ডেইজি ইরানি।
১৯৫০-এর দশকের জনপ্রিয় শিশু অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। পরবর্তী কালেও বেশ কিছু বলিউডি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তিনি ডেইজি ইরানি। এতদিন পরে শেয়ার করলেন তাঁর জীবনের এক গোপন সত্য।
সম্প্রতি ডেইজি জানিয়েছেন, ছ’বছর বয়সে তিনি ধর্ষিতা হন। ঘটনাটি ঘটে ‘হম পঞ্ছী এক ডাল কে’- ছবির শুটিংয়ের সময়।
মুম্বই মিররকে ডেইজি জানিয়েছেন, ওই ছবির শুটিংয়ে মাদ্রাজে তাঁর এক অভিভাবক তাঁকে ধর্ষণ করেন। হোটেলের ঘরে বন্ধ করে তাঁকে বেল্ট দিয়ে মারেন। ঘটনার কথা কাউকে বললে প্রাণে মেরে ফেলারও ভয় দেখান। এতদিন পরে সেই ঘটনার কথা ডেইজির ফ্ল্যাশব্ল্যাকের মতো মনে পড়ে। কিন্তু বেল্ট দিয়ে মারের যন্ত্রণা আজও ভুলতে পারেননি তিনি। সেই অভিভাবককে ডেইজির দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁর মা!
আরও পড়ুন, ঘরেই বসত বিপদের, সরব হলেন ওঁরা
তবে ধর্ষণের ঘটনা ডেইজির জীবনে এর পরেও ঘটেছিল। তখন তাঁর বয়স ১৫। ডেইজি জানিয়েছেন, তাঁর মা শাড়ি পরিয়ে, প্যাড পরিয়ে মালিকচাঁদ কোছর নামে এক প্রযোজকের কাছে ডেইজিকে রেখে চলে যান। তিনি তখন ‘মেরে হুজুর’ ছবিটি তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন। ওই প্রযোজক ডেইজিকে যৌন হেনস্থা করেন। সোফায় বসে গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করতেই ডেইজি শাড়ির ভেতরে পরা প্যাড খুলে তাঁর হাতে গিয়ে দেন। ডেইজির কথায়, ‘‘আমি আর কীই বা করতে পারতাম! সব সময়ই যে কোনও ঘটনার মজার দিকটা দেখার চেষ্টা করেছি।’’ মাকে পুরো ঘটনাটি বললেও সে সময় ডেইজির কথা তাঁর মা বিশ্বাস করেননি বলেও দাবি করেন অভিনেত্রী।
৬৬ বছরের অভিনেত্রী এখন মনে করেন, সে সময় তাঁর মা তাঁকে এবং তাঁর বোন হানি ইরানিকে স্টার তৈরি করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু দুই বোন ডেইজি এবং হানি বিয়ে করে সংসার করতে চাইতেন।
তখন ডেইজি শিশুশিল্পী।
ডেইজি মনে করেন, বাবা-মায়েদের শিশুদের প্রতি আরও যত্নশীল হওয়া উচিত। সে কারণেই নিজের জীবনের এই কালো দিকের কথা তিনি সকলের সঙ্গে শেয়ার করলেন। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন ফের সামনে এল। রুপোলী দুনিয়ায় শিশুদের জনপ্রিয়তা পাওয়ার মধ্যেই কি বাবা-মায়ের কোথাও নিজেদের সাফল্যও খোঁজেন? সে কারণেই কি মরিয়া হয়ে যে কোনও শর্তেই রাজি হয়ে যান তাঁরা?
আরও পড়ুন, ‘হিচকী’ দেখে কেঁদে ফেললেন মাধুরী
এ সমস্যা একা ডেইজির নয়। রুপোলী দুনিয়ার হাতছানি ছাড়াও এ ঘটনা প্রায়শই ঘটে প্রতিটি ঘরেই। সম্প্রতি ‘দ্য লিটল গার্ল উই ওয়্যার, অ্যান্ড দ্য উইমেন উই আর’ নামের একটি তথ্যচিত্র দেখলেন শহর কলকাতার দর্শক। এর বিষয় শিশুর জীবনে পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয়ের দ্বারা যৌন হেনস্থার ঘটনা। নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন কলেজপড়ুয়া মেয়ের মা, ৪২ বছরের কোয়েল চট্টোপাধ্যায়, সমাজকর্মী আয়েশা সিংহ, বেঙ্গালুরুর রিনা ডি’সুজা, মুম্বইয়ের ঈশিতা মানেক, দিল্লির বর্ণিনী ভট্টাচার্যর মতো বিভিন্ন পেশার সাধারণ মহিলারা।
কারও ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনকারীর পরিচয় দাদা, কারও ক্ষেত্রে কাকা। কারও আবার বিশ্বস্ত পরিচারক বা অভিভাবকপ্রতিম পড়শি। সময়ের পলির নীচে আগ্নেয়গিরির মতোই তপ্ত হয়ে ছিল এই সব জীবনের নৈঃশব্দের গল্প। সেই নিঃস্তব্ধতাকেই ভেঙেচুরে ক্যামেরার সামনে মন খুলে কথা বলছেন, হাত ধরাধরি করে হেসে উঠছেন ‘অপরাজিতা’রা। এ শহরেও নির্যাতিতাদের এগিয়ে চলার মন্ত্র শেখাতে নিরাময় কর্মশালার আয়োজন করছেন ছবিটির নেপথ্যকর্মী অশ্বিনী আইলাওয়াদি, অনুজা গুপ্ত প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy