজনীতিকরণ হয়েছে।’’
এ দিন মমতা প্রথম সভা করেন মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের হরিহরপাড়ায় ও পরেরটি জঙ্গিপুর কেন্দ্রে। পার্শ্ববর্তী মালদহের সংখ্যালঘু প্রধান কেন্দ্রের ভোট ভাগ ঠেকাতে ‘তৃণমূলই বিজেপির একমাত্র বিকল্প’ বলে দাবি করেন তৃণমূলনেত্রী। এই অঞ্চলে কংগ্রেস ও সিপিএমের বোঝাপড়া এবং সংখ্যালঘু ভোটে তার প্রভাবের সম্ভাবনা মাথায় রেখে হরিহরপাড়ার সভায় মমতা বলেন, ‘‘এখানে কংগ্রেস, সিপিএম বিজেপি করে। কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে দেওয়া। আর সিপিএমকে একটা ভোট দেওয়ার অর্থ পুরনো অত্যাচারের দিন ফিরিয়ে আনা।’’ বিজেপি-বিরোধী জোটের প্রসঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘কেউ কেউ বলছে, ‘আমরা ‘ইন্ডিয়া’ জোট, আমাদের ভোট দিন।’ ওটা ( ইন্ডিয়া) দিল্লির।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমরাই (তৃণমূল) ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতৃত্ব দেব।’’
সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র অবশ্য জোটের প্রশ্নে পাল্টা বিঁধেছেন মমতাকে। এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বাসযোগ্যতা যে নেই, সারা দেশের মানুষ তা জেনে গিয়েছে। ইন্ডিয়া জোটে চেয়ার পেয়েছেন, বসে পড়েছেন। আবার চলে গিয়েছেন। আবার চেয়ার পেয়ে বসে পড়বেন।’’
মুর্শিদাবাদে প্রচারে গিয়ে পলাশির যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপিকে মীরজাফর বলে উল্লেখ করেন তৃণমূলনেত্রী। একই ভাবে এই অঞ্চলে পরিযায়ী শ্রমিকের মন পেতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগের কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আবেদন, ‘‘রমজানে যারা বাড়ি এসেছেন, ভোট না দিয়ে এক পা নড়বেন না। ভোট না দিলে (বিজেপি) আধার কার্ড থেকে আপনার নাম বাদ দিয়ে এনআরসি, সিএএ তে ঢুকিয়ে দেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy