Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Matua Mahasangha

রাজনীতি-মুক্ত ঠাকুরবাড়ি চান বহু ভক্ত

মতুয়াদের বড়মা, প্রয়াত বীণাপাণি ঠাকুরের ঘরের তালা ভেঙে ‘দখল’ নেওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে আছে মতুয়া ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ।

সোমবার সকাল থেকেই সুনসান ঠাকুরবাড়ি চত্ত্বর।

সোমবার সকাল থেকেই সুনসান ঠাকুরবাড়ি চত্ত্বর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক। 

সীমান্ত মৈত্র  
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৪৫
Share: Save:

এক জন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী, ভোটের প্রার্থী। অন্য জন রাজ্যসভার সাংসদ। দু’জনেরই রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্ট। এ হেন দুই ব্যক্তিত্বের সঙ্ঘাত মতুয়াবাড়ির ধর্মীয় পরিবেশ কলুষিত হচ্ছে বলে মনে করছেন ভক্তদের অনেকেই। মতুয়া ধর্ম মহামেলা চলাকালীন ঠাকুরবাড়িতে বড়মার ঘরের দখল নিয়ে রবিবার রাতে যা ঘটেছে, তাতেও বিরক্ত ভক্তদের অনেকে। সোমবার অনেকেই মেলা থেকে ফিরে গিয়েছেন। অস্থায়ী দোকান যাঁরা দেন, তাঁদেরও ফিরতে পথ ধরতে দেখা গেল।

মতুয়াদের বড়মা, প্রয়াত বীণাপাণি ঠাকুরের ঘরের তালা ভেঙে ‘দখল’ নেওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে আছে মতুয়া ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ। রবিবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার জেরে মতুয়া ধর্ম মহামেলায় আসা ভক্তদের অনেকেই চাইছেন, রাজনীতির ছোঁয়াচ থেকে দূরে থাকুক ঠাকুরবাড়ির ধর্মীয় পরিবেশ। দু’টি পরিবারের মধ্যে আকচাআকচি বন্ধ হোক। অনেকেরই বক্তব্য, তাঁরা ঠাকুরবাড়িতে আসেন পুণ্যলাভ করতে। হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পুজো দিয়ে আনন্দ করতে। তাঁরা গোলমাল দেখতে চান না।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

শিলিগুড়ি থেকে মেলায় এসেছিলেন সুচন্দ্রা বিশ্বাস। উত্তেজিত ভাবে বললেন, ‘‘প্রচুর অভাব-অনটনের মধ্যে হাজার হাজার টাকা খরচ করে ঠাকুরবাড়িতে আসি শান্তির খোঁজে। যে যাঁর মতো দল করবেন। কিন্তু রাজনীতি করতে হলে ঠাকুরবাড়ির বাইরে হোক। দু’পক্ষই (মমতা ঠাকুর এবং শান্তনু ঠাকুর) আমাদের কাছে প্রণম্য। তাঁদের কাছে হাত জোর করে অনুরোধ করছি, গোলমাল যেন ঠাকুরবাড়িতে না থাকে। এখানে সুস্থ পরিবেশ চাই।’’ উত্তরবঙ্গ থেকে এক বৃদ্ধের নেতৃত্বে একদল মতুয়া ভক্ত এসেছিলেন। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘আরও দু’টো দিন থাকার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু গোলমাল দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। তাই আজই ফিরে যাচ্ছি।’’

সোমবার সকালে ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ভক্তদের ভিড় অনেকটাই পাতলা। অনেকে জানালেন, পুণ্যস্নান পর্ব পর্যন্ত প্রচুর ভিড় থাকে। তারপর থেকে ভিড় কমতে থাকে। তা বলে এত কম ভিড় পুণ্যস্নানের পরের দিনগুলিতে থাকে না। সোমবার দেখা গেল, অস্থায়ী দোকানপাটও অনেকে গুটিয়ে গাড়িতে তুলে ফিরছেন। আইসক্রিম ও পানীয় জলের দোকান দেওয়া এক যুবকের কথায়, ‘‘রবিবার সন্ধ্যা থেকে বেচাকেনা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফ্রিজ, ইলেকট্রিক ভাড়া রোজ ৪০০ টাকা। এ বার ঝামেলার পরে আর ভক্তেরা বেশি সংখ্যায় আসবেন না বলেই মনে হচ্ছে। খরচ তুলব কী ভাবে!’’ মেলায় বাঁশি, একতারা, ডুগডুগি বিক্রি করতে এসেছিলেন সুজিত মাল। থাকেন নবদ্বীপে। তিনি বললেন, ‘‘রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে ভক্তদের ভিড় আর দেখা যাচ্ছে না। বিক্রি-বাট্টা কার্যত কিছুই হচ্ছে না। বাড়ি ফিরে যাব ভাবছি।’’

অভিযোগ, রবিবার সন্ধ্যায় বনগাঁর বিদায়ী সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর লোকজন নিয়ে এসে বড়মার ঘরের গ্রিলের তালা ভেঙে ঢুকে ঘরের দখল নেন। সে সময়ে ঘরে ছিলেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর এবং তাঁর মেয়ে মধুপর্ণা। তাঁদের বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

মমতার দাবি, সারা রাত খাওয়া-দাওয়া হয়নি। পাশে একটি মালপত্র রাখার ঘরের মেঝেয় ভোররাতে কিছুটা বিশ্রাম নিয়েছিলেন। রবিবার রাতে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসকে সঙ্গে নিয়ে মমতা গাইঘাটা থানায় অভিযোগ করেন। রাত পৌনে ২টো নাগাদ শান্তনু ঠাকুর তাঁর বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর সহ পরিবারের লোকজন বড়মার ঘরে ছিলেন। তারপর তাঁরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে মতুয়া ভক্তেরা গ্রিলে তালা ঝুলিয়ে দেন। রাতে দীর্ঘ সময় মমতাকে দেখা যায়, গ্রিলের বাইরে মেয়েকে নিয়ে বসে আছেন। পায়চারি করছেন। মমতার হাতে ছিল বড়মার ছবি। মমতা সে সময়ে ভক্তদের বলেন, ‘‘মেয়েকে নিয়ে আমাকে রাস্তায় রাত কাটাতে হচ্ছে। এটা আমার নিজের ঘর। এখানে বসবাস করি। আমাকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত মতুয়া ভক্তদের কাছে আমি এর বিচার চাই।’’

সোমবার সকালে দেখা গেল, অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের কার্যালয়ে বসে মমতা ভক্তদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। তিনি বলেন, ‘‘বড়মার ঘরের মধ্যে দিয়ে আমার ঘরে যেতে হয়। বুধবার রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে দিল্লিতে আমার শপথগ্রহণ। নথিপত্র সব ঘরের মধ্যে। বের করতে না পারলে শপথ নিতে পারব না।’’ পরনের শাড়ি দেখিয়ে মমতা জানালেন, একটা শাড়ি পরেই কাটাতে হচ্ছে।

এ দিন বিকেলে অবশ্য মমতার যে সব জিনিসপত্র বড়মার বাড়ির ঘরে ছিল, তা তালা খুলে তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছেন শান্তনু ঠাকুরেরা। দুপুরে শান্তনু তাঁর বাড়ি থেকে নীচে নেমে সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে বলেন, ‘‘সমগ্র মতুয়া সমাজের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বড়মা এবং পিআর ঠাকুরের (প্রমথরঞ্জন ঠাকুর) ঘরকে হেরিটেজ হিসাবে গড়ে তোলার। ভক্তেরা তালার চাবি চেয়েছিলেন। ওঁরা (মমতা ঠাকুর) বলেছিলেন, চাবি হারিয়ে গিয়েছে। ভক্তেরা তখন তালা ভাঙেন। আমি সহযোগিতা করি। বড়মার ঘর ভক্তদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’’

কিন্তু মেলা চলাকালীন কেন ঘরের তালা ভাঙা হল?

রাজনৈতিক মহলের অনেকে মনে করছেন, মতুয়া ধর্ম মহামেলা উপলক্ষে ভক্তেরা এসে বড়মার ঘরের সামনে মাতাম (মতুয়াদের ধর্মীয় আচরণ) দেন। বড়মার ঘরের বারান্দায় মমতা বসে থাকেন। ভক্তেরা তাঁকে প্রণাম করে প্রণামী দেন। সিএএ নিয়ে করা উচিত, তা এ বার ভক্তেরা অনেকেই মমতার কাছে জানতে চাইছিলেন। তিনি আবেদন করতে নিষেধ করেছিলেন। ভোট সংক্রান্ত কথাবার্তাও হচ্ছিল।

স্বভাবতই এই পরিবেশ পছন্দ ছিল না প্রতিপক্ষের। শান্তনুর অভিযোগ, ‘‘বড়মার ঘরকে তৃণমূলের রাজনৈতিক জায়গা বানিয়ে ফেলেছে। মতুয়ারা এর প্রতিবাদ করেছেন।’’

সোমবার বিকেলের পর থেকে ঠাকুরবাড়িতে ফের উত্তেজনা ছড়ায়। দু’পক্ষই জমায়েত করতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রচুর কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মমতা ঠাকুরের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল হয়।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE