স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বাবুন এবং শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বাবুনের জন্য কখনওই বিজেপির দরজা খোলা ছিল না। সমস্ত জল্পনা উড়িয়ে এ কথা জানিয়ে দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর মন্তব্য, ‘‘চোরেদের পরিবারের কাউকেই বিজেপি নেবে না!’’ সেই সঙ্গে বাবুনকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন শুভেন্দু। তৃণমূল ও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ‘ব্যক্তিগত কাজিয়া’য় বিজেপিকে যাতে না জড়ানো হয়, তা নিয়ে ‘সতর্ক’ করে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
লোকসভা ভোটে তৃণমূল তাঁকে প্রার্থী না করায় বুধবার প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন বাবুন। এর পর থেকেই তাঁর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে জল্পনা তৈরি হয় রাজ্য-রাজনীতিতে। পরে দিদি মমতা ‘ধমক’ দিয়ে তাঁর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলতেই ‘ইউ টার্ন’ নেন বাবুন। তার প্রেক্ষিতেই শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, বাবুন যদি এ ব্যাপারে বিজেপিকে জড়ান, তা হলে তিনি যা যা করেছেন সব ফাঁস করে দেবেন। বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘‘বাবুন বলছে, আমি বিজেপিতে যাব না। আমি বলছি, বিজেপি আপনাকে নেবে না। বিজেপি ওই পরিবারকে চোর বলেছে, ওই পরিবারের কাউকে বিজেপি নেবে না। (মোবাইল দেখিয়ে) গত দু’দিন বিজেপির সঙ্গে আপনি যা করেছেন, তার সবই আমার মোবাইল ফোনে রয়েছে। আপনি যদি বিজেপিকে নিয়ে কোনও কথা বলেন, হাটে এমন হাঁড়ি ভাঙব, পরের দিন আর মুখ দেখাতে পারবেন না।’’
বুধবার বিকেলে নদিয়ার রানাঘাটে বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। সেখানে বাবুন প্রসঙ্গে তাঁকে প্রশ্ন করতেই মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারকে নিশানা করেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, ‘‘২০১১ সালের পরে কালীঘাট রোড ও হরিশ মুখার্জির স্ট্রিট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার দখল করেছে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের কেউ কোনও পদে ছিলেন না। একে একে কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ পদে জায়গা পেয়েছেন। তৃণমূলের স্পোর্টস সেলের সভাপতি দায়িত্ব পেয়েছেন বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাউন্সিলর করেছে, ভাইপোকে দিল্লি থেকে উড়িয়ে নিয়ে এসে প্রথমে সাংসদ, পরে মালিক করে দিয়েছে, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর অফ কোম্পানি করে দিয়েছে। এর সঙ্গে যত স্পোর্টসের জায়গা আছে, মোহনবাগান ক্লাব বলুন, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব বলুন, বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশন বলুন, অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রত্যেককে বসিয়েছে। খেলাধুলার মানুষদের সরিয়ে দিয়েছে। হকির মাঠ থেকে শুরু করে এমন কোনও জায়গা নেই, যেখানে দখল করেনি এই পরিবার এবং সম্পূর্ণ হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্রয় এবং প্রশ্রয়ে।’’
এর পরেই বাবুন প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘বাবুনকে বলেছিল, ভাই তোকে এমপি (সাংসদ) করব! ভাইয়ের সঙ্গে চুক্তি ছিল, ২০২১ সালে তোকে এমপি করব। ২০২৪ সালে ভাইকে এমপি টিকিট দেয়নি। একটু ভাগ- বাঁটোয়ারায় কম পড়েছে। তাই এ সব বলছে। আর বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটা কথা বলে দিই— পিসিকে যা বলার বলুন। মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন আর দিদি নেই। যখন দিদি ছিলেন তখন আমি ওঁর দলে ছিলাম, এখন উনি পিসি। ঠগী পিসিকে যা পারেন বলুন, বিজেপির কথা তুলবেন না। নয়তো বিজেপির সঙ্গে কী কী করেছেন, আমি কিন্তু ফাঁস করে দেব। আমি আপনাকে সতর্ক করে দিচ্ছি।’’
বুধবার সকালেই তিনি হাওড়া সদরের তৃণমূলের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন। প্রার্থী পছন্দ হয়নি জানিয়ে বাবুন এমনও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, দিদি (মমতা) তাঁকে অনুমতি না দিলেও তিনি হাওড়া থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে লড়বেন। এ সব নিয়ে বিতর্কের সময় দিল্লিতে ছিলেন বাবুন। তখনই জল্পনা ছড়ায় যে, তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। তা নিয়ে জল্পনার মধ্যে বুধবার শিলিগুড়িতে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে ছোট ভাই বাবুনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার ঘোষণা করেন তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি জানিয়ে দেন, হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হতে না পেরে বাবুন যা করছেন বা বলছেন, তাতে গোটা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার ক্ষুব্ধ। মমতা বলেন, ‘‘আমি সরাসরি বলছি, যারা বেশি বড় হয়ে যায়, তাদের লোভও বেড়ে যায়। ওকে পরিবারের সদস্য বলেই আমি মনে করি না। সব সম্পর্ক ছেদ।’’ একই সঙ্গে মমতা ভাই বাবুনের কাজ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘ওর অনেক কাজই আমি অনেক দিন ধরে পছন্দ করি না। কিন্তু সব কথা তো বাইরে বলা যায় না। আজ বলছি। আমাদের পরিবারে কেউ এ রকম নয়। এতে সবাই ক্ষুব্ধ।’’
মমতার ওই মন্তব্যের পরেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যান বাবুন। জানিয়ে দেন, তিনি নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না। আর দিদি তাঁকে নিয়ে যা যা বলেছেন, তার সবটুকুই তিনি ‘দিদির আশীর্বাদ’ হিসাবেই নিচ্ছেন। দলবদলের জল্পনাতেও নিজেই ইতি টানেন। জানিয়ে দেন, দিদি যত দিন আছেন, তত দিন তিনি কোথাও যাচ্ছেন না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy