Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
International News

ট্রাম্পকে বার্তা দিয়ে চিনা রণতরী তাইওয়ানের কাছে, ফের উত্তপ্ত চিন সাগর

পৃথিবীতে দু’টি চিন থাকতে পারে না, একটাই চিন থাকবে। বেজিং-এর দীর্ঘ দিনের ঘোষিত নীতি এটি। কিন্তু তাইপেই বেজিং-এর কর্তৃত্ব স্বীকার করতে বা মাথা নত করতে কখনওই প্রস্তুত নয়। পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমর্থন তাইপেই-এর আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

চিনের এক মাত্র এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার লিয়াওনিং। সোমবার তাইওয়ানের উপকূল ঘেঁষে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে গিয়েছে এটি। ছবি: এএফপি।

চিনের এক মাত্র এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার লিয়াওনিং। সোমবার তাইওয়ানের উপকূল ঘেঁষে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে গিয়েছে এটি। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৮:৪০
Share: Save:

পৃথিবীতে দু’টি চিন থাকতে পারে না, একটাই চিন থাকবে।

বেজিং-এর দীর্ঘ দিনের ঘোষিত নীতি এটি। কিন্তু তাইপেই বেজিং-এর কর্তৃত্ব স্বীকার করতে বা মাথা নত করতে কখনওই প্রস্তুত নয়। পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমর্থন তাইপেই-এর আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের এক মাস আগেই দক্ষিণ চিন সাগরে হাওয়া গরম করা শুরু করে দিল চিন।

কয়েক মাস আগে পর্যন্তও চিনা নৌসেনার হাতে কোনও এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার ছিল না। ১৯৯৮ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে যে যুদ্ধজাহাজটিকে কিনে আনা হয়েছিল, সেটিকেই এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছিল। সোভিয়েত আমলে তৈরি হয়েছিল ওই প্রশিক্ষক রণতরীটি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর যুদ্ধজাহাজটি ইউক্রেনের ভাগে পড়ে। ১৯৯৮ সালে সেটি ইউক্রেনের কাছ থেকে চিন কিনে নেয়। তার পর উত্তর-পূর্ব চিনের দালিয়ান বন্দরে সেটিকে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিুয়ার হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।

লিয়াওনিং নামের এই যুদ্ধজাহজটির পরীক্ষামূলক সফর শেষ হওয়ার পর সম্প্রতি সেটিকে চিনা নৌসেনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তার পরই উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে দক্ষিণ চিন সাগরে। চিনা এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার লিয়াওনিং নতুন তৈরি চিনা যুদ্ধবিমান এফসি-৩১ সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ চিন সাগরে ভাসতে শুরু করেছে। লিয়াওনিং-এর ভাসমান টারম্যাক থেকে পরীক্ষামূলক উড়ানে অংশ নিয়েছে এফসি-৩১। দক্ষিণ চিন সাগরে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে চিনা নৌসেনা এও দাবি করেছে, লিয়াওনিং যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

এফসি-৩১ যুদ্ধবিমান নিয়ে দক্ষিণ চিন সাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে গিয়েছে লিয়াওনিং। ছবি: এএফপি।

একাধিক এসকর্ট শিপ পরিবৃত হয়ে চিনা যুদ্ধজাহাজ লিয়াওনিং সোমবার তাইওয়ানের উকূলের পাশ দিয়ে ভেসে গিয়েছে। আর উপকূল থেকে লিয়াওনিং-এর গতিবিধির উপর সতর্ক নজর রেখেছে তাইওয়ানের নৌসেনা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কঠোর বার্তা দিতেই তাইওয়ান উপকূলের কাছে নিজেদের সদ্যনির্মিত এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারটিকে পাঠিয়েছে চিন।

কমিউনিস্ট সরকার গঠিত হওয়ার আগে পর্যন্ত তাইওয়ান দ্বীপ চিনেরই অংশ ছিল। কিন্তু ১৯৪৯ সালে তাইওয়ান চিনের থেকে আলাদা হয়ে যায়। বেজিং থেকে চিনের মূল ভূখণ্ডকে শাসন করতে শুরু করে কমিউনিস্ট সরকার। আর তাইপেইকে রাজধানী করে তাইওয়ান শাসন করতে শুরু করে গণতান্ত্রিক সরকার। বেজিং অবশ্য কোনও দিনই তাইপেই-কেন্দ্রিক সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। চির কালই তারা দাবি করে এসেছে, তাইওয়ান এক ও অভিন্ন চিনের অংশ। পৃথিবীতে চিন নামে একটিই দেশ— গণপ্রজাতন্ত্রী চিন। প্রজাতন্ত্রী চিন (তাইওয়ান) নামে কোনও রাষ্ট্র নেই। যে কোনও দিন গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের বাহিনী তাইওয়ান দ্বীপে নিজেদের ‘অধিকার পুনরুদ্ধার’ করবে বলেও বেজিং বার বার জানিয়ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। ১৯৭৯ সাল থেকে স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ানের সঙ্গে আমেরিকার কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। প্রায় চার দশক ধরে চলতে থাকা সেই পরম্পরা ট্রাম্প ভেঙে দিয়েছেন। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানানোর জন্য ফোন করেছিলেন। ট্রাম্প সে ফোন ধরেন এবং তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেন। চিন যেহেতু তাইওয়ানের সরকারকে স্বীকৃতি দেয় না, সে হেতু তাইওয়ানের সঙ্গে অন্য কোনও দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ঘোর বিরোধী চিন। ডোনাল্ড ট্রাম্প চিনা অসন্তোষের তোয়াক্কা না করে যে ভাবে প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে কথা বলেছেন, তা চিন মোটেই ভাল চোখে দেখছে না। ওয়াশিংটনকে হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেছে বেজিং। এই হুঁশিয়ারি যে ফাঁকা আওয়াজ নয়, তা বোঝানোর জন্যই সোমবার তাইওয়ান উপকূলের কাছে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার পাঠানো হয়েছে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফেং শি-কুয়ান এর পর দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

দক্ষিণ চিন সাগরের বুকেই এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার থেকে উড়ানের মহড়া দিয়েছে চিনা যুদ্ধবিমান। ছবি: এএফপি।

শুধু তাইওয়ানের উপর অধিকারের ইস্যু নিয়ে নয়, দক্ষিণ চিন সাগরের বিভিন্ন দ্বীপ এবং জলসীমার দখল নিয়ে চিনের নানা দাবি পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের কাছেই আপত্তিকর। বেশ কিছু দ্বীপের অধিকার নিয়ে ভিয়েতনাম, ব্রুনেই, ফিলিপন্সের মতো দেশগুলির সঙ্গে চিনের বিরোধ সুবিদিত। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ও চিনের বিরুদ্ধে গিয়েছে। চিন যে ভাবে দক্ষিণ চিন সাগরের জলসীমার ৯০ শতাংশকে নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে, আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো বৃহৎ সামরিক শক্তিগুলিও তাকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন: হিরোশিমার পরে এ বার পার্ল হারবার

ডোনাল্ড ট্রাম্প আর মাস খানেকের মধ্যেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। নির্বাচনী ময়দানে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে তাঁর যে অবস্থান তুলে ধরেছিলেন, তিনি যদি সেই অনুযায়ীই কাজ করেন, তা হলে দক্ষিণ চিন সাগরের উত্তাপ নিঃসন্দেহে আরও বাড়তে চলেছে। বেজিংও সে কথা স্পষ্টই বুঝতে পারছে। সেই কারণেই ট্রাম্পের শপথের আগে থেকেই ওয়াশিংটনকে তারা পাল্টা চাপে রাখতে চাইছে বলে কূটনীতিবিদদের একাংশের মত। কিন্তু দক্ষিণ চিন সাগরের দখল নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতে জড়ানো চিনের পক্ষে মোটেই লাভজনক হবে না বলে সমর বিশারদরা মনে করছেন। বেজিং-ভিত্তিক পরামর্শদাতা সংস্থা ‘চায়না পসিলি’র রিসার্চ ডায়রেক্টর ডেভিড কেলির কথায়, সর্বক্ষণ কার্যক্ষম থাকা ন্যূনতম ১০টি এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার এবং গোটা বিশ্ব জুড়ে নৌঘাঁটি তৈরি করে রেখেছে যে আমেরিকা, একটা মাত্র এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার তৈরি করেই সেই আমেরিকার নৌসেনাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে যাওয়া চিনের পক্ষে বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE