প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ।
গণতন্ত্রের ভিত কোনও দিনই মজবুত নয় পাকিস্তানে। অপদার্থ আর দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের জন্য তা তেমন ভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগই পায়নি। তাই স্বাধীনতার পর থেকে বরাবরই পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেনাবাহিনী মাথায় চড়ে বসেছে। পাকিস্তানের মানুষও সেনাবাহিনীকে বেশি ভরসা করতে শিখেছেন। পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর এতটা ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার কারণ প্রশাসনিক দুর্বলতা। পাকিস্তানে কোনও সরকারই সে অর্থে পুরোদস্তুর গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত হয়নি।
আর কেউ নয়, খুব সহজ ভাবে সত্যি কথাটা সরাসরি কবুল করে ফেললেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মুশারফ। মূলত সেনাবাহিনীর সমর্থনের জোরেই যিনি পাকিস্তানে প্রসাসনিক ক্ষমতার শীর্ষ স্তরে পৌঁছতে পেরেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ‘ওয়াশিংটন আইডিয়াজ ফোরাম’কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ওই স্বীকারোক্তিটা করে ফেলেছেন মুশারফ।
পাকিস্তানের গণতন্ত্র সম্পর্কে তাঁর যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা শেয়ার করতে গিয়ে মুশারফ বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানের গণতন্ত্রের মধ্যেই তার দুর্বলতাগুলি নিহিত হয়ে রয়েছে। পরিবেশের দাবি মেনে সেই দুর্বলতাগুলি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি পাক গণতন্ত্রের পক্ষে, তার চেষ্টাও হয়নি বিশেষ। ভুলগুলির সংশোধন, পরিমার্জন বা বিয়োজনের তেমন কোনও ব্যবস্থাই নেই পাক গণতন্ত্রে। সংবিধানেই তেমন ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। যেটা আরও উদ্বেগের, তা হল, ওই সীমাবদ্ধতা অনুধাবন করার পরেও সংবিধান সংশোধন করা হয়নি। বা তার কোনও চেষ্টাও করা হয়নি।’’
গণতন্ত্র তেমন ভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়নি বলে কী কী খেসারত দিতে হয়েছে পাকিস্তানকে?
সাক্ষাৎকারে মুশারফ তারও ফিরিস্তি দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘সেনাবাহিনীই যাবতীয় দণ্ড-মুণ্ডের হর্তাকর্তা হয়ে উঠেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তানে সেনাবাহিনীকে কারণে, অকারণে ব্যবহার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীকে প্রশাসনে নানা অজুহাতে নাক গলাতে বাধ্য করা হয়েছে। অদৃশ্য সুতোয় বেঁধে সেনাবাহিনীকে প্রশাসনের ওপর খবরদারি করানো হয়েছে। প্রশাসনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলির ওপর গোপনে তো বটেই, এমনকী, প্রকাশ্যেও সেনাবাহিনীকে দিয়ে খবরদারি করানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর কথায় রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনকে ওঠবোস করতে বাধ্য করানো হয়েছে। আর তা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, লাগাতার ভাবেই এটা করা হয়েছে। যখন দুর্নীতি ও অস্বচ্ছ্বতা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে প্রশাসনে, শাসনের নামে চলছে কার্যত দুঃশাসন, তখন আরও প্রকাশ্যে, আরও নগ্ন ভাবে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে। সেই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে পাকিস্তানের নাগরিকদেরও ধারণা হয়েছে, কোনও দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে অল্প দিনের জন্য হলেও হয়তো সুশাসনের মুখ দেখাতে পারে সেনাবাহিনীই। সে জন্যই বরাবর সেনাবাহিনী পাকিস্তানে আলাদা মর্যাদা পেয়ে এসেছে। বার বারই সেনা মদতে সরকার গঠিত হয়েছে পাকিস্তানে।’’
শুনতে একটু অবাক লাগলেও একেবারে একশো শতাংশ সত্যি কথাটাই কবুল করে ফেলেছেন প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল মুশারফ। বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানের মানুষ সেনাবাহিনীকেই বেশি ভালবাসেন। তাঁদের আপনজন মনে করেন। সেনাবাহিনীর কাছ থেকে পাকিস্তানের নাগরিকদের প্রত্যাশাও অনেক। তাই আমি প্রাক্তন সেনাকর্তা হিসেবে খুব গর্ব বোধ করি। জীবনের ৪০টা বছর সেনাবাহিনীকে দিয়েছিলাম বলে সেনাবাহিনীও আমাকে প্রশাসনিক ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছতে সাহায্য করেছিল। এর জন্য আমার কোনও সংকোচ নেই। বরং আমি গর্ব বোধ করি।’’
আরও একটা ‘সত্যি কথা’ ওই সাক্ষাৎকারে কবুল করে ফেলেছেন মুশারফ। বলেছেন, ‘‘কারণে, অকারণে বহু বার, বার বার আমেরিকা তার নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছে পাকিস্তানকে।’’
তবে দেশে ফেরার ইচ্ছে থাকলেও, তাঁর আর ক্ষমতায় ফেরার কোনও ইচ্ছে নেই বলেও ওই সাক্ষাৎকারে জানিয়ে দিয়েছেন মুশারফ।
আরও পড়ুন- আমেরিকার পর এ বার রাশিয়াকেও পাশে পেল ভারত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy