ঘাটাল শহরে তৃণমূল প্রার্থী দেবের রোড শোয় শঙ্কর দোলই। নিজস্ব চিত্র।
একই সঙ্গে মিছিলে হাঁটলেন। কথাও হল। ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের সঙ্গে সৌহার্দ্যের এই ছবি দিয়েই বৃহস্পতিবার দেবের প্রথম প্রচার শুরু হল।
বেশ কয়েক মাস ধরেই ঘাটাল তৃণমূলে একটা অস্থিরতা চলছিল। দেব-বিরোধী ফোনালাপের অডিয়ো,যার কণ্ঠ শঙ্করের বলেই দাবি,তা নিয়ে শোরগোল পড়ে। শঙ্করকে সাংগঠনিক পদও হারাতে হয়। দেব অবশ্য এর আগে দিল্লিতে গিয়ে শঙ্করকে ‘রাজনৈতিক গুরু’ বলে সম্মান জানিয়েছিলেন। প্রচারে পাশে পেতে শঙ্করকে ফোনও করেছিলেন ঘাটালের সাংসদ। তারপর এ দিন তাঁরা একসাথেই মিছিলে হাঁটেন।
এ দিন মিছিল শুরুর আগেই দেব প্রত্যয়ের সঙ্গে জানিয়েছিলেন, ‘‘কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। শঙ্কর দা মিছিলে আসবেন।’’ মিছিল শেষে শঙ্করও বলেন, “দলের প্রার্থী।ফোন না করলেও আমার তো একটা দায়িত্ব আছে। আমি আসতামই।” দেবের প্রথম প্রচারে হাজির ছিলেন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও শিউলি সাহা, বিধায়ক অজিত মাইতি ও মমতা ভুঁইয়া,তৃণমূলের জেলা সভাপতি আশিস হুতাইত, যুব সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী-সহ অন্য নেতৃত্বও।
দেবের মহামিছিল ঘিরে এ দিন উৎসাহ ছিল আগের মতোই। দেব হাঁটা শুরু করতেই যেন ফিরে আসে দেবের প্রথম প্রচারেরছবি। দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি অভিনেতাকে ঘিরে আমজনতার উচ্ছ্বাসও ছিল চোখে পড়ার মতো। বাড়ির ছাদ থেকে দেবকে দেখে হাত নাড়েন নানা বয়সী মহিলারা।দেবও হাত নেড়ে জবাব দেন। হাসিমুখে নিজস্বী তোলেন।
ঘাটাল লোকসভায় তৃতীয় বারের জন্য দেবই যে তৃণমূল প্রার্থী, তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই নিশ্চিত করে দিয়েছিলেন। তবে তারপর দেবের ঘাটাল সফর নিয়ে টালবাহানা চলছিল। সঙ্গে ঘাটাল তৃণমূলে দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছিল। ঘনঘন ফোনালাপের অডিয়ো ভাইরালে (আনন্দবাজার কোনওটির সত্যতা যাচাই করেনি) দু’পক্ষের সংঘাত আরও স্পষ্ট হয়। এই পরিস্থিতিতে দেবের প্রথম প্রচারে জমায়েত কেমন হবে,তা নিয়ে দলের অন্দরে চর্চা চলছিল। তবে মহামিছিলে ঠাসা ভিড়, সঙ্গে ঐক্যের বার্তায় উৎফুল্ল তৃণমূল কর্মীরা।
দেব এ দিন দুপুরে ঘাটাল ঢোকেন। তার আগে দাসপুরে রসিকগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত ধূপ কারখানায় যান। সেখান থেকে ঘাটাল শহরের কুশপাতায় সাংসদ কার্যালয়ে আসেন। তারপর খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাও বলেন। দেবের বক্তব্য, “আমি রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছিলাম। ফেরত এসেছি মাস্টার প্ল্যানের জন্য। আমি হারি কি জিতি, বড় বিষয় নয়।মাস্টার প্ল্যান হবেই। দিদি কথা দিয়েছেন। আর দু’বছর বাদেই বিধানসভা ভোট। প্রকল্প না হলে আমি বলব,ভোট দেবেন না। ”
এ দিন প্রচারে বেরিয়ে দেবের প্রতিপক্ষ, ঘাটালে বিজেপির অভিনেতা প্রার্থী হিরণ অবশ্য বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে যাবতীয় ছাড়পত্র দিয়েছে। তারপরও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তিবায়িত হল না। ৩০ শতাংশ কাটমানি খাওয়া তৃণমূলের সাংসদের কাছে জানতে চাইছি, আপনি কাটমানি পাবেন না বলেই কি এই প্রকল্প করতে দিচ্ছেন না?’’ দেবের পাল্টা জবাব, “আসলে জনপ্রতিনিধির একটু পড়াশোনা করে আসা দরকার। একটা সুস্থ মানুষ কি ওই কথা বলতে পারে। রাজনীতি করলে একটা শিক্ষা দরকার। আমি আরটিআই করেছিলাম। কেন্দ্র জানিয়েছে কোনও টাকা বরাদ্দ হয়নি। তাই বলছি, একটু পড়াশোনা করে আসা সত্যিই দরকার।”
এ দিন মহামিছিল শেষে দেব ঘাটাল টাউন হলে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁদের কোথায় কী সমস্যা জানতে চান। নেতৃত্বদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠক চলাকালীনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোট পাওয়ার খবর আসে। তা শুনেই দেব চলে যান ঘাটালের বরদায় বিশালাক্ষী মন্দিরে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর আরোগ্য কামনা করে পুজো দেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy