বিরোধীদের চাপে পড়েই কি ভারতের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বাধ্য হলেন নওয়াজ শরিফ? —ফাইল চিত্র।
জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকার তীব্র নিন্দা করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। হিজবুল মুজাহিদিনের কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানিকে ‘কাশ্মীরি নেতা’ আখ্যা দিয়ে নওয়াজের মন্তব্য, ওয়ানির মৃত্যুতে তিনি গভীর আঘাত পেয়েছেন। ভারত কাশ্মীরে আন্দোলন রুখতে ‘দমনমূলক নীতি’ প্রয়োগ করছে এবং ‘অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ’ করছে বলে পাক প্রধানমন্ত্রীর দফতর বিবৃতি দিয়েছে।
জঙ্গি বুরহান ওয়ানির মৃত্যুতে কাশ্মীর উপত্যকা উত্তাল। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জনতার সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম প্রায় ৩০০, যাঁদের মধ্যে অন্তত ৯০ জন নিরাপত্তা কর্মীও রয়েছেন। জম্মু-কাশ্মীরের এই পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামাবাদ আগেই মুখ খুলেছিল। পাক বিদেশ মন্ত্রক রবিবারই বিবৃতি দিয়ে কাশ্মীরে ভারতের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেছিল। কিন্তু পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নিজে কিছু বলেননি। সোমবার নওয়াজ নিজেই মুখ খুললেন। তাঁর দফতর সূত্রে সোমবার এক বিবৃতি জারি করে জানানো হল, ‘‘কাশ্মীরি নেতা বুরহান ওয়ানি এবং অন্য অনেক সাধারণ মানুষকে ভারতের সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনী যে ভাবে খুন করছে, তাতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।’’ নওয়াজ শরিফ বলেছেন, ‘‘সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যে ভাবে ভারতীয় বাহিনী অতিরিক্ত এবং অবৈধ ভাবে বলপ্রয়োগ করেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’’ পাক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘‘কাশ্মীরের সাহসী মানুষ যখন রাষ্ট্রপুঞ্জের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর, তখন এই দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করে ভারত তাঁদের রুখতে পারবে না।’’
সৈয়দ আলি শাহ গিলানি, মিরওয়াইজ ওমর ফারুক, ইয়াসিন মালিক সহ কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নবাদী নেতাদের আপাতত গৃহবন্দি রেখে প্রশাসন। পাক প্রধানমন্ত্রী এরও নিন্দা করেছেন। ভারত জম্মু-কাশ্মীরে মানবিধাকার লঙ্ঘন করছে বলে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে যুদ্ধের জন্য ভারতীয় উপগ্রহ ব্যবহার করবে মার্কিন বাহিনী
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, নিজের দেশে বিরোধী দলগুলির প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েই কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হলেন নওয়াজ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর যে প্রয়াস শুরু করেছেন, তার সুবাদে দুই প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত সম্পর্কও অন্য মাত্রায়। কূটনৈতিক মহল সূত্রের খবর, সে কথা মাথায় রেখেই কাশ্মীর নিয়ে নওয়াজ শুরুতেই নিজে মুখ খুলতে চাননি। কিন্তু তার জেরে নওয়াজের ঘোর সমালোচনা শুরু হয় পাকিস্তানে। প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাবল ভুট্টো জারদারি বলেন, ‘‘শরিফ-মোদীর বন্ধুত্ব কাশ্মীর ইস্যুর অপূরণীয় ক্ষতি করে দিচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে নওয়াজ শরিফ কাশ্মীর ইস্যুকে গুলিয়ে দিচ্ছেন।’’ বিলাবল রবিবারই বলেছিলেন, ‘‘গোটা পৃথিবীতে মুসলমানরা যখন ইদ-উল-ফিতর উদযাপন করছেন, তখন আমাদের কাশ্মীরি ভাইয়েরা ভারতীয় সেনার হিংসাত্মক কার্যকলাপের মধ্যে উৎসবের দিনটা কাটাতে বাধ্য হলেন।’’
বিলাবল ভুট্টোর এই আক্রমণ যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নওয়াজ শরিফকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ঠেলে দেবে, তা বলাই বাহুল্য। তাই কাশ্মীর নিয়ে আর চুপ করে থাকতে পারলেন না শরিফ। সোমবার কঠোর ভাষায় আক্রমণ করলেন ভারতকে। প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জোরজবরদস্তি নাক গলানোয় পাক প্রধানমন্ত্রীর তীব্র নিন্দা করে টুইট করেছেন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ। টুইটে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবেশী দেশের ব্যাপারে পাকিস্তানের বেশি মাথা না ঘামানো উচিত নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy