Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আমেরিকায় ঢোকা বারণ মনপ্রীতেরও

সঙ্গে কানাডীয় পাসপোর্ট। তবু সীমান্ত পেরিয়ে আমেরিকায় ঢুকতে দেওয়া হলো না মনপ্রীত কুনারকে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডার এই নাগরিকের আমেরিকায় প্রবেশ আটকে দিয়ে মার্কিন সীমান্ত অফিসার বলেন, ‘‘আপনার নিশ্চয় মনে হচ্ছে, আপনি ট্রাম্প-ড!’’

মন্ট্রিয়ল
সংবাদ সংস্থা  শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭ ০২:২০
Share: Save:

সঙ্গে কানাডীয় পাসপোর্ট। তবু সীমান্ত পেরিয়ে আমেরিকায় ঢুকতে দেওয়া হলো না মনপ্রীত কুনারকে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডার এই নাগরিকের আমেরিকায় প্রবেশ আটকে দিয়ে মার্কিন সীমান্ত অফিসার বলেন, ‘‘আপনার নিশ্চয় মনে হচ্ছে, আপনি ট্রাম্প-ড!’’

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিয়েই একগুচ্ছ বিতর্কিত অভিবাসন নীতি নিয়ে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে ‘ট্রাম্পড’ বলতে তাসখেলায় কিস্তিমাত নয়, প্রেসিডেন্টের অভিবাসন নীতির কথাই বলেছেন সীমান্ত অফিসার, ধারণা মনপ্রীতের। বিভিন্ন মার্কিন আদালত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সেই সব সিদ্ধান্তে আপত্তি জানালেও গত দু’মাসে মার্কিন সীমান্তে বহু হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে। এমনিতে কানাডীয় নাগরিকদের আমেরিকায় ঢুকতে কোনও ভিসা লাগার কথা নয়। কিন্তু ট্রাম্প জমানায় অ-শ্বেতাঙ্গ, অ-ক্রিস্টান বেশ কিছু কানাডীয় নাগরিকদের সীমান্তে আটকানো হয়েছে। কয়েক দিন আগেই বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও এক কানাডীয় মুসলিম মহিলাকে আমেরিকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ঠিক যে ভাবে গত রবিবার বাধা দেওয়া হয় মনপ্রীতকে। বুধবার খবরটি কানাডার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৬০-এর দশকে কানাডায় চলে এসেছিলেন মনপ্রীতের মা-বাবা। কানাডাতেই জন্ম তাঁর। বছর তিরিশেকের মনপ্রীত থাকেন মন্ট্রিয়লে। আমেরিকায় একটি মিউজিক ফেস্টিভ্যালে যাবেন ভেবে দুই বান্ধবীর সঙ্গে বেরিয়েছিলেন। সীমান্ত শহর মন্ট্রিয়ল থেকেই আমেরিকার ভেরমন্টে ঢোকার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। সেখানেই বিপত্তি। মনপ্রীতের পাসপোর্ট উল্টে-পাল্টে দেখে তাঁর ছবি তুলে নেন সীমান্ত অফিসার। আঙুলের ছাপও নেন। তার পর শুরু হয় প্রশ্নবাণ। ছ’ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় মনপ্রীতকে। শেষমেশ জানানো হয়, তাঁর আমেরিকায় ঢোকার বৈধ ভিসা নেই। তাই তাঁকে সীমান্ত পার করতে দেওয়া হবে না। মনপ্রীতের দুই শ্বেতাঙ্গ বান্ধবীকে অবশ্য এ ধরনের হেনস্থার মুখে পড়তে হয়নি। তবে বন্ধুর সঙ্গে তাঁরা কানাডাতেই থেকে যান।

কেন এই হেনস্থা?

মনপ্রীতকে মার্কিন অফিসার জানিয়েছেন, গত বছর ডিসেম্বরে তাঁর কানাডা সীমান্ত পেরিয়ে নিউ ইয়র্ক প্রদেশে ঢোকার সময়ে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছিল। তাই এ বার ভিসা ছাড়া আমেরিকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না তাঁকে। শুধু তা-ই নয়। ভবিষ্যতে তিনি যত বার আমেরিকায় আসতে চাইবেন, ভিসা নিয়েই আসতে হবে তাঁকে।

মনপ্রীত বারবার মার্কিন সীমান্ত অফিসারকে বলেন, গত ডিসেম্বরে কম্পিউটারের কিছু গণ্ডগোলের জন্য সীমান্তে কয়েক ঘণ্টা আটকে পড়েছিলেন তিনি। তবে সেই কথায় কান দেননি অফিসার। মুচকি
হেসে মনপ্রীতকে তিনি বলেন— ‘‘ইউ হ্যাভ বিন ট্রাম্পড!’’ এ বিষয়ে অটোয়ার মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে কথা বলতে বলা হয় মনপ্রীতকে। দূতাবাসের অফিসারও ঘটনাটিকে ‘অদ্ভূত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, কানাডীয় নাগরিকদের আমেরিকায় ঢুকতে ভিসা লাগার কথা নয়। সব শুনে মনপ্রীতের মন্তব্য, ‘‘আমায় সীমান্তে আটকে দেওয়ার সত্যিই হয়তো কোনও কারণ ছিল না। শুধু আমার গায়ের রং ছা়ড়া!’’

এ নিয়ে কানাডার পার্লামেন্টে যথেষ্ট হইচই-ও হয়। ডেমোক্র্যাট নেতা টম লালকেয়ার বলেন, ‘‘কানাডায় জন্ম, কানাডার এক নাগরিককে এ ভাবে মার্কিন সীমান্তে হেনস্থা করা হলো। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আশা করি বিষয়টি নিয়ে সরব হবেন।’’ মন্ট্রিয়লের এমপি মঞ্জু ঢিল্লোঁ আপাতত বিষয়টি নিয়ে সরকারি স্তরে আমেরিকার সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছেন।

কয়েক মাস বাদেই বিয়ে মনপ্রীতের। ইচ্ছে ছিল, ব্যাচেলরেট পার্টিটা মিয়ামিতে করবেন। সব পরিকল্পনায় আপাতত জল ঢেলে দিলেন ডোনাল্ড ‘অভিবাসী-বিরোধী’ ট্রাম্প!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manpreet kooner USA Canadian woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE