Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

‘ভোট তো হবেই, চাষ করতে পারব কি!’

পেটের টান, দৈনন্দিনের জ্বালা এতটাই যে ভোটের হাওয়া গায়ে লাগছে না ওঁদের।

কালনার রামেশ্বরপুর গ্রাম। চলছে জমির কাজ। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল 

কালনার রামেশ্বরপুর গ্রাম। চলছে জমির কাজ। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল 

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:১৪
Share: Save:

খাঁ খাঁ করছে রাস্তা। দু’পাশে জমির ধারে বসে রয়েছেন চাষিরা। সামনে বস্তাবন্দি পেঁয়াজ। ক্রেতা? চোখে দুঃখ, মুখে হাসি নিয়ে ওঁরা বলেন, ‘‘ফড়েরা আসছে না। গরমে পেঁয়াজ পচে যাচ্ছে।’’

কালনার বৈদ্যপুর মোড় থেকে রেলগেট পেরিয়ে পাকা রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে এলেই হাটকালনা পঞ্চায়েতের রামেশ্বরপুর গ্রাম। গ্রামের মাঝ বরাবর চলে গিয়েছে পাকা রাস্তা, দু’পাশে জমি। কৃষি নির্ভর এই গ্রামে ঢোকার মুখেই নাকে আসে পচা পেঁয়াজের দুর্গন্ধ। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ কৃষিজীবী। কিন্তু মাঠ থেকে পেঁয়াজ তোলার পরে ফড়েদের দেখা না মেলায় ফসল বিক্রি করতে পারছেন না তাঁরা। দু’পয়সা ঘরে তোলার চেষ্টায় নিজেরাই বস্তায় পেঁয়াজ নিয়ে বসে পড়েছেন রাস্তায়। কিন্তু গরমে বস্তায় রাখা পেঁয়াজ দ্রুত পচে যাচ্ছে। রাস্তার ধারে সেগুলি ফেলেও দিচ্ছেন তাঁরা। কষ্ট করে চাষ করা ফসলের দুর্গন্ধে ভারী হয়ে উঠছে বাতাস।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

লোকসভা ভোট যে দুয়ারে তা বোঝা যাচ্ছে না গ্রামে ঢুকে। প্রচার বলতে তৃণমূলের হাতে গোনা কয়েকটা দেওয়াল লিখন। পাকা রাস্তার দু’ধারের মাঠে ঢেঁড়শ, লালশাক, বরবটির মতো আনাজ। কোথাও সদ্য মাটি ফুঁড়ে উঠেছে তিল, পাটের চারা। এখনও কালবৈশাখীর দেখা মেলেনি। বৃষ্টি না হওয়ায় বহু জমিতে দেখা দিয়েছে ফাটল। বেলা ১২টা বাজার আগেই পাক খাচ্ছে গরম বাতাস। জ্বালা ধরছে শরীরে। গরমের জ্বালা, ফসল বিক্রি করতে না পারার জ্বালায় ভোট-যুদ্ধ টের পাচ্ছেন না গ্রামবাসী।

গ্রামের কংক্রিটের নালা মিশেছে দূরের বেহুলা নদীতে। সেই নালা থেকে ছোট পাম্পের সাহায্যে জল তুলে নিজের পুঁইশাক এবং বরবটির জমিতে সেচ দিচ্ছিলেন বলাই দাস। তিনি বলেন, “পেঁয়াজ চাষ করে মোটা টাকার লোকসান হয়েছে। এখনও অনেকে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেননি। পাটেরও দর নেই তেমন। চড়া দামে সার, কীটনাশক, বীজ কিনে চাষ করতে হচ্ছে। তার পরেও দু’পয়সা ঘরে না ঢুকলে খাব কি!’’ তাঁর দাবি, ‘‘‘ভোট তো হবেই, কিন্তু চাষ করতে পারব কি!’’

চাষে সরকারি সাহায্য মেলে কি না জানতে চাইলে প্রৌঢ় বলাই বলেন, “রাজ্য সরকারের ১০ হাজার, কেন্দ্র সরকারের ছ’হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য মেলে। তবে ওতে তেমন কিছু হয় না। তার থেকে সারের দাম কিছুটা কমলে এবং ফসলের লাভজনক দর মিললে ভাল হয়।” তিনি জানান, গ্রামে পাকা রাস্তা হয়েছে, জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের পানীয় জল এসেছে। বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়েও তেমন অভিযোগ নেই। কিন্তু কাজ কই! তাঁর আক্ষেপ, নিজের দুই ছেলের মধ্যে এক জনকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্য জনকে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়িয়েও রাজ্যে সরকারি চাকরি মেলেনি। বাধ্য হয়েই দুই ছেলেকে ভিন্‌ রাজ্যে বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতে হচ্ছে।

কিছুটা দূরে একটি জমিতে ভর্তি টোম্যাটো গাছ। জমিতেও পড়ে রয়েছে পাকতা টোম্যাটো। চাষিদের দাবি, দাম কম, তাই খরচ করে টোম্যাটো তুলে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন না মালিক। তপ্ত মাটিতে বসেই কেউ জমি থেকে অতিরিক্ত পাটের চারা তুলে ফেলছেন। কেউ বা তিলের জমি থেকে আগাছা পরিষ্কার করছেন। জল দিচ্ছেন জমিতে। খেতমজুরদের অনেকেই মহিলা।

সরকারি সুবিধা পান কি না জিজ্ঞাসা করতেই কনক মল্লিক বলেন, “দিদি তো লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে হাজার টাকা দিচ্ছে। রেশনে চাল, আটা পাই। তবে তাতে সারা মাস চলে না। তাই দিনে দু’শো টাকা রোজগারের জন্য মাঠের কাজ করি।” তবে সারা বছর কাজ মেলে না।

গ্রামের মান্নাপাড়ায় টিউবওয়েলে স্নান সেরে দেকল মান্না বলেন, “টালির ছাউনি দেওয়া ঘর থেকে জল পড়ে। আবাস যোজনার ঘরের প্রয়োজন ছিল। সে তো দীর্ঘ দিন বন্ধ!’’ গোবিন্দ মান্না বাড়িতে সাইকেল মেরামত করেই উপার্জন করেন। তিনি বলেন, ‘‘উজ্জ্বলা প্রকল্পে রান্নার গ্যাস মেলেনি। একশো দিনের কাজ বন্ধ। ভোটের দাদা-দিদিরা আসবেন যাবেন, কিন্তু আমাদের কী হবে!’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Agricultutre Farming
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE