প্রশাসনিক নির্দেশিকায় সই করার পর। পেন্টাগনে। ছবি :এপি।
তামাম মানুষের ভয়টাকেই সত্যি করলেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হওয়ার মাসেই তাঁর সিদ্ধান্তে ফুটে উঠল ধর্মবিদ্বেষী মনোভাব। এ বার সন্ত্রাস রুখতে সন্ত্রাসবাদীদের আঘাত না করে, সাতটি মুসলিম দেশের জন্যই আমেরিকার দরজা বন্ধ করে দিলেন তিনি। আজ থেকে ১২০ দিনের জন্য এই সাত দেশের শরণার্থীরা আমেরিকায় আর ঢুকতে পারবেন না। এই নিয়ে শুক্রবার ট্রাম্প একটি প্রশাসনিক নির্দেশে সই করেছেন। তবে যাঁরা নির্দেশিকা ঘোষণার আগেই বিমানে আমেরিকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা এখনও স্পষ্ট করেননি তিনি।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত অবশ্য ভাল ভাবে নিচ্ছেন না অনেকেই। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছেন পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই এবং ফেসবুক কর্তা মার্ক জুকেরবার্গ। আমেরিকার ইমিগ্রেশন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর গ্রেগ চেন বলেন, ‘‘এ ভাবে নিজেদের সুরক্ষিত করা যায় না। এটা আসলে আমেরিকার দুর্বলতার প্রকাশ। পাশে দাঁড়ানোর সময় শরণার্থীদের কাছ থেকে আশ্রয় ছিনিয়ে নেওয়ায় গ্লোবাল লিডারের জায়গাটাও হারিয়ে ফেলল আমেরিকা।’’ আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী সংস্থা এই সিদ্ধান্তকে ‘নিষ্ঠুর এবং ক্ষতিকর’ বলে মন্তব্য করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের নতুন এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, আজ থেকে ১২০ দিন ইরাক, ইরান, সিরিয়া, ইয়েমেন, সুদান, লিবিয়া এবং সোমালিয়া— এই সাতটি দেশের শরণার্থীরা আমেরিকায় ঢুকতে পারবেন না। ১২০ দিন পর ভিসা-র জন্য কড়া নিয়ম আনা হবে। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে তবেই তাঁরা দেশে ঢুকতে পারবেন। তবে ভিসার নতুন কড়া নিয়ম বহাল থাকলেও পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং সৌদি আরবের নাগরিকদের উপরে ১২০ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা চাপাননি ট্রাম্প।
কেন এ রকম করলেন ট্রাম্প?
এমন সিদ্ধান্তের পিছনে তাঁর নাকি একটাই লক্ষ্য, সন্ত্রাস রুখে আমেরিকাবাসীকে সুরক্ষিত করা। ওই দিনই এক টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তিনি এ কথা জানান। বলেন, ‘‘একমাত্র তাঁদেরকেই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে যাঁরা আমাদের দেশকে সমর্থন করেন এবং আমেরিকার মানুষদের ভালবাসেন। আমেরিকা মানুষদের কোনওরকম বিপদে ফেলা যাবে না।’’
তবে এখানেও ধর্মবিদ্বেষ দেখিয়েছেন ট্রাম্প। কারণ, ওই সব দেশ থেকে আগত সমস্ত শরণার্থীর জন্য একই নিয়ম বহাল রাখছেন না। খ্রিস্টানদের প্রতি তুলনামূলক নরম মনোভাব রয়েছে তাঁর। তাই ভিসা পরীক্ষাতে খ্রিস্টানদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। কারণ, তাঁর মতে সংখ্যালঘু হওয়ায় ওই সব মুসলিম দেশে খ্রিস্টানরা বঞ্চিত এবং নির্যাতনের শিকার। তাই তাঁদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
এমনকী ১২০ দিন পর শুধুমাত্র ভিসা পরীক্ষাতে পাশ করলেও রেহাই নেই শরণার্থীদের। ‘দেশকে রক্ষার জন্য বিদেশি সন্ত্রাসবাদীদের আমেরিকায় ঢুকতে বাধা দেওয়া’র এই অর্ডারে নতুন কিছু নিয়মও আনা হয়েছে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রবেশের অনুমতি মিললেও কোনও এলাকায় শরণার্থীরা বসবাস করতে পারবেন কি না তা নির্ভর করবে সেই রাজ্যের গভর্নর বা এলাকার মেয়রের ইচ্ছার উপর। তাঁরা যদি মনে করেন, শরণার্থীদের থাকার অনুমতি দেওয়া বাসিন্দাদের পক্ষে বিপজ্জনক, তা হলে কোনওভাবেই তাঁরা সেখানে থাকতে পারবেন না।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি প্রভাব সিরিয়ার উপর পড়বে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক মহলের একাংশ। কারণ, ২০১১ সাল থেকে হিসাব করলে সে দেশের প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষই দেশছাড়া। শুধুমাত্র ২০১৬ সালের শেষ দিকে ওবামার জমানায় ১২ হাজার ৫০০ জন সিরিয়াবাসীকে ঠাঁই দিয়েছিল আমেরিকা।
আরও পড়ুন: চাঁদে পা-ই রাখেননি আর্মস্ট্রং, বলছে এ বার আমেরিকাই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy