ভোট কর্মীরা যাচ্ছেন ভোট কেন্দ্রে। ছবি - সুমন মণ্ডল।
এর আগে পর-পর দু’টি নির্বাচনে রক্তের বন্যা দেখেছিল কোচবিহার। ভোট-হিংসায় নিহতদের বাড়ি দরজায় কান পাতলে এখনও ভেসে আসে হাহাকার। ফের ভোট হাজির জেলায়। কোচবিহারের ফলিমারির সেই ছোট্ট স্কুলঘরটিতে আবার উঠেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। পৌঁছে গিয়েছেন ভোটকর্মীরা। থেকে-থেকে সে দিকেই চোখ পড়ে যায় রতন বিশ্বাসের। চোখ ভরে ওঠে জল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘‘ইস্, সে দিন যদি হামলা না হত! বোমা না পড়ত! দাদার প্রাণটা বেঁচে যেত। ওঁর তো চলে যাওয়ার সময় হয়নি।’’
আজ, শুক্রবার লোকসভার প্রথম দফার নির্বাচন। প্রথম দফাতেই কোচবিহারে ভোট। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফলিমারিতে বুথের মধ্যেই বোমা ছুঁড়ে বিজেপির পোলিং এজেন্ট মাধব বিশ্বাসকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। মাধবের ভাই রতন। তাঁর কথায়, ‘‘দাদার স্ত্রী, সন্তান থেকে শুরু করে বাবা, আমরা পরিবারের প্রত্যেকে একটি মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারিনি সে দিনটাকে। আমরা চাই, এমন ঘটনা যাতে আর কখনও না ঘটে। রাজনীতির জন্য এ ভাবে কাউকে আর চলে যেতে না হয়। সবাই মিলে সেই ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’’
এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনই গুলি চলে দিনহাটার ভিলেজ ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নগরভাগ্নি গ্রামের বুথে। গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন চিরঞ্জিত কার্জি। মায়ের সঙ্গে বুথে ভোট দিতে গিয়েছিলেন তিনি। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর বাবা নীরেন কার্জি, মা দুলালি ভোটের কথা উঠতেই কেঁদে ফেলেন। “ছেলের খুনিদের তো শাস্তি হয়নি। কী জন্য আর ভোট দিতে যাব? প্রার্থনা করি, এমন যাতে আর কারও না হয়”, উষ্মা ফুটে ওঠে দুলালির সুরে।
পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতে খুন হয়ে যান তুফানগঞ্জের রামপুরের ছাটভলকা গ্রামের তৃণমূল কর্মী গণেশ সরকার। গণেশের ছেলে সুজনের আর্জি , ‘‘ভোটের আগের দিন রাতে বাবাকে খুন করা হয়েছে। এ ভাবে যাতে আর কেউ যেন নিজের বাবাকে না হারায়। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের কাছে সে আবেদন রাখি।’’ পাশ থেকে স্ত্রী পপি সরকার বলে ওঠেন, ‘‘আমার স্বামীকে যারা খুন করেছে, তাদের শাস্তির দাবি জানাই।’’
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফায় শীতলখুচিতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন আনন্দ বর্মণ। জীবনে প্রথম বার ভোট দিতে গিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েই মৃত্যু হয় ১৮ বছরের আনন্দের। সে দিনের কথা বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন আনন্দের বাবা জগদীশ বর্মণ ও মা বাসন্তী বর্মণ। আনন্দের দাদা গোবিন্দ স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি পেয়েছেন। এ বার তাঁরও ভোটের ডিউটি পড়েছে। গোবিন্দের কথায়, ‘‘আবার ভোট। খুব মনে পড়ছে ভাইটার কথা। সে দিন যদি ভাই আর একটু পরে বুথে যেত!’’ এমন ঘটনা যাতে আর না হয় সে আবেদন জানাই।’’ শীতলখুচিতেই জোরপাটকি গ্রামে সিআইএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন চার যুবক। ভোটে হিংসা ও প্রাণহানি বন্ধ করার আর্জি জানিয়েছে তাঁদের পরিবারগুলিও। (তথ্য সহায়তা-সঞ্জীব সরকার, সুমন মণ্ডল)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy