দু’দেশই বলছে ‘বন্ধুত্বের মহাসড়ক’। কিন্তু পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা তা বলছে না। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিম চিনের শিনজিয়াং প্রদেশের কাশগড় থেকে শুরু হওয়া রাস্তা কারাকোরাম পেরিয়ে ঢুকেছে পাকিস্তানে। ১৩০০ কিলোমিটার ছুটে গিয়ে রাস্তা শেষ হয়েছে বালুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের গ্বাদর বন্দরে। সুদীর্ঘ বাই-লেন মহাসড়কের পোশাকি নাম— চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি)। এই সুদীর্ঘ সড়ক পথ চিনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচির অন্যতম প্রধান অঙ্গ তো বটেই, চিন-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সিপিইসি এক মাইলফলক— দাবি বেজিঙের। ইসলামাবাদও একই কথা বলে। কিন্তু পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরা খুশি নন মোটেই। এই অর্থনৈতিক করিডর শুধু চিনের লাভের জন্যই, পাকিস্তানের কোনও উপকার হবে না, ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন অনেকে। চিন ও পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা বাণিজ্য ঘাটতিও একই কথা বলছে।
২০১৩ সালে চিন এবং পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর সংক্রান্ত চুক্তি হয়। ৪৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে চিন এই করিডর তৈরি করবে বলে স্থির হয়। পরে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়ে। চিনের কাশগড় থেকে কারাকোরাম হাইওয়ে হয়ে পাকিস্তানের গ্বাদর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ। পরিকাঠামোও তৈরি হয়েছে করিডর বরাবর। কিন্তু পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা এখন উপলব্ধি করছেন, এই অর্থনৈতিক করিডর থেকে যতটা লাভবান হওয়ার আশা তাঁরা করেছিলেন, তা তাঁরা হচ্ছেন না। বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছে চিনই।
গ্বাদর বন্দর কাজে লাগিয়ে চিন সুলভে নিজেদের পণ্য রফতানি করছে এশিয়ায়।—ফাইল চিত্র।
২০১৬ সালের শেষ ছ’মাসের হিসেব বলছে, পাকিস্তান থেকে চিনে পণ্য রফতানির পরিমাণ ৮ শতাংশ কমে গিয়েছে। আর চিন থেকে পাকিস্তানে পণ্য আমদানি ২৯ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। অর্থাৎ করিডর তৈরি হওয়ার পর চিন নিজেদের পণ্য হু হু করে ঢোকাচ্ছে পাকিস্তানে। কিন্তু পাকিস্তানি পণ্য সে ভাবে চিনে ঢুকতে পারছে না।
আরও পড়ুন: সেনা সরানোর প্রশ্নই নেই, ডোকলামে রাস্তা-বাঙ্কার তৈরি করা শুরু করল দিল্লি
পাকিস্তানের সরকার সিপিইসি নিয়ে অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। এই করিডর পাকিস্তানের অর্থনীতির ছবিটাই বদলে দেবে বলে ইসলামাবাদ বার বারই দাবি করে। কিন্তু দেশের বণিক মহলে বাড়তে থাকা অসন্তোষকেও অস্বীকার করতে পারছে না সরকার। তাই মে মাসে চিনকে হুমকি দেওয়ার পথ নিতে হয়েছিল। চিন থেকে আসা সস্তার ইস্পাত পাকিস্তানের বাজার এমন বাবে দখল করে নিয়েছিল যে পাকিস্তানে উৎপাদিত ইস্পাত বিক্রিই হচ্ছিল না। সে সময় পাক সরকার হুমকির সুরেই জানিয়েছিল যে চিন থেকে আসা ইস্পাতের উপর চড়া হারে কর বসানো হবে। কিন্তু ইসলামাবাদ যতই হুমকি দিক, চিনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার সামর্থ তাদের নেই। ফলে ছবিটা বদলাচ্ছে না। সিপিইসিকে ব্যবহার করে চিন নিজেদের দেশের অতিরিক্ত উৎপাদন গ্বাদর বন্দরে পৌঁছে দিচ্ছে এবং অনেক সুলভে মধ্য এশিয়া ও আফ্রিকার নানা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। পাকিস্তানের বাজারও সস্তা চিনা পণ্যে এমন ভরে যাচ্ছে যে পাকিস্তানি পণ্যের ব্যবসা ব্যাপক মার খাচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিতস্তা, চন্দ্রভাগার উপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তেই পারে ভারত: বিশ্ব ব্যাঙ্ক
পাক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে সিপিইসিকে ঘিরে। যে সব পাকিস্তানি পণ্য সিপিইসি হয়ে চিনের কাশগড়ে যাচ্ছে, সে সব পণ্যের উপর চিন নানা রকম বিধিনিষেধ চাপাচ্ছে বলে পাক ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। কম দামের ওষুধ, টয়লেটারিস, হস্তশিল্পজাত পণ্য-সহ কিছু অকিঞ্চিৎকর পণ্য পাকিস্তান থেকে চিনে যায়। সে সব পণ্যের উপরেও মাঝে-মধ্যেই চিনা শুল্ক কর্তারা বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেন বলে অভিযোগ। যখন-তখন শুল্কের হার বেড়ে যায় বলেও পাক ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি। পাকিস্তানের ক্ষুব্ধ বনিক মহল এখন বলছে, সিপিইসি ধরে চিন থেকে পাকিস্তানে কোনও পণ্য নিয়ে আসা যতটা সহজ, পাকিস্তান থেকে কোনও কিছু চিনে নিয়ে যাওয়া ততটাই কঠিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy