শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোড়া। বৃহস্পতিবার জমরাতে। ছবি: রয়টার্স।
মৃত্যুর মুহূর্তেও আব্দুল মজিদের হাতটা সর্বশক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেছিলেন বিবি জান। ভিড়ের সমুদ্রে ঘামে ভেজা পিছল হাতটা ছেড়ে যায়। আলাদা হয়ে যান স্বামী-স্ত্রী। চিরতরে।
হজযাত্রার জন্য কয়েক মাস ধরে টাকা এককাট্টা করছিল হায়দরাবাদের এল বি নগরের এই পরিবারটি। ছোট পোলট্রির ব্যবসা, স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও তিন ছেলে। যাঁরা আজ সকালে খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, আর ভিড় ভেঙে পড়েছে বাড়ির উঠোনে। মক্কায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত চার জন (এখনও পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া) ভারতীয়ের মধ্যে এক জন এই বৃদ্ধা বিবি জান। যাঁর জামাই কাঁদতে কাঁদতে ফোনে জানালেন, ‘‘সব মুসলিমের মতো আম্মারও বহু দিনের ইচ্ছে ছিল হজে যাওয়ার।
ওঁর তিন ছেলে আব্দুল রিয়াজ, আব্দুল সিরাজ আর মেহবুব সুভান অনেক দিন ধরে পয়সা জোগাড় করেছিল। মায়ের জন্য এটুকু করতে পারছে বলে খুশির শেষ ছিল না ওদের।’’ ২ সেপ্টেম্বর রওনা দেন স্বামী-স্ত্রী। ফেরার কথা ছিল ১৪ অক্টোবর। যাওয়ার সময় সেই আনন্দঘন ছবিটাই আজ চোখের সামনে ভাসছে সন্তানদের।
বাঁচানোর শেষ চেষ্টা। ছবি: সৌদির অসামরিক প্রতিরক্ষা ডিরেক্টরেটের টুইটার পেজ থেকে।
সকালেই বাড়িতে ফোন এসেছিল আব্দুল মজিদের। স্থানীয় হজ কমিটি কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। ‘কথা’ না বলে, যাকে হাহাকারই বলা ভাল! কোনও ক্রমে মজিদ বলতে পেরেছেন, ‘‘আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম ওর হাত চেপে রাখতে। কিন্তু ঘামে ভিজে হাত পিছল হয়ে গিয়েছিল। দলে দলে মানুষ এসে আছড়ে পড়তে থাকে। হাত ছেড়ে যায়। চিৎকার করে সাহায্য চাইতে থাকি। কিন্তু কিছুই করতে পারলাম না। চোখের সামনে ও চলে গেল।’’
পরিবার সূত্রে খবর জেড্ডায় ভারতীয় কনস্যুলেট বা রাজ্যের হজ কমিটি— কেউই তাদের মৃত্যুসংবাদ জানায়নি। বেলা বারোটা নাগাদ মজিদ ফোন করে খবর দেন ছেলেদের। মজিদের ভাই সইক আব্দুল রফিক আর তার স্ত্রী জাহারুন্নিসা বেগমও গিয়েছিলেন হজে। তাঁরা অক্ষত রয়েছেন। আপাতত মজিদের ছেলেরা চেষ্টা করছেন বাবার কাছে পৌঁছতে। কিন্তু সেটা কতদূর সম্ভব হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। এটুকু জানা গিয়েছে যে, বিবি জানের দেহ হায়দরাবাদে আর ফিরবে না। মক্কাতেই সম্ভবত তাঁকে কবর দেওয়া হবে। ‘‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে অন্তত এক ভাই মীনায় পৌঁছতে পারে। এখনও পর্যন্ত হজ কমিটি বা সরকার আমাদের কোনও আশ্বাস দেয়নি’’, জানাচ্ছেন আলি।
এই সংক্রান্ত আরও:
পড়ুন: এ রাজ্যের হজযাত্রীরা সুস্থই আছেন, আশা কমিটির
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy