Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জিনে পরিবর্তন হয়েছে ম্যালেরিয়া জীবাণুর, দাবি

প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের আক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক আর্টিমিসিনিন কম্বিনেশন থেরাপি (এসিটি) চালু করেছিল। কিন্তু সেই ওষুধ থেকেও নিজেদের বাঁচানোর রাস্তা খুঁজে নিল ম্যালেরিয়ার জীবাণু। দাবি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিভাগের গবেষকদের।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১২
Share: Save:

প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের আক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক আর্টিমিসিনিন কম্বিনেশন থেরাপি (এসিটি) চালু করেছিল। কিন্তু সেই ওষুধ থেকেও নিজেদের বাঁচানোর রাস্তা খুঁজে নিল ম্যালেরিয়ার জীবাণু। দাবি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিভাগের গবেষকদের।

ওই গবেষকদের দাবি, ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের মধ্যে মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (এমডিআর-১) নামে যে জিনটি রয়েছে সেটির জিনগত পরিবর্তন (মিউটেশন) হয়ে গিয়েছে। তার ফলে আর্টিমিসিনিন কম্বিনেশন ড্রাগ আর অনেকক্ষেত্রেই কাজ করছে না। গবেষকদের দাবি, নতুন মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জিনটি ছাড়াও ওই পরজীবীর আরও কয়েকটি জিনেরও গঠনগত পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তিত জিনগুলি জিন ব্যাঙ্কে সংরক্ষণ করে রেখেছেন বলে দাবি গবেষকদের। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিভাগের ওই গবেষণাপত্রটি আমেরিকান সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজির ‘জার্নাল অব অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল এজেন্টস এন্ড কেমোথেরাপি’ পত্রিকাতে প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে।

মেদিনীপুরের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিভাগের প্রধান সোমনাথ রায় ওই গবেষক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সোমনাথবাবু বলেন, শুধু এ বছরেই পশ্চিম মেদিনীপুরে প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের সংক্রমণে মারা গিয়েছেন ১৮ জন। মৃতদের বড় একটা অংশের ক্ষেত্রেই ম্যালেরিয়ার ওষুধ কাজ করেনি বলে দাবি করেছেন সোমনাথবাবু।

শারীরবিদ্যার ওই শিক্ষক বলেন, প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের বিবর্তন যে ঘটছে তার আঁচ পাওয়া গিয়েছিল আগেই। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ম্যালেরিয়ার রোগের চিকিৎসায় যে ক্লোরোকুইন কাজ করছে না তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। আর তার জন্যই ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক আর্টিমিসিনিন কম্বিনেশন থেরাপি (এসিটি) চালু করেছিল। কিন্তু এখন ম্যালেরিয়ার রোগীদের অনেকের মধ্যে নতুন ওষুধ কাজ না করায় ফের প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের জিনের বিবর্তন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন সোমনাথবাবুরা। তাতেই তাঁরা এমডিআর জিনের মিউটেশনের বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন বলে গবেষণাপত্রে দাবি করেছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা।

গবেষকরা পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার বান্দোয়ান, আসড়া, বাঘমুণ্ডি, খাতড়া, মুকুটমণিপুর, রাইপুর-সহ বেশ কিছু এলাকার ১২৬ জন ম্যালেরিয়া রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন। দেখা গিয়েছে, বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতিতে ৬৭ জনের রোগ সারলেও বাকিদের রোগ সারছে না। বাকিদের মধ্যে ৪৩ জনের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই ওষুধ কাজ দিচ্ছে না। ১৬ জনের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসায় সাড়া মিললেও এক সপ্তাহ পরেই তাঁরা ফের আক্রান্ত হচ্ছেন। সেই রক্তের নমুনা থেকে তাঁরা প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম জীবাণু আলাদা করে নিয়ে তার জিনগত গুণাবলীর পরীক্ষা করেন।

গবেষণাপত্রে সোমনাথবাবুরা দাবি করেছেন, ওই পরীক্ষাতেই এমডিআরের জিনগত পরিবর্তন ধরা পড়েছে। যার ফলে এসিটি- তে আর ফল মিলছে না। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলপাহাড়ির ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে বলেই অনুমান সোমনাথবাবুর। সোমনাথবাবু বলেন, “এর আগে প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের ক্লোরোকুইন রেজিট্যান্ট জিন (সিআরটি) নিয়েও কাজ করেছি। ধারণা ছিল সিআরটি জিনের গঠনগত পরিবর্তনের জন্যই ক্লোরোকুইন অনেক ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া রোগীর উপরে কাজ করেনি। কিন্তু আমরা এ বারের গবেষণায় দেখলাম, শুধু সিআরটি নয়, এমডিআর জিনটিও ম্যালেরিয়ার ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করেছে।” ওই গবেষক দলের অন্যতম সদস্য কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিয় কুমার হাটি বলেন, “যে ভাবে জীবাণুরা জিনের গঠন বদলে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করছে তাতে নিয়মিত ওই সব রোগ জীবাণুর জিন চরিত্র পরীক্ষা করে যাওয়া উচিত। সেই অনুযায়ী নতুন কম্বিনেশনের ওষুধ তৈরির প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। না হলে ম্যালেরিয়া কিন্তু অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

malaria suman ghosh medinipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE