Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সন্ত্রাসের বর্ষপূর্তিতেও ব্যঙ্গ শার্লি এবদোর

গত বছরের ৭ জানুয়ারি এখনও ভোলেনি প্যারিস। সাপ্তাহিক ব্যঙ্গ-পত্রিকা ‘শার্লি এবদো’র অফিসে জঙ্গি হানায় মারা গিয়েছিলেন ১২ জন। বছর ঘোরার ঠিক এক দিন আগে, ৬ জানুয়ারি প্রকাশ পেল তাদের সাম্প্রতিকতম সংখ্যা। প্রচ্ছদ থেকে স্পষ্ট, বিতর্কিত ব্যঙ্গচিত্র ছাপার রাস্তা থেকে সরেনি ‘শার্লি’।

শার্লি এবদোর বিশেষ সংখ্যার প্রচ্ছদ। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ধর্মগুরুর পোশাকে ভয়ার্ত এক ব্যক্তি, যাঁর পিঠে বাঁধা কালাশনিকভ। পাশে লেখা— ‘লাসাস্যাঁ কুর তুজুর’। অর্থাৎ, ঘাতকরা সব সময়ই পালাচ্ছে।

শার্লি এবদোর বিশেষ সংখ্যার প্রচ্ছদ। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ধর্মগুরুর পোশাকে ভয়ার্ত এক ব্যক্তি, যাঁর পিঠে বাঁধা কালাশনিকভ। পাশে লেখা— ‘লাসাস্যাঁ কুর তুজুর’। অর্থাৎ, ঘাতকরা সব সময়ই পালাচ্ছে।

সোমঋতা ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:৩৫
Share: Save:

গত বছরের ৭ জানুয়ারি এখনও ভোলেনি প্যারিস। সাপ্তাহিক ব্যঙ্গ-পত্রিকা ‘শার্লি এবদো’র অফিসে জঙ্গি হানায় মারা গিয়েছিলেন ১২ জন। বছর ঘোরার ঠিক এক দিন আগে, ৬ জানুয়ারি প্রকাশ পেল তাদের সাম্প্রতিকতম সংখ্যা। প্রচ্ছদ থেকে স্পষ্ট, বিতর্কিত ব্যঙ্গচিত্র ছাপার রাস্তা থেকে সরেনি ‘শার্লি’। প্রচ্ছদে কালাশনিকভ পিঠে এক দাড়িওলা ব্যক্তি (যাঁকে ঈশ্বর ভেবে নিচ্ছে ভ্যাটিকান-সহ পশ্চিমি দুনিয়া)। তাঁর হাতে-পায়ে রক্তের দাগ।

গত বছর জঙ্গির গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন শার্লি এবদোর কর্ণধার শার্বনেয়ার। সেই দায়িত্বে এখন ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী রিজ। গুলিতে আহত হয়েছিলেন তিনিও। রিজের কথায়, ‘‘২০০৬-এ প্রথম বিশেষ এক সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুর বিতর্কিত ছবি ছাপা হয়েছিল আমাদের কাগজে। কেউই তাতে গুরুত্ব দেয়নি। ফ্রান্স এত ধর্মনিরপেক্ষ একটা দেশ! সবাই এখানে নির্ভয়ে হাসে, আঁকে, লেখে, ঘুরে বেড়ায়। তাই ব্যঙ্গচিত্র আঁকাও চলেছে।’’ ৬ জানুয়ারির সংখ্যা প্রসঙ্গে জানালেন, জঙ্গি হানায় নিহত ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী কাবু, উয়োলিনস্কি, শার্ব এবং তিনু-র পুরনো কিছু কাজ থাকবে পাঠকদের জন্য। থাকছে অভিনেত্রী ইসাবেল আদজানি, জুলিয়েত বিনোশ, লেখক তসলিমা নাসরিনের লেখাও।

এর মধ্যে আরও এক ভয়াবহ জঙ্গিহানায় কেঁপেছে প্যারিস। কী ভাবছেন প্যারিসের বাসিন্দারা?

জার্মানি থেকে বিদেশি ভাষার শিক্ষক হিসেবে ফ্রান্সে এসেছেন বছর বাইশের তরুণী শার্লট ব্রেট। বললেন, ‘‘এখনও বাইরে থেকে আসা লোকদের উপরে নজরদারি লাগাম ছাড়ায়নি। প্যারিসের কসমোপলিটান চরিত্রটা বজায় আছে। ভবিষ্যতে কী হবে বলা যায় না।’’ প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন কারেন ডিয়াজ, মারিও তোরিনেলি— উরুগুয়ে থেকে আসা দুই তরুণ-তরুণী। গত বছর সে সময়ে তাঁরা প্যারিসেই ছিলেন। শার্লি এবদো-র অফিসের কাছেই ‘সন্ত্র পম্পিদ্যু’-তে দাঁড়িয়ে এক স্ট্রিট মিউজিশিয়ানের গান শুনছিলেন। হঠাৎ ঘোড়সওয়ার পুলিশে ছেয়ে যায় চত্বর। খবর পান, জঙ্গি হানায় নিহত হয়েছেন কয়েক জন ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী।

রয়েছে অন্য মতও। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পারি সরবোন-এর এক ছাত্রীর কথা, ‘‘এক জনের ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা অন্য জনের ভাবাবেগে আঘাত করলে, তাকে কি সমর্থন করা উচিত? গোঁড়ামিটা কি দু’দিক থেকেই হচ্ছে না?’’ আজ ভ্যাটিকান থেকে প্রকাশিত দৈনিক সংবাদপত্রেও প্রচ্ছদের সমালোচনা করে বলা হয়, ‘‘সব ধর্মই সহিষ্ণুতা ও অহিংসার পক্ষে সওয়াল করে। কালাশনিকভ কাঁধে ঈশ্বরের এই ব্যঙ্গচিত্র অত্যন্ত আপত্তিজনক।’’

বিতর্ক রয়েছে। আছে সহমর্মিতাও। প্যারিসের বাসিন্দা ভ্যালেরি মোরোনভাল-হ্যালি জানালেন, শহিদ কার্টুনিস্টদের মরণোত্তর ‘লিজিয়ঁ দ্যনর’ দেওয়ার কথা চলছে। শার্লি এবদো দফতরের সামনে এবং রেপুবলিক চত্বরে আয়োজন হয়েছে স্মরণ-সপ্তাহ পালনের। বেশ কয়েকটি অঘটনে রক্তাক্ত হয়েছে প্রেমের শহর। তবু পাশে থাকার চরিত্র বদলায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE