Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ট্রাম্পের ইরান-নীতি নিয়ে অসন্তুষ্ট জার্মানি

অর্থাৎ ২০১৫ সালে করা আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি মোতাবেক যে ইরান চলছে না, তাতে সিলমোহর দিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য, সন্ত্রাসবাদে মদত দিয়ে মধ্য এশিয়ায় শান্তি লঙ্ঘন করছে ইরান।

সংবাদ সংস্থা
তেহরান শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪০
Share: Save:

কয়েক মাস ধরেই হুমকিটা দিয়ে আসছিলেন তিনি। কাল অবশ্য শেষমেশ ইরানের সঙ্গে হওয়া পরমাণু চুক্তি বাতিল করে তাদের উপর নতুন করে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারির কথা ঘোষণা করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এই চুক্তি তিনি ‘ডিসার্টিফাই’ করেছেন। অর্থাৎ ২০১৫ সালে করা আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি মোতাবেক যে ইরান চলছে না, তাতে সিলমোহর দিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য, সন্ত্রাসবাদে মদত দিয়ে মধ্য এশিয়ায় শান্তি লঙ্ঘন করছে ইরান। সেই সঙ্গেই মার্কিন কংগ্রেসকে কাল ষাট দিনের সময় দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। এর মধ্যে কংগ্রেসকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তেহরানের উপর ফের কড়া আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আদৌ জারি করা হবে কি না।

আর মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষুব্ধ জার্মানি। তেহরান তো বটেই, বার্লিনের তরফেও ট্রাম্পের কালকের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। জার্মানির বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য, ওই চুক্তি বাতিল হলে ইরান ফের পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হবে, যা ইউরোপের শান্তি নষ্ট করার পক্ষে যথেষ্ট।

২০১৫-এ বারাক ওবামার আমলে করা এই পরমাণু চুক্তি আসলে দ্বিপাক্ষিক নয় আদৌ। আমেরকিার সঙ্গে এই চুক্তিতে সই করেছিল জার্মানি, রাশিয়া, চিন, ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো দেশও। ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই চুক্তির অংশ। ওই চুক্তি অনুযায়ী, দেশের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পরমাণুর ব্যবহার করতে পারলেও তা দিয়ে অস্ত্র বানাতে পারবে না ইরান। ওই চুক্তির সঙ্গেই উঠেছিল ইরানের উপর জারি করা আমেরিকার দীর্ঘদিনের আর্থিক নিষেধাজ্ঞা।

কিন্তু চলতি বছরের গোড়ায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ট্রাম্প অভিযোগ করে আসছিলেন, চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার মজবুত করছে তেহরান। ইরান সরকার তো বটেই, সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলও। তাদের বক্তব্য ছিল, চুক্তি লঙ্ঘন করে ইরান অস্ত্র বানাচ্ছে না। ট্রাম্প তবু নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। তার এই মনোভাব ভবিষ্যতে গোটা পৃথিবীর শান্তি নষ্ট করবে বলে আজ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জার্মানি।

এক রেডিও চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জার্মান বিদেশমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল বলেছেন, ‘‘ইরান-আমেরিকার মধ্যে যা হচ্ছে, সেটা তো শুধু দু’দেশের বিষয় নয়। গোটা বিশ্বের অনেকগুলি দেশই এর ফল ভুগবে। এই চুক্তি বাতিল করে দিলে ইরান যদি ফের পরমাণু অস্ত্র বানানোর রাস্তায় ফেরে তা হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তা ভয়ানক উদ্বেগের।’’

জার্মানির মতো একই ভাবে ট্রাম্পের কালকের বক্তৃতার সমালোচনা করেছে তেহরান। ইরানের শত্রুপক্ষ সৌদি আরবের সঙ্গে আমেরিকার মাখামাখি নিয়ে ট্রাম্পকে এক হাত নিয়েছেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ জাভাদ জারিফ। একটি বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘‘ট্রাম্পের বক্তব্য নিয়ে গোটা ইউরোপের প্রতিক্রিয়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমেরিকা কতটা বিচ্ছিন্ন। সৌদি আরব আর ইজরায়েল ছাড়া ওদের পাশে তো আর কেউ নেই।’’ ইরানের সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াটাও প্রায় একই। জার্মানির মতো তাঁরাও মনে করেছেন, এই চুক্তি বাতিল করে আমেরিকা উল্টে ইরানকে পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার বাড়াতেই সাহায্য করবে। ‘ইরানের মানুষের স্বার্থের’ জন্য যে বার্তা কাল ট্রাম্প দিয়েছেন, তা নিয়েও প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়েছে দেশে। টুইটারে একজন লিখেছেন, ‘‘ছ’মাস আগেই ইরানের নাগরিকদের আমেরিকা ঢোকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট। এই ধরনের সহমর্মিতার বার্তা হাস্যকর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE