পাক সরকার এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্বের খবর ফাঁস করে দিয়েছেন তিনি— সাংবাদিক সিরিল আলমেইদার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় তাঁকে দেশ ছেড়ে বেরোতে নিষেধ করেছে এ দেশের সরকার। পাকিস্তানের প্রথম সারির সংবাদপত্রে কাজ করেন সিরিল। সরকারি এই সিদ্ধান্তে তিনি যথেষ্ট ব্যথিত বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন টুইটারে। সংবাদপত্রটিও তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে।
গত ৬ অক্টোবর সিরিলের লেখা পাক দৈনিকের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর (হক্কানি অথবা লস্কর ই তইবা) রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে চলেছে। আর আইএসআই-এর এই অবস্থান নিয়ে সরকার এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে তৈরি হয়েছে চরম টানাপড়েন। যার জেরে সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় একঘরে হতে হচ্ছে। পাক সংবাদিকের দাবি, এই খবর প্রকাশিত হওয়ার জন্যই তাঁর উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে সরকার। তাঁকে এখন রাখা হয়েছে ‘এক্সিট কন্ট্রোল লিস্ট’-এ। যে তালিকা অনুযায়ী, কোনও নাগরিক দেশের বাইরে পা ফেলতে পারেন না।
সিরিল টুইটে বলেছেন, ‘‘আমাকে জানানো হয়েছে আমি ওই তালিকায় রয়েছি। এতে আমি স্তম্ভিত, দুঃখিত। কোথাও চলে যাওয়ার কোনও ইচ্ছে আমার ছিল না। এটা আমার পাকিস্তান। খুব খারাপ লাগছে। এটা আমার জীবন, আমার দেশ। কোথা থেকে কী ভুল হল জানি না!’’ পাক সরকারের তরফে এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু সরকারি একটি সূত্রের মতে, যাঁরা এ ধরনের ‘মিথ্যে খবর’ প্রচার করছে তাদের বিরুদ্ধে গত কালই প্রশাসনকে ‘কড়া পদক্ষেপ’ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
পাক সাংবাদিক সিরিল আলমেইদার টুইট
সিরিলের লেখা নিয়ে বিতর্ক সত্ত্বেও তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে ওই পাক দৈনিক। তাদের বক্তব্য, সিরিল যা লিখেছেন, তার সত্যতা যাচাই করা হয়েছে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে, সব তথ্য খতিয়ে দেখে তবে খবর প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন নিয়ে অপপ্রচার করে সরকার প্রকৃতপক্ষে দৈনিকটিরই ভাবমূর্তি নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে বলে তাদের দাবি। কারণ প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল, ‘আন্তর্জাতিক ভাবে একঘরে হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নজিরবিহীন ভাবে সেনাবাহিনীকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী চাইছেন, সেনাবাহিনী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে মদত দেওয়া বন্ধ করুক। ২০০৮ সালের মুম্বই সন্ত্রাসের বিচার এবং হালের পাঠানকোট তদন্ত দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশও দিয়েছেন শরিফ।’
এই সব তথ্য ছাড়াও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পাকিস্তানে সক্রিয় বেশ কিছু জঙ্গি গোষ্ঠীকে ঘিরে সেনাবাহিনী এবং সরকারের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। হক্কানি বা লস্কর ই তইবার মতো জঙ্গি গোষ্ঠী আফগানিস্তান এবং ভারতের মাটিতে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে।’ প্রতিবেদনে এই ধরনের যে যে তথ্য উঠে এসেছে, তার কোনওটাই মেনে নিতে নারাজ সরকার। তবে সব কিছুর সমর্থনে সরব হয়েছেন দৈনিকটির সম্পাদক। সিরিল আলমেইদার টুইট ভাইরাল হওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
পাক সংবাদমাধ্যমের আরও অনেকেই সিরিলকে সমর্থন জানিয়ে শরিফ সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy