রাহুল গান্ধী। — ফাইল চিত্র।
মাত্র একদিন আগেই ১৯৫ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে লোকসভা ভোটের ঢাকে কাঠি ফেলে দিয়েছে বিজেপি। আর রবিবার বিহারের রাজধানীতে বড় মাপের জনসভা করে বিজেপিকে ভোটের ময়দানে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ। পটনার গান্ধী ময়দানে আরজেডি প্রধান তথা সদ্য প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের ডাকে ভিড়ে ঠাসা ‘জনবিশ্বাস মহার্যালি’তে ইন্ডিয়া জোটের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেকেই চড়া সুরে বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে বলেছেন, এই সরকারকে না হারাতে পারলে দেশের গণতন্ত্র এবং যুবকদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে।
নীতীশ কুমার বিজেপির হাত ধরে নতুন সরকার গড়ার পরেই ক্ষমতা হারানো তেজস্বী তাঁর ‘জনবিশ্বাস যাত্রা’ নিয়ে বিহারের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে সভা করেন। এ দিনের পটনার সভায় প্রথম থেকেই বিজেপি এবং নীতীশকে নিশানা করেন তিনি। বিজেপিকে ‘মিথ্যার ফ্যাক্টরি’ বলে কটাক্ষ করে নিজের দল সম্পর্কে বলতে গিয়ে তেজস্বী বলেন, ‘‘আরজেডি মানে হল, রাইটস (অধিকার), জবস (কর্মসংস্থান) এবং ডেভেলপমেন্ট (উন্নয়ন)।’’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই আমাদের দলকে মুসলিম-যাদবদের (এম-ওয়াই) দল বলে। এটা ঠিক। এর পাশাপাশি আমরা বাপও!’’ বাপ-এর ব্যাখ্যা দিয়ে তেজস্বী বলেন, ‘‘বি মানে বহুজন, এ মানে অগ্র (উচ্চবর্ণ), এ মানে আধি আবাদী (মহিলা) এবং পি মানে পুওর অর্থাৎ দরিদ্র।’’ এই শ্রেণিগুলির উন্নয়নই তাঁর দলের লক্ষ্য বলে বুঝিয়ে দেন তেজস্বী। পাশাপাশি নীতীশের বারবার জোট বদলকে কটাক্ষ করতে গিয়ে একটি হিন্দি সিনেমার গানের উল্লেখ করে বলেন, ‘‘ইধার চলা ম্যায় উধার চলার’র মতো নীতীশ চাচা বারবার এ দিক ও দিক করছেন। আমাদের জোটের সরকার গত ১৭ মাসে যা করেছে, তা নীতীশ কুমার বিজেপির সঙ্গে থেকে ১৭ বছরেও করতে পারেননি।’’
এ দিন সভায় যোগ দেওয়ার জন্য মধ্যপ্রদেশে তাঁর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ একদিনের জন্য স্থগিত রেখেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেকে নিয়ে সভায় পৌঁছন তিনি। সভায় যোগ দিয়েছিলেন এসপি প্রধান অখিলেশ যাদবও। উপস্থিত ছিলেন বিহারে মহাজোটের অন্যতম বাম শরিক সিপিএম, সিপিআইএমএল এবং সিপিআই নেতারা।
রাহুল তাঁর বক্তৃতায় নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নিশানা করে বলেন, ‘‘বিজেপি দেশের পিছিয়ে পড়া জনজাতির মানুষ, যাঁরা জনসংখ্যার ৭৩ শতাংশ, তাঁদের অবহেলা ছাড়া কিছুই দেয়নি। গোটা দেশে ঘৃণা ছড়াচ্ছে বিজেপি।’’ সেনায় অস্থায়ী নিয়োগের অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ছড়িয়েছিল বিহারে। এ দিনের সমাবেশ থেকে সেই বিষয়টিকে ফের উস্কে দিয়ে রাহুল জানান, তাঁদের মহাজোট ক্ষমতায় ফিরলে এই প্রকল্প বাতিল করা হবে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘এই বিশাল সমাবেশ বুঝিয়ে দিয়েছে, এ বারে গোটা দেশ থেকেই বিজেপিকে বিদায় করবেন ভোটাররা।’’
সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিপিআইএমএল নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, এই জনবিরোধী সরকার সিংহাসন খালি করো।’’ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি মোদী সরকারকে জনবিরোধী বলে নিশানা করে সভায় ‘মোদী হটাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগান দেন।
এ দিন সভা থেকে এসপি প্রধান অখিলেশ যাদব বলেন, ‘‘একদিকে উত্তরপ্রদেশ বলছে ‘৮০ হারাও’, এখানে বিহার বলছে ‘৪০ হারাও’। বিহার ও উত্তরপ্রদেশের ১২০টি আসন হাতছাড়া হলে বিজেপি কী করবে?’’
এ দিনের সভার অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন তেজস্বীর বাবা তথা আরজেডি-র অধ্যক্ষ লালু প্রসাদ। বিজেপি-বিরোধী জোটে বহু বছর ধরেই লালুর অবদান অন্য মাত্রা পেয়েছে। তার প্রমাণ দেখা গেল এ দিনের সবাতেও। অসুস্থ শরীরেও মঞ্চে থাকা লালু বক্তৃতা করতে
উঠতেই জনতা উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। লালু নিজস্ব ভঙ্গিতে বিজেপিকে আক্রমণ করার পাশাপাশি মায়ের মৃত্যুর পরে মোদীর মস্তক মুণ্ডন না করার বিষয়টি নিয়ে সুকৌশলে হিন্দুত্বের খোঁচাও দেন। সভার শেষে ইন্ডিয়া জোটের নেতারা সকলে হাত ধরাধরি করে মঞ্চে একজোট হয়ে দাঁড়ান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy