রিয়াধের মঞ্চ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সন্ত্রাস দমনের ডাককে কিছুটা সতর্ক ভাবেই দেখতে চাইছে নয়াদিল্লি। সাউথ ব্লক সূত্রের বক্তব্য, ট্রাম্প যা বলেছেন তা প্রাথমিক ভাবে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করে ঠিকই। ভারতও আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারবার বলে আসছে যে, জঙ্গিবাদ মানবসভ্যতার বিনাশকামী শক্তি। সবাইকে একজোট হয়ে তার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। কিন্তু কোন পরিপ্রেক্ষিতে, কোথায় দাঁড়িয়ে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই উক্তি করলেন তা আতসকাচের তলায় ফেললে উদ্বাহু হয়ে হর্ষধ্বনি করার কোনও কারণ এখনই নেই বলেই মনে করছে দিল্লি।
বিদেশ মন্ত্রকের মতে, রিয়াধে ৪০টি মুসলিম দেশের সঙ্গে যে সামরিক এবং বাণিজ্যিক জোটের পথ প্রস্তুত করলেন ট্রাম্প, তা প্রকৃতপক্ষে একটি বৃহৎ শিয়া-বিরোধী মঞ্চ। এ ক্ষেত্রে তাঁর মূল লক্ষ্য, এক শক্তিশালী সামরিক জোট গড়ে তুলে ইরান তথা পশ্চিম এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান সুন্নি প্রভাবকে আক্রমণ করা। সঙ্গে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর যুদ্ধ ঘোষণা করা। এই জোটকে ঘরোয়া ভাবে ‘সুন্নি-ন্যাটো’ নামকরণে ব্যাখ্যা করছে দিল্লি।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রিয়াধ সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির। ভারতের আশঙ্কা, আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বার্থে এই ‘সুন্নি-ন্যাটো’ জোট যেন আফগানিস্তানের তালিবানি শক্তিকে ‘নরমপন্থী ইসলাম’-এর তকমা না দেয়। সে ক্ষেত্রে এই সুযোগ নিয়ে শিয়াপন্থী ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানও কিছুটা সুবিধা আদায় করে নিতে পারে ট্রাম্পের কাছ থেকে। ভারতের তরফে সীমান্ত সন্ত্রাসের অভিযোগটাই তখন ফিকে হয়ে যেতে পারে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘পশ্চিম এশিয়ার জন্য এক রকম, আর আমাদের উপমহাদেশের জন্য অন্য— সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে যেন দু’রকম মাপকাঠি তৈরি না হয়।’’
মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের কর্তা ড্যানিয়েল কোটস সীমান্ত সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে সম্প্রতি ইসলামাবাদকে দুষেছেন। তাতেও খুব একটা উল্লসিত হচ্ছে না দিল্লি। দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে নিজেদের স্বার্থেই পাকিস্তানকে কাজে লাগানোর যে নীতি নিয়ে চলে আমেরিকা, তার থেকে ট্রাম্প সরে আসবেন— এমনটা এখনই আশা করার কোনও কারণ দেখছে না ভারত। সাউথ ব্লকের কর্তারা বলছেন, মুখে বারবার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিলেও নতুন মার্কিন প্রেসিডন্ট এখনও এমন একটি পদক্ষেপও করেননি, যাতে বাস্তবিক সমস্যায় পড়েছে ইসলামাবাদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy