প্রেমে পড়লে কী না হয়! দুঁদে গোয়েন্দাদের বোকা বানিয়ে আইএসের খাসতালুকে গিয়ে তাদের কট্টর জঙ্গিকে বিয়েও করে ফেলা যায়!
সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) এক জঙ্গির প্রেমে পড়ে তাঁকে বিয়েও করে ফেলেছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) এক কর্মী।
এফবিআইয়ের ইন্টারপ্রেটার ড্যানিয়েলা গ্রিন বিয়ে করতে গিয়েছিলেন আইএসের খাসতালুক সিরিয়ায়। পাত্র জার্মান নাগরিক ডেনিস কাসপার্ট আইএসের এক জন কট্টর জঙ্গি। সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেওয়ার পর যিনি নাম বদলে হয়েছেন আবু তালহা আল-আলমানি।
এফবিআই জানাচ্ছে, জার্মান নাগরিক কাসপার্ট খুব ভাল এক জন মিউজিশিয়ান। বহু জার্মান নাগরিককে তিনি নিয়ে আসেন আইএসে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে তিনি খুনের হুমকিও দিয়েছিলেন এক সময়। কাসপার্টের সঙ্গে এফবিআইয়ের ইন্টারপ্রেটার ড্যানিয়েলা গ্রিনের আলাপ হয় অনলাইনে। স্কাইপে কাসপার্টের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন ড্যানিয়েলা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁরা মগ্ন থাকতেন গল্পে-আড্ডায়। এই ভাবেই কাসপার্টের সঙ্গে দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন ড্যানিয়েলা। কিন্তু কাসপার্টের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তো যেতে হবে সিরিয়ায়।
তাই এফবিআই কর্তাদের মিথ্যা কথা বলেন ড্যানিয়েলা। এফবিআইকে তিনি জানান, এক আইএস জঙ্গির সঙ্গে তাঁর আলাপ-পরিচয় হয়েছে। সেই জঙ্গিকে তিনি তাঁর প্রেমের ফাঁদে ফেলেছেন। এ বার সিরিয়ায় গিয়ে ওই আইএস জঙ্গির সঙ্গে তাঁর দেখা করার খুব দরকার। তা হলে ওই জঙ্গিকে হাতেনাতে ধরে ফেলা যাবে। গ্রিনের ওই প্রস্তাব শুনে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান এফবিআই কর্তারা। আইএস জঙ্গিদের হাতেনাতে ধরতে তাঁরা বিশ্ব ঢুঁড়ে ফেলছেন। এফবিআইয়ের অনুমতি নিয়েই আইএস জঙ্গি কাসপার্টের সঙ্গে দেখা করতে সিরিয়ায় যান ড্যানিয়েলা।
আরও পড়ুন- চমক দিতে গিয়ে বেইজ্জত! দিল্লির জন্য জবাব খুঁজছেন দিলীপরা
এই ভাবে মিথ্যা কথা বলে এফবিআই কর্তাদের ঠকানোটা যে ঠিক কাজ হয়নি, পরে আমেরিকায় ফিরে গিয়ে নিজেই তা কবুল করেন ড্যানিয়েলা। তাঁর চাকরি যায়। দু’বছরের কারাদণ্ডও হয় ড্যানিয়েলার।
মার্কিন বিদেশমন্ত্রকের এক প্রাক্তন অফিসার জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘এই ঘটনাটা যে এফবিআইকে চরম অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’’ অস্বস্তিকর ছিল বলেই এত দিন ঘটনাটা ঢাকা-চাপা দিয়ে রেখেছিল এফবিআই। কাসপার্টকে বিয়ের পর সিরিয়া থেকে প্রথম বার আমেরিকায় ফিরে ড্যানিয়েলা যখন তাঁর ভুল স্বীকার করেছিলেন এফবিআই কর্তাদের কাছে, তখন তা যাতে কাকপক্ষীতেও জানতে না পারে, তার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে এফবিআই। তাদের আশঙ্কা ছিল, ওই ঘটনা জানাজানি হলে এফবিআইয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। নষ্ট হবে বিশ্বাসযোগ্যতা। কিন্তু আদালত থেকেই বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে।
ড্যানিয়েলাকে যাঁরা চেনেন অনেক দিন ধরে, এফবিআইয়ে তাঁর এক সময়ের সতীর্থরা, তাঁরা কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না, এই কাজটা ড্যানিয়েলা করতে পারলেন কী ভাবে! এফবিআইয়ের নীতিনিষ্ঠ কর্মী হিসেবেই সতীর্থদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন ড্যানিয়েলা। ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পরেই এফবিআইয়ের চাকরি পান তিনি। বিয়েও করেছিলেন ড্যানিয়েলা এক মার্কিন নাগরিককে। সিরিয়ায় কাসপার্টের সঙ্গে প্রথম বার দেখা করতে যাওয়ার সময় তাঁর মার্কিন স্বামীকেও মিথ্যা বলেছিলেন ড্যানিয়েলা। বলেছিলেন, তিনি মিউনিখে যাচ্ছেন, তাঁর অসুস্থ বাবা, মাকে দেখতে। কিন্তু মিউনিখে না গিয়ে ড্যানিয়েলা চলে গিয়েছিলেন তুরস্কের ইস্তানবুলে। সেখান থেকেই তিনি যোগাযোগ করেন কাসপার্টের সঙ্গে। তার পর কাসপার্টই ড্যানিয়েলাকে ইস্তানবুল থেকে সিরিয়ায় নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy