ইয়াঙ্গনে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিস্রি।
গণতান্ত্রিক মায়ানমারের ধীরে ধীরে মুক্ত হতে থাকা আর্থিক পরিমণ্ডলে ভারতের বিনিয়োগ বা অনুদানের পিছনে কোনও ব্যবসায়িক স্বার্থ নেই বলে দাবি করলেন ইয়াঙ্গনে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিস্রি। ‘ভারত-মায়ানমার সম্পর্কের আগামী দিন’- শীর্ষক এক সম্মেলনে শনিবার এই মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, শুধুমাত্র এ দেশের সরকারের পাশে দাঁড়াতেই নয়াদিল্লি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ঢালছে। রাস্তা, সেতু-সহ নানা পরিকাঠামো প্রকল্প নির্মাণ করে সরাসরি মায়ানমারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এর পরেই ভারতের রাষ্ট্রদূতের হুঁশিয়ারি, ‘‘যারা শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থে মায়ানমারে লগ্নি করছে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়েই ভাবা উচিত।’’
সম্মেলনে উপস্থিত সকলেই বোঝেন, রাষ্ট্রদূতের এই সতর্কবার্তার লক্ষ্য ছিল চিনের আগ্রাসী বিনিয়োগ। এ দেশে ব্যাঙ্কিং, কৃষি পণ্যের ব্যবসা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা-সহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই চিনাদের প্রতিপত্তি। ভারত যেখানে মায়ানমারে ১২ হাজার কোটির বিনিয়োগ করেছে, সেখানে শুধুমাত্র বেসরকারি ক্ষেত্রে চিনের লগ্নি প্রায় ১ লক্ষ হাজার কোটি। সঙ্গে সরকারি ক্ষেত্রেও তাদের কিছু বিনিয়োগ রয়েছে।
বাণিজ্য সম্ভাবনা নিয়ে এ দিনের আলোচনায় ভারতীয় আইনি উপদেষ্টা নিশান্ত চৌধরি বলেন, ‘‘আমরা অনেক পিছিয়ে। সরকারি স্তরেই যেটুকু কাজ হচ্ছে, বেসরকারি লগ্নিকারীরা মোটেই আসছেন না। ফলে মায়ানমারের বাজার চিনের দখলে।’’ ভারতের বেসরকারি সংস্থার এ দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্র যে মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়, তা স্পষ্ট। ইউবিআই, এসবিআই এবং এক্সিম— এ দেশে মাত্র তিনটি ভারতীয় ব্যাঙ্কের অফিস রয়েছে। বিমা ক্ষেত্রেও একমাত্র নিউ ইন্ডিয়া ইনসিওরেন্স। ভারতের ব্যবসায়ীরা মূলত কাঠ, প্লাইউড এবং ডাল শস্যের কারবার করে থাকেন। কিন্তু সরকার জঙ্গল কাটায় নিষেধাজ্ঞা জারি করায় কাঠের ব্যবসা অনিশ্চিত। তবুও কলকাতার কয়েকটি প্লাইউড সংস্থা এখানে ছোট কারখানা করেছে। ভারত ডালের আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আনায় এখন সেই ব্যবসাও তলানিতে। তবে এখনও একচেটিয়া কারবার ভারতের ওষুধ সংস্থাগুলির। বাড়ছে ইলিশ রফতানি। ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের ব্যাখ্যা— ‘‘ভারতের সংস্থা এ দেশে উৎসাহ নিয়েই আসছে। কিন্তু মায়ানমারে এখনও সেই পরিবেশ তৈরি হয়নি।’’ যদিও চিন, জাপান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে এই যুক্তি কেন খাটে না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। চিন ও জাপান যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিপুল টাকা ঢেলেছে, সে কথাও ওঠে আলোচনায়।
এ দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত গৌতম মুখোপাধ্যায় প্রস্তাব দেন, বড় মাপের এসইজেড এর বদলে ছোট ছোট অর্থনৈতিক এলাকা করা হোক। রাখাইন প্রদেশের পুর্নবাসন প্রকল্পের প্রধান এবং পিস কমিশনের সদস্য অর্থনীতিবিদ আউং তুন থেট এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। দেশের পরবর্তী অর্থমন্ত্রী হিসাবে থুটের নাম আলোচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদের নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেই সূত্রেই ভারতের মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী মোরে-সাগাইন অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দিয়েছেন। তা নিয়ে এগোনো যেতে পারে।’’
ভারতের বিচারে মায়ানমারের গণতন্ত্র আরও বলিষ্ঠ হলে বিনিয়োগও বাড়বে। চিনের অবশ্য সে সব বাছবিচার আছে বলে ইয়াঙ্গনের অলিগলি দেখে মনে হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy