Advertisement
E-Paper

ছেলেকে নিয়ে অন্য উড়ান ‘মিসেস ইন্ডিয়া’ চুমকির

গড়িয়াহাটের চুমকির মেয়েবেলা কেটেছে দুর্গাপুরে। বাবা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে চাকরি করতেন। মা পড়াতেন স্কুলে। দিদি আর ভাইয়ের সঙ্গে বড় হওয়া চুমকি দুর্গাপুরে প়ড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হন বেনারস হিন্দু ইউনির্ভাসিটিতে। তার পর বিয়ে, সন্তানের জন্ম, চাকরি, ডিভোর্সও…।

স্বরলিপি ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ১৫:৫৬
চুমকি শর্মা। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

চুমকি শর্মা। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

মাছে-ভাতে বাঙালি তিনি। অথচ চেহারায় তার ছাপ কম। লম্বা গড়ন। আলগা লাবণ্যে জড়িয়ে রয়েছে ব্যক্তিত্ব। নিজের জীবন নিজের ছন্দে বাঁচেন। সেই জার্নিতে এ বার যোগ হল নতুন পালক। তিনি চুমকি শর্মা। মিসেস ইন্ডিয়া কুইন অব সাবস্ট্যান্স ২০১৮-র বিজয়ী। কলকাতা থেকে জাতীয় স্তরে এই প্যাজেন্টে সম্মান এই প্রথম। বিচারকের আসনে ছিলেন পুনম ধীলোঁ, মহিমা চৌধুরীর মতো অভিনেত্রীরা।

গড়িয়াহাটের চুমকির মেয়েবেলা কেটেছে দুর্গাপুরে। বাবা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে চাকরি করতেন। মা পড়াতেন স্কুলে। দিদি আর ভাইয়ের সঙ্গে বড় হওয়া চুমকি দুর্গাপুরে প়ড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হন বেনারস হিন্দু ইউনির্ভাসিটিতে। তার পর বিয়ে, সন্তানের জন্ম, চাকরি, ডিভোর্সও…।

শুরু হয় সিঙ্গল মাদার হিসেবে ছেলেকে বড় করার লড়াই। সেই দৈনন্দিনতায় বিউটি কনটেস্ট কোথাও ছিল না। কিন্তু ওই যে…টিভিতে দেখা সুস্মিতা সেন, ঐশ্বর্যা রাইদের দেখে এ মেয়েও তো র‌্যাম্পে হাঁটার স্বপ্ন দেখত…

আরও পড়ুন, ‘হামি’ মানে কী? উত্তরে ওরা বলল...

‘‘এককালে শখ ছিল মিস ইন্ডিয়াতে যাব, সেটা হয়নি। তবে মিসেস ইন্ডিয়া হলাম। এক কালে একটা বিয়ে করেছিলাম। সেটা কোথাও তো কাজে লাগল,’’ হাসতে হাসতে বাড়ির সোফায় বসে বললেন চুমকি।

বিয়েটা কাজে লাগল মানে? না, বিয়ে বা এক্স হাজব্যান্ড, এ সব নিয়ে আর কথা বাড়াতে চান না চুমকি। কিন্তু এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেবার প্রাথমিক শর্তই হল, বিবাহিতা, ডিভোর্সী বা বিধবা হতে হবে। ডিভোর্সী হওয়ায় চুমকি সহজেই আবেদন করতে পেরেছিলেন। আর জিতলেনও সেরার মুকুট। ডিভোর্সী হওয়ায় তিনি পেয়েছেন ‘মিস ইন্ডিয়া কুইন অব সাবস্ট্যান্স ২০১৮’র সম্মান। চলতি বছর থেকে এই নতুন ক্যাটেগরি যোগ হয়েছে বলে জানালেন চুমকি।

আরও পড়ুন, ‘পুরস্কারের জন্য আমি কাউকে বোতল দিতে পারব না’

এক দিকে ব্যাঙ্কের চাকরি, অন্য দিকে ছেলেকে বড় করার দৈনন্দিন লড়াইয়ের মাঝে কলকাতায় বসে এ হেন প্রতিযোগিতার খোঁজ পেলেন কী করে? চুমকি শেয়ার করলেন, ‘‘২০১৭-র অক্টোবর নাগাদ এক দিন অফিস থেকে ফিরে ইউটিউবে মিস ওয়ার্ল্ড ২০১৭ মানুষী চিল্লারের একটা ভিডিও দেখছিলাম। রিলেটেড ভিডিওতে মিস ওয়ার্ল্ড থেকে মিস ইন্ডিয়া, তার পর মিসেস ইন্ডিয়া এল। সেখান থেকেই জানতে পেরে ওদের ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাপ্লিকেশন করেছিলাম। ওরা ছবি নিল, ইন্টারভিউ হল। তার পর ইমেলে জানতে পারলাম ফার্স্ট সিলেকশনে দেশের মধ্যে ৪৮ জন মহিলার মধ্যে আমি এক জন।’’


মুকুট হাতে চুমকি।— নিজস্ব চিত্র।

সেই শুরু। গত ১১ থেকে ১৩ এপ্রিল দিল্লিতে হয়েছিল এই অনুষ্ঠান। গ্রুমিং, কোরিওগ্রাফি-সহ নানা রাউন্ড পেরিয়ে তাঁর মাথায় উঠল সেরার মুকুট। সঙ্গে জিতে নিলেন ‘বিউটি উইথ ব্রেন’ অ্যাওয়ার্ডও। দর্শকাসনে তখন গর্বিত মা, দিদি, কাছের বন্ধুরা এবং দু’জন অফিস কলিগ। তবে মায়ের সাফল্যে সবচেয়ে খুশি হয়েছিল বোধহয় ছেলে। মাকে নিয়ে গর্ব বেড়ে গিয়েছিল কয়েক গুণ…।

আরও পড়ুন, ‘কাজটা করি শুধু দিনের শেষে দর্শকের বাহ! শুনব বলে’

চুমকির এই লড়াইটা কিন্তু সহজ ছিল না। কোনও রকম প্রফেশনাল ট্রেনিং ছাড়া এ মুকুট পাওয়া তো সহজ নয়। সেই চ্যালেঞ্জটাই নিয়েছিলেন চুমকি। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রুমিংটা নিজেই করেছি। আমি নিজেই আমার কোচ ছিলাম। তা ছাড়া নিজের ওপর তখন অতটা ইনভেস্টও করতে চাইনি। কারণ কতটা কী পারব, সেটাতে কনফিউসড ছিলাম।’’ তাই ইন্টারনেটে বিভিন্ন ভিডিও দেখতেন। সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতেন। রাত ১০টার পর অফিস থেকে ফিরে বাড়িতেই র‌্যাম্পে হাঁটা প্র্যাকটিস করতেন। তবে এ হেন প্রতিযোগিতায় গিয়ে চুমকির মনে হয়েছে, প্রপার ট্রেনিংটা সত্যিই দরকার।


যোদ্ধার বেশে চুমকি। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

চুমকি মনে করেন, ফাইনাল রাউন্ডের প্রশ্ন-উত্তরই তাঁকে জিতিয়ে দিয়েছে। পুনম ধীলোঁ জানতে চেয়েছিলেন, হু ইজ আ ট্রু উয়োম্যান অব সাবস্ট্যান্স অ্যাকর্ডিং টু ইউ? চুমকি বললেন, ‘‘আমি ঠিক করে রেখেছিলাম জেনিউইন আনসার দেওয়ার চেষ্টা করব। আমি বলেছিলাম, ভগবানের চোখে আমরা সবাই সমান। এমন কেউ আছে যে হয়তো আমার মতো প্রিভিলেজ পজিশনে নেই। তাকে যদি সাহায্য না করতে পারি, তা হলে উয়োম্যানহুডের কী মানে থাকল? যাদের সাহায্যের দরকার তাদেরকে তুলে যে নিজের লেভেলে নিয়ে আসতে পারে সেই ওম্যান অব সাবস্ট্যান্স। এই উত্তরটাই আমাকে জিতিয়ে দিল।’’

আরও পড়ুন, প্রেম নিয়ে কথা বলা কি ইশার বারণ?

তবে বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরের পাশাপাশি এ বার ট্রেনিং নেবেন চুমকি। কারণ আগামী জুলাইতে কিঙ্গস্টন জামাইকাতে হবে ‘ইউনাইটেড নেশনস’ প্যাজেন্ট। সেখানে মিস ইউনাইটেড নেশনস ক্যাটেগরিতে প্রতিযোগিতায় নামছেন চুমকি। তাঁর কথায়, ‘‘এটা বিরাট রেসপন্সিবিলিটি। যাতে দেশের, বাংলার, কলকাতার মুখ উজ্জ্বল করতে পারি চেষ্টা করব।’’


মঞ্চে দুই বিচারক মহিমা এবং পুনমের সঙ্গে চুমকি। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

শুধু এটুকু নয়, এই মেয়ে আরও বড় আকাশের স্বপ্ন দেখেন। প্রতি দিনের লড়াইয়ে মা, বাবা, দিদিকে পাশে পেয়েছেন। একমাত্র ছেলে তাঁর সাপোর্ট সিস্টেম। ক্লাস টুয়েলভের পড়ুয়া ছেলে নাকি তাঁকে কখনও ডিপ্রেসড হতে দেয় না। তবুও দিনের শেষে লড়াইটা তো তাঁর একারই। তাই প্যাজেন্টে জিতেও মাটিতে পা রয়েছে কন্যের। ‘‘এই সম্মান তো ভাল লাগছেই। কিন্তু যদি আমাকে দেখে অন্য কেউ ইনস্পায়ার হন, সেটা আরও ব়ড় পাওনা হবে,’’ দরজায় দাঁড়িয়ে বিদায় জানাতে গিয়ে বললেন চুমকি। চোখে তাঁর ‘ইউনাইটেড নেশনস’ জেতার হাতছানি। দৈনন্দিনের বেঁচে থাকাকে আরও খানিকটা জীবন্ত করে তুলতে এ বার শুরু মেয়ের অন্য উড়ান।

Chumki Sharma Celebrities Video Celebrity Interview
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy