ফয়সাল আরেফিন দীপন
ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায় খুন হয়েছেন আগেই। শনিবার তাঁর বইয়ের দুই প্রকাশকের দফতরে ঢুকে মালিকদের কোপাল দুষ্কৃতীরা। নিহত হয়েছেন এক প্রকাশক। গুরুতর জখম হয়েছেন আর এক প্রকাশক-সহ তিন জন। আর এই দুই হামলারও দায় স্বীকার করেছে ‘আনসার আল ইসলাম’ নামে একটি জঙ্গি গোষ্ঠী।
নিহত ফয়সাল আরেফিন দীপন ‘জাগৃতি’ প্রকাশনা সংস্থার মালিক। দীপন ব্লগার অভিজিতের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামের বইটি প্রকাশ করেছিলেন। জখম প্রকাশক আহমেদ রশিদ টুটুল প্রকাশনা সংস্থা ‘শুদ্ধস্বর’-এর মালিক। এ ছাড়াও জখম হয়েছেন তারেক রহিম এবং রণদীপম বসু নামে দুই ব্লগার। শুদ্ধস্বর থেকেই প্রকাশ হয়েছে অভিজিতের বই ‘অবিশ্বাসের দর্শন’।
সম্প্রতি একের পর এক ব্লগার এবং লেখক খুনের ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরেই অভিজিৎ রায় ছাড়াও খুন হয়েছেন ওয়াশিকুর রহমান, অনন্তবিজয় দাস এবং নিলাদ্রিনিলয় চট্টোপাধ্যায়। সেই তালিকায় এ বার যুক্ত হল দীপনের নাম। এর আগে প্রতিটি ব্লগার খুনের দায় স্বীকার করে ইন্টারনেটে বিবৃতি দিয়েছিল আনসারুল্লা বাংলা টিম নামে একটি স্বঘোষিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন। এ দিন রাতে আনসার আল ইসলাম নামে একটি সংগঠন টুইটারে নিজেদের আল কায়দার স্থানীয় শাখা দাবি করে অভিজিতের দুই প্রকাশকের দফতরে হামলার দায় স্বীকার করেছে।
শনিবার দুপুর আড়াইটেয় প্রথম হামলাটি হয় ঢাকার লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের দফতরে। সি ব্লকের তিন তলায় শুদ্ধস্বরের দফতরে তখন প্রকাশক আহমেদ রশিদ টুটুল-সহ বেশ কয়েক জন ছিলেন। রণদীপম এবং তারেক আসন্ন বইমেলায় প্রকাশের জন্য তাঁদের বইয়ের পাণ্ডুলিপি নিয়ে শুদ্ধস্বরের দফতরে গিয়েছিলেন। সেই সময় দফতরে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। টুটুল, রণদীপম এবং তারেক রহিমকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে এবং গুলি করে খুনের চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। এর পর কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে তারা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে তালা ভেঙে আহত তিন জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, টুটুলের শরীরে গুলি লেগেছে। বাকি দু’জনকে কোপানো হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তাঁর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার পর থেকেই ফেসবুকে হত্যার হুমকি পাচ্ছিলেন টুটুল। মহম্মদপুর থানায় অভিযোগও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ দিনের হামলার মূল লক্ষ্য কে ছিলেন, তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। এক প্রত্যক্ষদর্শী অবশ্য জানিয়েছেন, হামলাকারীরা টুটুলকেই খুঁজছিল।
এই হামলার চার ঘণ্টা পরে হামলা হয় দীপনের উপর। ঢাকার আজিজ সুপার মার্কেটের তিন তলায় দীপনের প্রকাশনা সংস্থা ‘জাগৃতি’-র অফিস। সেখানে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে দীপনকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। ‘জাগৃতি’ প্রকাশনার এক কর্মী অফিসে গিয়ে দীপনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর ঘাড়ে কোপানোর আঘাত ছিল। সেই কর্মীই পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ জানিয়েছে, খবর পেয়ে দীপনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থলের ১০০ গজের মধ্যে শাহবাগ থানা। তবু দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা যায়নি। দীপন বিশিষ্ট কলামনিস্ট ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হকের ছেলে। তাঁর স্ত্রী চিকিৎসক। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে।
এই দুই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। এ দিন জখম টুটুল, রণদীপম এবং তারেককে দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। অভিযোগ, ‘‘সরকারের ব্যর্থতার কারণেই এমন হামলা হচ্ছে।’’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক প্রতিনিধি রাতে আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি বিক্ষোভের মুখে পড়েন। বিরোধী বিএনপি-ও এ দিন বিবৃতি পাঠিয়ে প্রকাশকদের ওপর এই হামলাকে কাপুরুষোচিত বলে মন্তব্য করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy