আন্তর্জাতিক চাপের মুখে জঙ্গি নেতা হাফিজ সইদ এবং তার সংগঠন লস্কর ই তইবা-কে অবশেষে ঝেড়ে ফেলতে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিল পাকিস্তান। যার প্রথম ধাপ হিসেবে একদিকে যেমন হাফিজ ও লস্করকে পাকিস্তানের ‘বোঝা’ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ‘বিপদ’ বলে ব্যাখ্যা করলেন পাক বিদেশমন্ত্রী, তেমনই পাক সরকার হাফিজের গৃহবন্দি থাকার মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশ জারি করল। গত জানুয়ারি থেকে হাফিজকে গৃহবন্দি করে রেখেছে পাক সরকার।
নিউ ইয়র্কের এশিয়া সোসাইটিতে বুধবার এক প্রশ্নোত্তর পর্বে পাক বিদেশমন্ত্রী খোয়াজা আসিফ সরাসরিই বলেন, ‘‘আমি মেনে নিচ্ছি, সইদ-লস্কর আমাদের বোঝা। আমি এটা অস্বীকার করছি না। কিন্তু ওদের ঝেড়ে ফেলার জন্য আমাদের কিছুটা সময় দিন। এই সব ঝামেলা মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত রসদের অভাব আছে আমাদের।’’ ওই আলোচনাতেই পাকিস্তানে জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্তের জন্য সরাসরি আমেরিকাকেই দায়ী করেছেন আসিফ। তাঁর বক্তব্য, গত শতাব্দীর ’৮০-র দশকে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে হঠানোর জন্য আমেরিকাই এই জঙ্গিদের তৈরি করেছে। তার পরেও এদের কাজে লাগিয়েই ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে গেছে ওয়াশিংটন। আর এদের জন্যই আজ পাকিস্তানকে বারেবারে রক্তাক্ত হতে হচ্ছে। সরাসরি আমেরিকাকে তোপ দেগে আসিফ বলেন, ‘‘সইদ নিয়ে আমাদের দোষ দেবেন না। এই লোকগুলোই কুড়ি বছর আগে আমাদের প্রিয় ছিল! এরাই হোয়াইট হাইসে দিনের পর দিন খানা-পিনা করে গেছে! এখন আপনারা বলছেন, চুলোয় যাও পাকিস্তান!’’
এখানেই থামেননি পাক বিদেশমন্ত্রী। খোলামেলা ভাবেই তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তানের বর্তমান বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে তিনি ‘রক্তাক্ত’। আসিফের বক্তব্য, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ওই ছায়াযুদ্ধে আমেরিকার পাশে দাঁড়িয়ে জেহাদকে সমর্থন করেছিল পাকিস্তান। আর সেটা করতে গিয়ে গোটা দেশের সংস্কৃতি বদলে গেছে। এটাকে রাতারাতি বদলে ফেলা কঠিন।
গত কালই হাফিজের গৃহবন্দি থাকার মেয়াদ আরও এক মাস বাড়িয়েছে পঞ্জাব প্রশাসন। তাদের বক্তব্য, হাফিজ বাইরে এলে আইনসৃঙ্খলার গুরুতর অবনতি হতে পারে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। হাফিজ বাইরে এলেই তার সংগঠন তাকে হিরো বানিয়ে গোটা দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালাবে। এজন্য যেমন নানা জায়গা থেকে গাড়ি জোগাড় করা হচ্ছএ, তেমনই অস্ত্রও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতেই বিপদ বলে আশঙ্কা প্রশাসনের।
হাফিজ সইদকে আগাগোড়া নিরাপত্তা দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনা কুড়িয়েছে ইসলামাবাদ। সেই হাফিজ নিয়ে পাক সরকারের অবস্থান বদলের ইঙ্গিতের পরে অনেকেই মনে করছেন, সম্প্রতি জঙ্গি প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ভাবে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, তাতে এ ছাড়া উপায় ছিল না ইসলামাবাদের। মুম্বই হামলা-সহ একাধিক সন্ত্রাসের মূল ষড়যন্ত্রী হাফিজকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ইসলামাবাদের উপরে চাপ দিচ্ছে দিল্লি। এ নিয়ে আমেরিকাও ভারতের পাশেই দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বন্ধু চিনকে পাশে নিয়ে ইসলামাবাদ বরাবরই হাফিজ-সহ একাধিক জঙ্গি নেতা সম্পর্কে নরম মনোভাব দেখিয়েছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি পাক জঙ্গিদের নিয়ে কিছুটা ভিন্ন সুর শোনাতে শুরু করেছে চিন। তা ছাড়া, হাফিজ পাকিস্তানে রাজনৈতিক দল খুতে আগ্রহী, এ খবর সামনে আসায় ঘরোয়া রাজনীতিতেও বড় সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে পাক প্রশাসনের। সব মিলিয়েই ঘরে-বাইরে চাপের মুখে ইসলামাবাদ। আর তাই ‘বোঝা’ হাফিজকে ঝেড়ে ফেলতে মরিয়া তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy