Advertisement
E-Paper

আমি জয় চ্যাটার্জি- এক দুষ্টু রাজার গল্প

সিনেমার শুরুতেই পাহাড়, চা বাগান, আকাশ, মেঘ এই সবার সৌন্দর্য আপনার মন ভুলিয়ে দেবে। সেই দৃশ্য দেখে বহু দিন পাহাড়ে না যাওয়ার বাসনা থেকে আপনি বলতেই পারেন আহা কবে যাব।

ছবির একটি দৃশ্যে আবির চট্টোপাধ্যায়।

ছবির একটি দৃশ্যে আবির চট্টোপাধ্যায়।

রেশমী প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ১৫:১০
Share
Save

পরিচালনা- মনোজ মিশিগান

অভিনয়- আবির চট্টোপাধ্যায়, জয়া আহসান, সব্যসাচী চক্রবর্তী

এক যে ছিল রাজা। তার ছিল এক রানি। রাজা ভারী দুষ্টু লোক। কারও ভালমন্দের দিকে নজর দেয় না। সর্ব ক্ষণ নিজের জন্য চিন্তা। এই নিয়ে রানির খুব দুঃখ। একদিন রাজা আর রানি পাহাড়ে বেড়াতে গেল। সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর হঠাৎ দেখা হল। তারপর? এই ‘তারপর’ দেখতে হলে চোখ রাখতে হবে রুপোলি পর্দায়। কী ভাবছেন, রিভিউয়ের শুরুতে রূপকথার গল্প বলতে বসে এ রকম হেঁয়ালি করছি কেন? আসলে এই সিনেমায় ড্রামা আছে ঠিকই তবে থ্রিলার প্রথম থেকেই আপনার সঙ্গে লুকোচুরি খেলবে। এই বার রোমাঞ্চকর কিছু হতে পারে বলে আপনি হাত-পা গুটিয়ে বসলেন কিন্তু থ্রিলার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আপনার সঙ্গে হেঁয়ালি করে বলবে আমি জয় চ্যাটার্জি। আসলে এই হেঁয়ালির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আমিত্বের গল্প। বলা ভাল, নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অন্য আমির অনুসন্ধান।

সিনেমার শুরুতেই পাহাড়, চা বাগান, আকাশ, মেঘ এই সবার সৌন্দর্য আপনার মন ভুলিয়ে দেবে। সেই দৃশ্য দেখে বহু দিন পাহাড়ে না যাওয়ার বাসনা থেকে আপনি বলতেই পারেন আহা কবে যাব। কিন্তু তালগোল পাকতে শুরু করবে এর পর থেকেই। এক জন সফল ব্যাবসায়ী। কাজের প্রতি অসম্ভব নিষ্ঠাবান। কাজে এক বার ভুল হলে কাউকে দ্বিতীয় সুযোগ দেন না। এবং তিনি মনে করেন টাকা দিলেই যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। মোটামুটি এই হল জয় চ্যাটার্জির (আবির চট্টোপাধ্যায়) প্রাথমিক পরিচয়। ও দিকে অদিতি (জয়া আহসান) পেশায় চিকিৎসক। বেশ সরল, সাদাসিধে মনের মানুষ। প্রত্যেকের জন্য ভাবেন। যথাসম্ভব সাহায্য করেন। মানসিকতার দিক দিয়ে জয়ের সঙ্গে তাঁর বিস্তর ফারাক। এই নিয়ে নিত্যদিনের অশান্তি। অদিতির অনুরোধেই জয় তার অতিব্যস্ত সময় থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং বাতিল করে ঘুরতে যায় পাহাড়ে। সেখানে গিয়ে একটি দুর্ঘটনার পর থেকে পাল্টে যেতে শুরু করে সব কিছু। যে অনাথ আশ্রমের কাণ্ডারীকে এক দিন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে টাকা দিয়ে ‘ও সব ভণ্ডামি আমার জানা আছে’ বলেছিল, ঘুরেফিরে তার কাছেই আশ্রয় নিতে হয়। এর পর চেনা ছকে গল্প এগোলেও সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ অংশ কিন্তু এখান থেকেই শুরু।


ছবির একটি দৃশ্যে জয়া।

আসলে প্রত্যেক মানুষের ভেতর দুটো আমি কাজ করে। এই দ্বৈত সত্ত্বার ভিড়ে অনেক সময় নিজেরাই ঠিক করে উঠতে পারি না কী চাই আমরা। সিনেমার দ্বিতীয়ার্ধে পরিচালক (মনোজ মিশিগান) যে গল্প এঁকেছেন তা দেখতে বেশ লাগে। যে আজ রাজা, কাল যে সে প্রজা হতে পারে এই ভাবনা কোথাও যেন মন ছুঁয়ে যায়। সুন্দর সাজানো জীবন থেকে বাস্তবের মাটিতে পা রাখাটা খুব জরুরি। আসলে আমার নিজের বাইরেও যে একটা জগৎ আছে, মানুষ আছে, তাদেরও কিছু চাওয়া-পাওয়া, ইচ্ছে থাকতে পারে এটা মাথায় রাখা জরুরি। দামি মোড়কের উপহার কখনও ভালবাসার স্মারক হতে পারে না। ব্যস্ত সময় থেকে কিছুটা সময় না হয় প্রিয়জনের জন্য তোলা থাক। এই উপলব্ধি ভীষণ ভাবে জরুরি। রবীন্দ্রনাথের একটি প্রবন্ধ থেকে তাঁর ভাষা ধার করে বলা যায়, ‘বাহিরের জগৎ আমাদের মনের মধ্যে প্রবেশ করিয়া আর একটা জগৎ হইয়া উঠিতেছে। তাহাতে যে কেবল বাহিরের জগতের রঙ আকৃতি ধ্বনি প্রভৃতি আছে তাহা নহে; তাহার সঙ্গে আমাদের ভালো-লাগা মন্দ-লাগা, আমদের ভয়-বিস্ময়, আমাদের সুখ-দুঃখ জড়িত। তাহা আমাদের হৃদয়বৃত্তির বিচিত্র রসে নানা ভাবে আভাসিত হইয়া উঠিতেছে'। ভাল লাগে কে মোহন এবং জিনিয়া রায় দেবের কণ্ঠে ‘রাহে জুদা’ গানটি। আবির চট্টোপাধ্যায় এবং জয়া আহসানের অভিনয় নিয়ে নতুন করে বলবার কিছু নেই। ক্যামেরার কাজও বেশ ভাল।

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: কালাকান্দি: আক্ষরিক অর্থে ঘেঁটে ঘ!

এই হল দুষ্টু রাজার ভাল হয়ে ওঠার গল্প। আমার গল্পের নটেগাছ আপাতত এখানেই মুড়োলো। এ বার পালা আপনার।

Abir Chatterjee আবির চট্টোপাধ্যায় Celebrities Tollywood Bengali movie Movie Review মুভি রিভিউ Film Review
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy