Advertisement
E-Paper

কুড়িতে বুড়ো

একটা হিন্দি সিনেমার ডায়ালগ শুনেছিলাম, উমর দিমাগ সে হোতি হ্যায়। বড়ই শিক্ষণীয় সংলাপ। কত অজায়গায় কুজায়গায় কতই না এ রকম মণিমুক্তো ছড়িয়ে রয়েছে। আর কথাটাও বড় হক কথা। উমর দিমাগ সে হোতি হ্যায়। কথাটা হচ্ছে বাঙালিকে নিয়ে। আর কে না জানে বাঙালির দিমাগটাই আগে পেকে ওঠে, ঝুনো হয় এবং বুড়িয়ে যায়। বিজ্ঞ ও সবজান্তা বাঙালির ওইটেই মুশকিল। না, নষ্টনীড়ে নেই, কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের চারুলতায় ভূপতি অমলকে পাঞ্জা লড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছিল, আমি পঁয়ত্রিশ বছরের প্রৌঢ়! ভেবে দেখলে সত্যজিতের সংযোজনটি কিছুমাত্র বেমানান নয়।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৪১
ছবি: শুভময় মিত্র

ছবি: শুভময় মিত্র

একটা হিন্দি সিনেমার ডায়ালগ শুনেছিলাম, উমর দিমাগ সে হোতি হ্যায়। বড়ই শিক্ষণীয় সংলাপ। কত অজায়গায় কুজায়গায় কতই না এ রকম মণিমুক্তো ছড়িয়ে রয়েছে। আর কথাটাও বড় হক কথা। উমর দিমাগ সে হোতি হ্যায়।

কথাটা হচ্ছে বাঙালিকে নিয়ে। আর কে না জানে বাঙালির দিমাগটাই আগে পেকে ওঠে, ঝুনো হয় এবং বুড়িয়ে যায়। বিজ্ঞ ও সবজান্তা বাঙালির ওইটেই মুশকিল।

না, নষ্টনীড়ে নেই, কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের চারুলতায় ভূপতি অমলকে পাঞ্জা লড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছিল, আমি পঁয়ত্রিশ বছরের প্রৌঢ়! ভেবে দেখলে সত্যজিতের সংযোজনটি কিছুমাত্র বেমানান নয়। ভূপতি যে অল্প বয়সেই নানাবিধ গুরুগম্ভীর জ্ঞানচর্চা ও পলিটিক্সে নিমগ্ন থেকেছে তাতে তার পঁয়ত্রিশে প্রৌঢ়ত্ব অর্জনের অধিকারও বর্তায়।

প্রাচীন পর্যটকদের বিবরণে পাওয়া যায়, গৌড়বঙ্গ একদা বেশ সরেস দেশ ছিল। ফুলে, ফলে, ফসলে, প্রকৃতির অকৃপণ দানে, বঙ্গবাসীর সহৃদয় আতিথেয়তায়, সম্পন্নতায় গৌড়বঙ্গ একদা বিদেশি পর্যটককে সম্মোহিত করেছিল মনে করলেই বিস্মিত হতে হয়। বাঙালি বুদ্ধিজীবীরাও আবেগের বশে বঙ্গভূমি নিয়ে আদিখ্যেতা কিছু কম করেননি। জীবনানন্দ আবার এই বাংলায় ফিরে আসবেন বলে কবুলও করে রেখেছেন। কিন্তু কেন এই আদিখ্যেতা, সেইটে বুঝে ওঠা মুশকিল।

তখন কালীঘাটে একটা ইস্কুলে পড়াই। এয়ার মার্শাল সুব্রত মুখোপাধ্যায় জাপানে এক নৈশভোজে শ্বাসনালীতে মাংসের টুকরো আটকে মারা যান। সেই খবরে বাঙালির বিষণ্ণতার যথেষ্ট কারণ ছিল। ভারতীয় বিমানবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ইস্কুলের মাস্টারমশাই শিশুপালবাবুর হাইট ছিল অনধিক পাঁচ ফুট, শীর্ণ ক্ষয়াটে চেহারা। অতি উত্তেজিত ভাবে টিচার্স রুমে ঢুকে তিনি সখেদে বলেছিলেন, অরা বাঙালি রাখব না, বুঝলেন? সুভাষ বোসরে মারল, শ্যামাপ্রসাদরে মারল, অখন সুব্রত মুখার্জিরেও মারল।

এই ‘অরা’ আসলে কারা এবং কেনই বা তারা পর পর বীর বাঙালিদের নিধন করে চলেছে এবং কোন কূট কৌশলে বা চক্রান্তে— সে খবর শিশুপালবাবুকে জনান্তিকে জিজ্ঞেস করলে উনি খুব রহস্যময় একটা হাসি হাসতেন। ভাবখানা এই যে, ষড়যন্ত্রীদের তিনি বিলক্ষণ চেনেন, কেন অরা বাঙালি মারছে তাও জানেন, কোন প্রক্রিয়ায় মারা হয়েছে তারও খবর রাখেন, কিন্তু প্রকাশ করতে চান না।

আশ্চর্যের বিষয় এই, অধিকাংশ বাঙালির মধ্যেই একটা আবেগতাড়িত বাঙালিপ্রীতি আছে, যে কারণে তারা প্রবাসে বিদেশে গেলে বাঙালি খোঁজে। আবার বাঙালির ভিতরে স্বজাতি-বিদ্বেষও অতি উৎকট। বাঙালির উন্নতি বাঙালি বিশেষ ভাল চোখে দেখে না। বাঙালির যে প্রাদেশিকতা নেই, এ কথা অতি কট্টর বাঙালি-বিরোধীও স্বীকার করবেন। আবার অন্য ভাষাভাষীদের প্রতি উদাসীনতাও তার জাতি-চরিত্র।

বাঙালি আফগান নয়, পাঠান নয়, পঞ্জাবি বা জাঠও নয়। বাঙালি গড়পড়তা দুবলা পাতলা জাত, ত্রিশ পেরোলেই তার ভুঁড়ি বেরোতে শুরু করে। তার গলার জোর থাকলেও গায়ের জোর নেই।

ছবি: সৌভিক দে

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রকে একটি সভায় আমন্ত্রণ জানাতে গেছে কয়েকজন যুবক। আচার্যদেব তখন চৌকির ওপর উবু হয়ে বসে লেখাপড়ায় ব্যস্ত। সভায় যাওয়ার আমন্ত্রণ গ্রহণ করছিলেন না। যুবকদের মধ্যে ছিল এক জন ব্যায়ামবীর। আচার্যদেবের হঠাৎ চোখ পড়ল তার ওপর। বাঙালি ছেলের অমন পেটানো চেহারা দেখে তিনি মুগ্ধ। জিজ্ঞেস করলেন, বুকে ঘুষি মারলে সহ্য করতে পারবে? ছেলেটা হাসিমুখে বলল, মারুন স্যর। আচার্যদেব বেশ কয়েকটা ঘুষি বসালেন তার বুকে। ছেলেটা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রইল। আচার্যদেব বাঙালি ছেলের স্বাস্থ্য দেখে মুগ্ধ। সভায় যেতে রাজি হয়ে গেলেন।

কারা প্রকৃত বাঙালি, সে বিষয়ে নানা মতামত আছে। পূর্ববঙ্গের বাংলাভাষী তথা বাঙালরা বাঙালি শুনে কমলকুমার মজুমদার অতীব বিস্ময়ের সঙ্গে বলেছিলেন, বাঙালি? ওরা বাঙালি? তা কী করে হয়? বাঙালি তো শুধু পশ্চিম বাংলার বামুন-কায়েত! বাদবাকি বঙ্গভাষী সম্পর্কে তাঁর মত ছিল, আর যা-ই হোক, ওরা বাঙালি নয়।

এই ‘বাঙালি’ ও ‘বাঙালি নয়’ ধন্দ যে আমারও নেই তা নয়। ভাগ্যক্রমে পূর্ব, উত্তর ও পশ্চিম বঙ্গে আমার ব্যাপক সঞ্চারণা। আর আমি এক জন নিষ্ঠাবান পদাতিক। ভূ-পর্যটক নই বটে, কিন্তু বিস্তীর্ণ অঞ্চল হেঁটে হেঁটে বাংলা ও বাঙালি বড় কম দেখিনি। শৈশবের ঘোর কেটে চৈতন্যে প্রবেশ করার পর থেকেই আমি এক আধোজাগা, আলস্যজড়িত, গতরখাস নিষ্ক্রিয় জনগোষ্ঠীকে দেখে আসছি। ‘আসছি’ বলে তারা আর আসে না, ‘করছি’ বলে তারা আর করে না, দেখা বা শোনা মাত্র তারা সব জিনিস বুঝে যায়, চার্চিল-নেহরু-আইসেনহাওয়ার কোথায় কোথায় ভুল করছেন, তারা তা নির্ভুল বলে দিতে পারে। তাদের অফিসে বা কাজের জায়গায় যেতে লেট হয় বটে, কিন্তু তাসের আসরে বা রকের আড্ডায় যেতে ঘড়ির কাঁটার নড়চড় হয় না। এই বাঙালিকে আমি বাল্যকাল থেকে মোক্ষম চিনি।

কিন্তু যতগুলো লোককে বাঙালি বলে চিনতে একটু অসুবিধে হয়, যেমন বিদ্যাসাগর, দয়ার সাগর-টাগর ঠিক আছে, বিদ্যার জাহাজ ছিলেন তাও মানতে অসুবিধে নেই, মাতৃভক্ত ছিলেন সেও বোঝা গেল। কিন্তু আসলে ওই যে একটা সুপুরির মতো শক্ত, কঠিন ও জমাট অ্যাটিচুড, ওটা বাঙালিয়ানার সঙ্গে খাপ খায় না।

এই যেমন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। বিভূতিভূষণের ছেলে তারাদাসের বিয়ের নেমন্তন্নে গেছি। তখন সুনীতিকুমারের বয়স আশি-টাশি হবে। আমার প্রায় উল্টো দিকেই একটু কোনাচে অবস্থানে খেতে বসেছেন। প্রথম চোপাটেই পাঁচ-ছ’খানা রাধাবল্লভি উড়িয়ে দিলেন, বোধহয় ছোলার ডাল আর বেগুনভাজা দিয়ে। ভেবেছিলাম, অতগুলো রাধাবল্লভির পর বোধহয় পোলাওটা পাশ কাটাবেন। কোথায় কী! বেশ উঁচু করে পোলাও পড়ল পাতে এবং সঙ্গে খাসির মাংস। প্রতিভা এবং পরাক্রম কাকে বলে সে দিন বুঝলাম। আমার বাঁ পাশে গজেনদা অর্থাৎ গজেন্দ্র মিত্র বসে ছিলেন। তিনি বললেন, সুনীতিবাবু, জানেন তো, এই শীর্ষেন্দু কিন্তু নিরামিষ খায়। সুনীতিকুমার তেরছা চোখে এক বার আমার দিকে তাকালেন, তার পর বললেন, নিরিমিষ্যি খেলে তাড়াতাড়ি চুল পেকে যায়। ব্যস, আর কোনও মন্তব্য নয়। প্রকৃত বাঙালি হলে আমিষ নিরামিষ নিয়ে ছোটখাটো একটু ভাষণ না দিয়ে কি ছাড়তেন?

শুনেছিলাম সুনীতিকুমার ব্যায়াম করেন। কথাটা বিশ্বাস করতাম। নইলে ওই বয়সে অকুতোভয়ে ওই হাই ক্যালোরি ধ্বংস করতে পারতেন কি? বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের আশি বছর পূর্তি উপলক্ষেই বোধহয় দ্বারভাঙ্গা হল-এ একটি সংবর্ধনা সভা আয়োজিত হয়। বিভূতিভূষণ রোগাভোগা মানুষ, জড়সড় হয়ে স্টেজে বসা। সুনীতিকুমারের বয়স তখন পঁচাশি। বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ভাষণে বললেন, উনি তো মোটে আশিতে পৌঁছোলেন, আমি তো পঁচাশি, এখনও আমি ব্যায়াম করি।

ধন্দ হয়, সুনীতিকুমার কি বাঙালির ক্যাটেগোরিতে পড়েন? তখন সিটি কলেজে বিএ পড়ি। লাগোয়া হস্টেলে নিবাস। এক রবিবার আমাদের জানানো হল, আজ সত্যজিৎ রায় তাঁর অপরাজিত ছবির শুটিং করতে আসবেন। আমাদের যেতে হবে ক্লাস ভরাট করার জন্য। তা গেলাম। পথের পাঁচালি দেখেছি এবং সেই মুগ্ধতা তখনও আচ্ছন্ন করে আছে। গিয়ে দেখি, তালগাছের মতো লম্বা একটা লোক, হাড়-মাসে পাঠানি চেহারা। কী চওড়া কবজি! বাঙালি! উনি বাঙালি হতে পারেন? কথা-টথা অবিশ্যি বাংলাতেই বলছেন, কিন্তু তবু বাঙালি বলে প্রত্যয় হচ্ছে না। বাঙালি এমনটা হয় না তো!

ভাগ্যক্রমে পরবর্তী কালে তাঁর সঙ্গে পরিচয় এবং সামান্য ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল লেখালেখির সূত্রে। আনন্দবাজার পত্রিকার হয়ে তাঁর একটা দীর্ঘ ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম। তা ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে প্রায়ই দেখা হয়ে যেত, বেশ একটু স্নেহ করতেন, আন্তরিক কথাবার্তাও হত। এক জন সদাজাগ্রত মানুষ। হয় গান, নয় ছবি, নয় লেখা, নয় পিয়ানো এবং স্ক্রিপ্ট লেখা এবং ফিল্ম তৈরি। বড় কাঠামোর শরীরটা ছিল বটে, কিন্তু বিচিত্র কর্মকাণ্ডে এই দৈত্যাকার লোকটিকে কি ভুলক্রমেও বাঙালি বলে ভাবা যায়? আর পাঁচটা বুড়িয়ে যাওয়া এবং জুড়িয়ে যাওয়া বাঙালির সঙ্গে এঁকে মেলাই কী করে?

তখন এমএ পড়ি বাংলা নিয়ে। মাঝে মাঝে আমাদের একটা লিটারেরি সেমিনার হত এবং তাতে আসতেন কোনও এক জন বিদ্বজ্জন। সে বার আসবেন সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। আমরা কয়েকজন এই খবরে বিশেষ উত্তেজিত। সুধীন্দ্রনাথ তো নয়, একটা কিংবদন্তি। বেলা তিনটেয় সেমিনার, আমরা অধীর আগ্রহে করিডোর, সিঁড়ি, আশুতোষ বিল্ডিং-এর উঠোন, সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছি। কখন আসেন! হঠাৎ আমিই দেখতে পেলাম, প্যান্ট-শার্ট পরা লম্বা-চওড়া, অতি সুপুরুষ এবং ভীষণ অভিজাত এক ভদ্রলোক, যেন উদ্ভ্রান্ত হয়ে উঠোনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ছবি দেখা ছিল। একটু মিল আছে বুঝতে পেরে দৌড়ে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম, স্যর, আপনিই কি সুধীন্দ্রনাথ?

অদ্ভুত একটা লাজুক হেসে বললেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ! নিয়ে গিয়ে কমনরুমে বসালাম।

চা, কফি, জল ইত্যাদি সব প্রস্তাবই বিনীত ভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন। শুধু পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা অভিনব চ্যাপ্টা ধরনের সিগারেট ধরালেন। প্যাকেটের গায়ে নাম দেখলাম মুরাদ। জন্মে ও-রকম সিগারেট দেখিনি।

খবর পেয়ে শশিভূষণ দাশগুপ্ত তাড়াতাড়ি নেমে এলেন। মহা সমাদরে নিয়ে যাওয়া হল ক্লাসঘরের সেমিনারে। চমৎকার বাংলায় একটি ভাষণ দিলেন। অসাধারণ কথনভঙ্গি। সব ঠিক আছে। বাঙালির ছেলে, বাংলা নাম, বাংলা বলেন, বাংলায় লেখেন। কিন্তু কী বলব, আগাগোড়া কেন যে সেদিন আমার মনে হয়েছিল, এ লোকটা বাঙালির নির্মোকে আসলে এক জন সাহেব।

যোধপুর পার্ক বাজারে একটা সবজিওলা বসত। বেশ অমায়িক মানুষ। তার সঙ্গে আমার বেশ ভাবসাব ছিল। বছর চল্লিশেক বয়স হবে হয়তো মেরেকেটে। এক দিন কথায় কথায় সে তার নাতির গল্প করছিল। আমি অবাক হয়ে বললাম, তোমার নাতি?

আইজ্ঞা, বয়স তো হইল।

তোমার বয়স কত?

তা সত্তর হবে না বাবু?

তোমার কি নিজের বয়স সত্তর বলে মনে হয়?

তাই তো মনে হয়।

তবে তোমার বয়স সত্তরই।

মাঝে মাঝেই ওই সংলাপটা তাই গুনগুন করে ঘরে চলে আসে, উমর দিমাগ সে হোতি হ্যায়।

তবে হ্যাঁ, কবুল করতে বাধা নেই, বাঙালির বুড়িয়ে যাওয়ার মুদ্রাদোষ গত কয়েক দশকে পিছু হটে গেছে। চারদিকে ঝকঝকে, উজ্জ্বল, ছিমছাম ছেলেমেয়েদের দেখলে নিজেকেই যুবক ভাবতে ইচ্ছে করে।

shirshendu mukhopadhyay bangali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy